রূপকথার জয়ে ইতিহাসে রাডুকানু

ঠিক ১৭ দিন আগে শুরু হয়েছিল যে স্বপ্নময় পথচলা, রোমাঞ্চ ও বিস্ময়ের নানা মোড় পেরিয়ে, শেষ ধাপে উড়ন্ত জয় দিয়েই সেটির পূর্ণতা দিলেন এমা রাডুকানু। ইউএস ওপেনের শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন তিনি ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে ওঠা লায়লা ফার্নান্দেজকে ফাইনালে উড়িয়ে দিয়ে। লেখা হলো নতুন এক রূপকথা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Sept 2021, 03:39 AM
Updated : 12 Sept 2021, 08:04 AM

বাছাইপর্ব থেকে তার ফাইনাল পর্যন্ত উঠে আসার অভিযানই ছিল এক কথায় অবিশ্বাস্য। বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে এটিই যে তার প্রথম অংশগ্রহণ। সেখানে মুকুটও জয় করে রাডুকানু তাক লাগিয়ে দিলেন টেনিস বিশ্বকে।

মেয়েদের এককে সাড়া জাগানো দুই টিনএজারের ফাইনালে ৬-৪, ৬-৩ গেমে জিতে অনন্য কীর্তি গড়লেন ১৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ তারকা।

গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে বাছাইপর্ব পেরিয়ে আসা প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে শিরোপা জয়ের ইতিহাস গড়লেন তিনি। সেই সঙ্গে ঘুচল ব্রিটিশদের ৪৪ বছরের অপেক্ষার। ১৯৭৭ সালে উইম্বলডনে ভার্জিনিয়া ওয়েডের পর কোনো মেজরের নারী এককে ট্রফিজয়ী পেল ব্রিটেন। 

টুর্নামেন্টে ফার্নান্দেজের যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রথম রাউন্ড থেকে, গত ৩০ অগাস্ট। কিন্তু রাডুকানুর শুরু হয়েছিল তার পাঁচ দিন আগে। বাছাইপর্বের তিনটি ম্যাচও তো তাকে জিতে আসতে হয়েছে! ১৭ দিনের মধ্যে ১০টি ম্যাচ জিততে সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দেন তিনি। প্রতিটি ম্যাচের স্কোরবোর্ডেই তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে।

এই ১০ ম্যাচে একটি সেটও হারেননি র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৫০তম স্থানে থেকে আসর শুরু করা রাডুকানু। প্রত্যেকটি ম্যাচ জেতেন সরাসরি সেটে এবং প্রতিটি লড়াইয়েই ফুটে ওঠে তার আগ্রাসী মনোভাব ও প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রবল ইচ্ছাশক্তি।

ফাইনালের শেষ পর্যায়ে গিয়ে অবশ্য ক্ষণিকের জন্য খেই হারানোর শঙ্কা জেগেছিল রাডুকানুর। দ্বিতীয় সেটে ৫-৩ গেমে এগিয়ে থাকার সময় পায়ে আঘাত পান তিনি। তবে মেডিকেল টাইম আউট নিয়ে ফেরার পর আর বেশি সময় নেননি, দুর্দান্ত একটি ‘এইস’ মেরে নিশ্চিত করেন শিরোপা।

জিতেই দুই হাতে মুখ ঢেকে কোর্টে শুয়ে পড়েন রাডুকানু, যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার! সবচেয়ে কম বয়সী ব্রিটিশ খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের ইতিহাসও লেখা হয়ে গেল তাতে।

আগামী ১৩ নভেম্বর ১৯ বছর পূর্ণ করতে যাওয়া রাডুকানু কীর্তি গড়েন আরও বেশ কিছু। ২০০৪ সালে মারিয়া শারাপোভার পর সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় (শারাপোভা জিতেছিলেন সে বছরের উইম্বলডনে)। ২০১৪ সালের সেরেনা উইলিয়ামসের পর প্রথম নারী হিসেবে কোনো সেট না হেরে ইউএস ওপেন জয়।

ফাইনালে হেরে গেলেও ফার্নান্দেজের ট্রফির লড়াইয়ে আসার গল্পটাও কম বিস্ময়কর নয়। নাওমি ওসাকা, আঞ্জেলিক কেরবারদের মতো তারকাদের হারিয়ে ফাইনালে ওঠেন তিনি। রাডুকানুর সঙ্গে মিলে জন্ম দেন গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে নারী-পুরুষ মিলে প্রথম এমন ফাইনালের, যেখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই অবাছাই খেলোয়াড়!

র‌্যাঙ্কিংয়ে ৭৩তম স্থানে থেকে টুর্নামেন্ট শুরু করা কানাডার এই তরুণী ফাইনালের পথে একে একে বিদায় করেন তৃতীয় রাউন্ডে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওসাকা, চতুর্থ রাউন্ডে কেরবার, কোয়ার্টার-ফাইনালে পঞ্চম বাছাই এলিনা সলিতোলিনাকে ও সেমি-ফাইনালে দ্বিতীয় বাছাই আরিনা সাবালেঙ্কাকে।

অনেক শক্ত বাধা পেরিয়ে ফাইনালে উঠলেও রাডুকানুর সামনে কোনো প্রতিরোধই গড়তে পারেননি ফার্নান্দেজ।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অচেনা ফার্নান্দেজ এখন যেন টেনিস বিশ্বের মধ্যমণি। টুইটারে তাকে অভিনন্দন জানান রড লেভার, মার্তিনা নাভ্রাতিলোভার মতো কিংবদন্তিরা।

এই শিরোপা জয়ে ১৫০ নম্বর থেকে এক লাফে র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৩ নম্বরে উঠে আসবেন রাডুকানু। হয়ে যাবেন ব্রিটেনের এক নম্বর। সেই সঙ্গে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হবে ১৮ লাখ পাউন্ড!