রোনালদোর ক্যারিয়ারে বিশেষ সাতটি মুহূর্ত

ক্যারিয়ারে অসংখ্য রেকর্ড ছুঁয়েছেন ও ভেঙেছেন, গড়েছেন নতুন কত না ইতিহাস। রঙিন পথচলায় আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটাও নিজের করে নেওয়ার পর স্তুতিতে ভাসছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। নতুন করে উঠে আসছে তার এই দীর্ঘ যাত্রাপথের নানা গল্প।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2021, 12:22 PM
Updated : 2 Sept 2021, 03:44 PM

বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বুধবার রাতে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে হারতে বসা ম্যাচের শেষ দিকে সমতাসূচক গোল করে আলি দাইকে ছাড়িয়ে যান রোনালদো। আন্তর্জাতিক ফুটবলে গোলের রেকর্ডে এককভাবে উঠে বসেন চূড়ায়। পরে যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে আরেকটি গোল করে জেতান দলকে।

জাতীয় দলের হয়ে ১৮০তম ম্যাচে নতুন এই ইতিহাস গড়লেন সম্প্রতি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফেরা তারকা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে রোনালদোর গোল এখন ১১১টি।

বিশেষ এই ক্ষণে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সাতটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তকে তুলে ধরেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা।

অভিষেক

২০০৩ সালের ২০ অগাস্ট, প্রীতি ম্যাচে পর্তুগালকে চেপে ধরেছিল কাজাখস্তান। গোলের জন্য মরিয়া পর্তুগালের ওই সময়ের কোচ লুই ফেলিপে স্কলারি সিদ্ধান্ত নেন ১৮ বছর বয়সী এক তরুণকে মাঠে নামানোর। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পর্তুগাল কিংবদন্তি লুইস ফিগোর বদলি হিসেবে প্রথমবারের মত জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নামেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। পরনে ছিল ১৬ নম্বর জার্সি।

কিছুদিন আগেই ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডে নাম লেখানো সেই তরুণ নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছিলেন অভিষেক ম্যাচেই। পর্তুগালের ১-০ গোলে জেতা সেই ম্যাচে রোনালদো পেয়েছিলেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

২০১৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি নিয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও তার পর্তুগিজ সতীর্থদের উদযাপন। ফাইল ছবি

প্রথম গোল, মিশ্র অনুভূতি

২০০৪ সালে ঘরের মাটিতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের উদ্বোধনী ম্যাচেই পর্তুগালের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে আসে গ্রিসের বিপক্ষে হার। ১-০ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় বদলি হিসেবে মাঠে নামার কিছুক্ষণ পরই প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়কে নিজেদের বক্সে ফাউল করে পেনাল্টি উপহার দেন রোনালদো। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় গ্রিস। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে ফিগোর কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে লাফিয়ে হেডে জাতীয় দলের হয়ে প্রথম গোলটি করেন তিনি।

তবে তাতে শেষ রক্ষা হয়নি। আন্তর্জাতিক ফুটবলে প্রথম গোলের মুহূর্তটি স্মরণীয় হলেও মিশ্র অনুভূতি নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। সেই আসরেই রোনালদোদের আবারও কাঁদিয়েছিল গ্রিস। ফাইনালে তাদের ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল দলটি।

বিশ্বকাপে প্রথম গোল

২০০৬ বিশ্বকাপে ১৭ নম্বর জার্সি গায়ে রোনালদো অংশ নেন তার প্রথম বিশ্বকাপে। বাছাইপর্বে ১২ ম্যাচে ৭ গোল করে আশা দেখাচ্ছিলেন বিশেষ কিছুর। ইরানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ম্যচে পেনাল্টি থেকে বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলের দেখা পান পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলার। পর্তুগাল ম্যাচটি জেতে ২-০ গোলে। পর্তুগাল সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত গেলেও সেই আসরে আর গোলের দেখা পাননি রোনালদো। শেষ চারে ফ্রান্সের বিপক্ষে হেরে যায় তার দল।

গোল খরার অবসান

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে স্পেনের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকের পর ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ফাইল ছবি

