‘জার্ড মুলারের জন্যই আজকের জায়গায় বায়ার্ন’

ক্যারিয়ার জুড়ে অসাধারণ সব মুহূর্তের জন্ম দেওয়া জার্ড মুলারের মৃত্যুতে বিশেষ করে জার্মান ফুটবলে তৈরি হয়েছে বিশাল শূন্যতা। বায়ার্ন মিউনিখের পরাশক্তি হয়ে ওঠার শুরুটা ছিল তার হাত ধরেই। তাইতো এই কিংবদন্তির বিদায়ের দিনটিকে ক্লাবের ইতিহাসে শোকের ও কালো দিন হিসেবে দেখছে তারা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 August 2021, 04:55 PM
Updated : 15 August 2021, 05:17 PM

বায়ার্ন সভাপতি হেরবের্ট হাইনারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আজ বায়ার্ন ও এর সব সমর্থকদের জন্য শোকের দিন, কালো দিন। জার্ড মুলার ইতিহাসে সেরা স্ট্রাইকার এবং দারুণ একজন মানুষ, বিশ্ব ফুটবলের এক অসাধারণ ব্যক্তিত্ব।”

৭৫ বছর বয়সে জার্মানির স্থানীয় সময় রোববার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মুলার।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অনেক রেকর্ড গড়া মুলার জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ম্যাচ প্রতি তার গোল গড় অবিশ্বাস্য। আর ক্লাব ক্যারিয়ারে তো তার অর্জনের ভাণ্ডার রীতিমত চোখধাঁধানো। ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময় তিনি কাটান বায়ার্নে, ১৫ বছরে দলটির হয়ে ৬০৭টি প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলে গোল করেছিলেন ৫৬৬টি।

‘দা গ্রেটেস্ট গোলস্কোরার’ হিসেবে পরিচিত সাবেক এই ফুটবলারের স্মরণে ক্লাবের প্রতি তার অবদানকে তুলে ধরেছেন হেরবের্ট হাইনার।

“আমরা তার স্ত্রী উশচি ও পরিবারের গভীর কষ্টে একাত্মতা জানাচ্ছি। জার্ড মুলার না থাকলে আমাদের ভালোবাসার এফসি বায়ার্ন আজকের জায়গায় আসতে পারত না। তার নাম ও স্মৃতি চিরকাল অম্লান থাকবে।”

জার্মান ফুটবলের এক কিংবদন্তির চিরবিদায় ছুঁয়ে যাচ্ছে আরেক কিংবদন্তি গোলরক্ষক অলিভার কানকে। বায়ার্ন মিউনিখের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কান ক্লাবের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছেন ফুটবল ইতিহাসের নক্ষত্রকে।

“জার্ড মুলারের মৃত্যুর খবর আমাদের সবাইকে গভীরভাবে আঘাত করেছে। তিনি এফসি বায়ার্নের ইতিহাসে কিংবদন্তিদের একজন। আজ পর্যন্ত তার কীর্তি অতুলনীয় এবং চিরকাল এফসি বায়ার্ন ও জার্মান ফুটবলের ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবেন তিনি।”

“একজন খেলোয়াড় ও ব্যক্তি হিসেবে, জার্ড মুলার এফসি বায়ার্নের জন্য অন্য সবার চেয়ে আলাদা। বায়ার্নের বিশ্বের বৃহত্তম ক্লাবগুলোর একটি হয়ে ওঠার পেছনে তার অবদান অতুলনীয়। জার্ড চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবে।”

১৯৪৫ সালের ৩ নভেম্বর, বাভারিয়ার নর্ডলিনগেনে জন্ম মুলারের। ১২ বছর বয়সের আগ পর্যন্ত কোনো ক্লাবে খেলেননি তিনি। এরপর নাম লেখান নিজ শহরের ক্লাব ১৮৬১ নর্ডলিনগেনে। ক্লাবটির যুব দল হয়ে উঠে আসেন মূল দলে।

১৯৬৪ সালে যোগ দেন বায়ার্নে। পরের দলটির শীর্ষ লিগে উঠে আসার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি, ওই ১৯৬৪-৬৫ মৌসুমে গোল করেছিলেন ৩৯টি।

জার্মানির শীর্ষ লিগে নিজের প্রথম মৌসুমে ৩৩ ম্যাচে ১৫ গোল করেছিলেন মুলার, ক্যারিয়ারে যা সর্বনিম্ন। পরের ১৪ বছরে সাতবারই বুন্ডেসলিগার আসরের সেরা গোলদাতা হন তিনি।

১৯৭৯ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব লডারডেল স্ট্রাইকার্সে যোগ দেওয়ার আগে বুন্ডেসলিগায় ৪২৭ ম্যাচে রেকর্ড ৩৬৫টি গোল করেন তিনি, যা আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। বায়ার্নের চারটি বুন্ডেসলিগা ও তিনটি ইউরোপিয়ান কাপ(চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পূর্বের সংস্করণ) সহ মোট ১৪টি শিরোপা জিতেছিলেন তিনি।

১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোল (১০টি) করে গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন মুলার। সেই বছর জেতেন ব্যালন ডি’অর। ১৯৭৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির জয়সূচক গোলটিও তিনিই করেছিলেন। নেদারল্যান্ডসকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেবার শিরোপা জিতেছিল সেই সময়ের পশ্চিম জার্মানি।

আর ১৯৭২ জাতীয় দলের হযে জিতেছিলেন ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ওই বছর এক বর্ষপঞ্জিতে ওই সময়ের রেকর্ড ৮৫ গোল করেছিলেন মুলার। ৪০ বছর পর ২০১২ সালে সেটাকে ছাড়িয়ে যান লিওনেল মেসি।

ওই প্রসঙ্গে মুলার বলেছিলেন, “আমার কাছে রেকর্ডের তেমন মূল্য নেই। কিন্তু যদি কেউ আমাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার যোগ্য হয়, তাহলে সেটা মেসি।”

বুন্ডেসলিগায় মুলারের এক আসরে সবচেয়ে বেশি ৪০ গোলের রেকর্ডটি টিকে ছিল ৪৯ বছর। গত মে মাসে ওই রেকর্ড ভাঙেন বায়ার্নেরই বর্তমান তারকা রবের্ত লেভানদোভস্কি।

দেশটির ফুটবল ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মুলার জাতীয় দলের হয়ে ৬২ ম্যাচে করেছিলেন ৬৮ গোল। জার্মান ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএফবি) এই কিংবদন্তির বিদায়ে শোক প্রকাশ করেছে।

“সর্বকালের অন্যতম সেরা জার্মান ফুটবলারের মৃত্যুতে ডিএফবি শোক প্রকাশ করছে। রেস্ট ইন পিস, জার্ড মুলার। তার স্ত্রী ও পরিবারের প্রতি আমাদের সমবেদনা।”

স্পেনের দুই সফল ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা এবং ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডও সমবেদনা জানিয়েছে মুলারের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি।