সমর্থকদের কি ‘ধোকা’ দিল বার্সেলোনা?

গ্রীষ্মকালীন দলবদল শুরুর দিকে বার্সেলোনা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তা ঘুরেফিরে বলছিলেন, সব ঠিক আছে। ক্লাব প্রধানের কথায় বার্সেলোনা ও দলটির সমর্থকরা সবকিছু গুছিয়ে ওঠার প্রশ্নে ছিল দারুণ আশাবাদী।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2021, 01:50 PM
Updated : 1 Sept 2021, 02:21 PM

কিন্তু দলবদলের বাজার শেষ হওয়ার পর সেপ্টেম্বরের শুরুতে এসে দেখা মিলল পুরোপুরি ভিন্ন কিছুর। অগাস্টের শুরুতে লিওনেল মেসির বিদায় দিয়ে যে ভীষণ খারাপ কিছুর শুরু হয়েছিল, শেষ দিনে এসে সেটাই যেন পূর্ণতা পেল। অনেকের কাছে যা অবিশ্বাস্য, কারণ কোনোভাবেই যে এসব প্রত্যাশিত ছিল না।

সের্হিও আগুয়েরো, এরিক গার্সিয়া, এমেরসন এবং মেমফিস ডিপাই-সবাই খুব আগেভাবে দলে যোগ দিয়েছিলেন। একটা ভালো কাঠামো দাঁড়িয়ে গিয়েছিল দলটার এবং সমর্থকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল শুরু। কিন্তু দ্রুতই বদলে গেল সব। এখন দেখা যাচ্ছে-লাপোর্তার প্রতিশ্রুতির সবকিছুর বাস্তবতার সঙ্গে মিল ছিল না।

ওই খেলোয়াড়দের ছাড়াই বার্সেলোনার পারিশ্রমিকের সীমা ছাপিয়ে গিয়েছিল লা লিগার ফিন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লের গণ্ডি। ওই নিয়মের কারণে দলে নতুন আসাদের নিবন্ধন করা যাচ্ছিল না।

গত জুনে মেসির চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। ফ্রি এজেন্ট হয়ে যান আর্জেন্টাই তারকা। তার কাম্প নউয়ে থাকা, নতুন ঠিকানায় চলে যাওয়া নিয়ে ছিল গুঞ্জনের ছড়াছড়ি। কিন্তু বার্সেলোনা সবসময় বলে আসছিল-সবকিছু নিয়ন্ত্রণেই আছে।

কিন্তু এ দৃশ্যও বদলে যায় গত ৫ অগাস্ট। বোমাটি ফাটায় বার্সেলোনাই। জানায় ‘আর্থিক ও কাঠামোগত বাধার’ কারণে মেসি চলে যাচ্ছে।

দলের সেরা তারকার চলে যাওয়া নিয়ে সেসময় লাপোর্তা দাবি করেছিলেন, ক্লাব নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এবং ক্লাবের দায়ের পরিমাণ বিশাল অঙ্কের। ক্লাব মেসির চুক্তির অর্থ কয়েক ধাপে পরিশোধ করতে চেয়েছিল, কিন্তু লিগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি মেলেনি।

মেসি চলে যাওয়ার পরও বার্সেলোনার পারিশ্রমিক খাতে ব্যয় ছিল মোট আয়ের ৯৫ শতাংশ। এরপর আরও খেলোয়াড় তারা বিক্রি করেছে, অর্থও পেয়েছে, কিন্তু তা ছিল প্রয়োজনের সমুদ্রে একফোটা পানি পড়ার মতো।

এরপর বেশ পরাবাস্তব সময়ের মধ্য দিয়ে বার্সেলোনাকে পথ চলতে দেখা গেছে। এদিক ওদিক তারা ছোটাছুটি করেছে, এক অর্থে হাত পেতে বেড়িয়েছে। সিনিয়র খেলোয়াড়দেরকে পারিশ্রমিক কমাতে এবং বেতন পাওয়ার বিষয়টি বিলম্বিত করতে রাজি করিয়েছে।

সবার আগে ডিফেন্ডার জেরার্দ পিকে বার্সেলোনার ওই প্রস্তাবে সাড়া দেন। এতে করে এমেরসন, ডিপাই ও গার্সিয়ার নিবন্ধন করাতে সক্ষম হয় তারা। এরপর জর্দি আলবা এবং অধিনায়ক সের্হিও বুসকেতস পারিশ্রমিক কমাতে সম্মত হন; তাতে করে আগুয়েরোকে নিবন্ধন করাতে পারে কাতালুনিয়ার দলটি।

৩১ অগাস্ট দিনের শুরু হয়েছিল উল্লেখযোগ্য এক আলোচনা দিয়ে। স্থানীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, রাহিম স্টার্লিং ও জোয়াও ফেলিক্সকে পাওয়ার লড়াইয়ে নেমেছে বার্সেলোনা। এ গুঞ্জন যখন থামল, তখন উঠে এলো দানি ওলমোর নাম।

পরে বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে গেল; এই সব গুঞ্জন, গাল-গল্প যেন তৈরি করা হয়েছিল স্রেফ সমর্থকদের খুশি রাখার জন্য। খেলোয়াড় বিক্রি এবং খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমানোর দিকেই ছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষের মূল মনোযোগ।

নতুন করে দলে নেওয়া এমেরসনকে টটেনহ্যাম হটস্পারের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হলো। ইলাইশ মোরিবাকে বিক্রি করে দেওয়া হলো বুন্ডেসলিগার দল লাইপজিগের কাছে।

এখানেই শেষ নয়। দলবদলের একেবারে শেষ বেলায় বার্সেলোনা জানাল অঁতোয়ান গ্রিজমানকে আপাত ছেড়ে দেওয়ার কথা। ফরাসি এই ফরোয়ার্ডকে ২০১৯ সালে আতলেতিকো মাদ্রিদ থেকে ১২ কোটি ইউরোয় দলে টেনেছিল তারা, সেই আতলেতিকোতেই গ্রিজমানকে ধারে পাঠাল তারা।

শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা ধারে হলেও নতুন একজনকে নিতে পেরেছে। লুক ডি ইয়ংকে সেভিয়ার কাছ থেকে ধার নিয়েছে তারা।

সব মিলিয়ে গ্রীষ্মটা বার্সেলোনার জন্য ছিল কঠিন। বলা যায়, উড়তে উড়তে আবারও সুর্য্যের খুব কাছাকাছি গিয়ে তারা পুড়ে গেল এবং বছরের পর বছর আর্থিক অব্যবস্থাপনার চড়া মাশুল দিল!