২০০৯ সালে ওই সময়ের রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর প্রথম মৌসুমেই দারুণ পারফর্ম করেন রোনালদো। তবে জাতীয় দলে যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছিলেন; ২০১০ বিশ্বকাপের আগে ১৬ মাস ধরে পর্তুগালের হয়ে গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। সেই বিশ্বকাপেই অধিনায়কের আর্মব্যান্ডে উঠেছিল তার হাতে। লম্বা সময় ধরে গোল খরায় থাকলেও নিজের সামর্থ্য নিয়ে কোন সন্দেহ ছিল না তার। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, "গোল হল কেচাপের মতো, যখন আসবে আসতেই থাকবে"।

কোত দি ভোয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র দিয়ে আসর শুরু করা পর্তুগাল দ্বিতীয় ম্যাচে উত্তর কোরিয়াকে উড়িয়ে দেয় ৭-০ গোলে। খরা কাটিয়ে একটি গোল করার পাশাপাশি আরেকটিতে অবদান রাখেন রোনালদো।

হ্যাটট্রিক নায়ক

বাছাইপর্বে অধারাবাহিক পারফরম্যান্সে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল পর্তুগালের ২০১৪ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ। মূল পর্বে জায়গা করে নিতে প্লে-অফে সুইডেনের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না তাদের সামনে। প্রথম লেগে ১-০ গোলে জেতা ম্যাচে গোল করার পর দ্বিতীয় লেগে রোনালদো জ্বলে ওঠেন যখন দলের তাকে প্রয়োজন ছিল সবচেয়ে বেশি। জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ জোড়া গোলে হুমকি দয়ে দাঁড়ালেও হ্যাটট্রিক করে দেশকে বিশ্বকাপে নিয়ে যান রোনালদো। সেই ম্যাচেই পর্তুগালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে রোনালদো ছাড়িয়ে যান পাওলেতাকে (৪৭ গোল)।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন

২০০৩ সালে পর্তুগালের হয়ে অভিষেক ম্যাচে কাজাখস্তানের বিপক্ষে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। ছবি: ফিফা টুইটার

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ২০১৬ আসরে মন্থর শুরুর পর ধীরে ধীরে নিজেদের খুঁজে পেতে শুরু করে পর্তুগাল। সেই টুর্নামেন্ট দিয়েই চালু হওয়া নতুন নিয়মে গ্রুপে তৃতীয় হয়েও শেষ ষোলোয় ওঠে দলটি।

শুরুতে কিছুটা নিষ্প্রভ থাকলেও আসর এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে চেনা ছন্দে দেখা যায় রোনালদোকে। বিশেষ করে ওয়েলসের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে একটি গোল করে ও একটি করিয়ে তিনি দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। স্বাগতিক ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে প্রথমার্ধে চোটের কারণে চোখের জলে মাঠে ছাড়তে হয় রোনালদোকে। তবে টাচলাইনে কোচের পাশে দাঁড়িয়ে দলকে তার উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা নজর কাড়ে।

অবশেষে অতিরিক্ত সময়ে ১-০ গোলে জিতে শিরোপা উঁচিয়ে ধরে পর্তুগাল। জাতীয় দলের হয়ে প্রথম শিরোপার স্বাদ পান রোনালদো, যা দেশটির ইতিহাসেও প্রথম মেজর শিরোপা।

স্পেনের বিপক্ষে সেই হ্যাটট্রিক

পর্তুগালের হয়ে এখন পর্যন্ত ৯টি হ্যাটট্রিক করেছেন রোনালদো। সবচেয়ে দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক করেছিলেন ২০১৮ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে, স্পেনের বিপক্ষে। পেনাল্টি থেকে প্রথম গোলের পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁ পায়ের জোরালো শটে পরাস্ত করেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক দাভিদ দে হেয়াকে। এরপর ৩-২ গোলে পিছিয়ে থাকা অবস্থায় ফ্রি-কিক থেকে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান এই পর্তুগিজ তারকা।

ইতিহাসের প্রথম ফুটবলার হিসেবে টানা আটটি মেজর টুর্নামেন্টে গোল করার কৃতিত্ব গড়ার পাশাপাশি মিরোস্লাভ ক্লোসা, উভে জিলা ও পেলের পর চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে টানা চারটি বিশ্বকাপে গোল করেন রোনালদো।