প্রধানমন্ত্রীকেও ‘চ্যালেঞ্জ’ জানিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন ওয়ারহোম

বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের মুকুট পরেছেন দুইবার। সঙ্গে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন ও ইউরোপিয়ান ইনডোর চ্যাম্পিয়নের খেতাবজয়ী কারস্টেন ওয়ারহোমের সংগ্রহে ছিল না কেবল অলিম্পিকের পদক। সেই চাওয়া তিনি পূরণ করেছেন নিজেরই গড়া আগের বিশ্বরেকর্ড ভেঙে। নরওয়ের এই হার্ডলারকে নিয়েই থাকছে মজার আট তথ্য।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 August 2021, 01:56 PM
Updated : 3 August 2021, 01:56 PM

টোকিও অলিম্পিক স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার পুরুষ ৪০০ মিটার হার্ডলসে ৪৫ দশমিক ৯৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হন ওয়ারহোম।

গত জুলাইয়ে ওসলোর ডায়মন্ড লিগ মিটিংয়ে ৪৬ দশমিক ৭০ সেকেন্ড টাইমিং করে ১৯৯২ সালের বার্সেলোনা অলিম্পিকসে কেভিন ইয়ংয়ের গড়া রেকর্ড (৪৭ দশমিক ৭৮ সেকেন্ড) ভেঙেছিলেন নরওয়ের এই অ্যাথলেট।

এক মাসের মধ্যে রেকর্ডটাকে আবারও নতুন করে লেখা ২৫ বছর বয়সী এই হার্ডলারকে নিয়ে মজার একটি ফিচার প্রকাশ করা হয়েছে অলিম্পিকের অফিসিয়াল ওয়বসাইটে।

১. লেগোর প্রতি ভালোবাসা

ছোট বাচ্চাদের খেলনা লেগোর প্রতি অদ্ভূত এক ভালোলাগা আছে ওয়ারহোমের। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে লকডাউনের এই সময়ে ঘরে বসে বিভিন্নভাবে সময় কাটাচ্ছে মানুষ। অলস সময়টা এই অ্যাথলেটের কেটেছে লেগো নিয়ে। লেগো দিয়ে নির্মাণ করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হোম ভেন্যু ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ, ডিজনি ক্যাসলসহ, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গাড়িও। সম্প্রতি ডায়মন্ড লিগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ নিয়ে কথা বলেন তিনি।

“একটা জিনিস আছে, যেটা আমি করতে ভালোবাসি, আর সেটা হলো লেগো দিয়ে বিভিন্ন কিছু বানানো। মহামারীর এই সময়ে লেগো দিয়ে অনেক কিছু বানিয়েছি। এটা করে ভালো সময় কাটিয়েছি।”

“(লেগো দিয়ে) আমি সবকিছুই বানাই। বানিয়েছি, ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, লন্ডনের টাওয়ার ব্রিজ। ডিজনি ক্যাসল বানিয়েছি, তবে একসময় বুগাত্তি, পোরশে গাড়ির মতো অনেক কিছুই বানিয়েছি।”

২. লাকি লেন সেভেন

ট্র্যাকে সাত নম্বর লেনটা ওয়ারহোমের সবচেয়ে প্রিয়। চাওয়াটা অবশ্য কোচের চাওয়ার সঙ্গে মিল রেখে।

“আসলে এই চাওয়াটা কেবল আমার কোচের কারণে, যিনি আমাকে নিয়ে খুবই সচেতন। তিনি চান আমি যেন বাঁক থেকে অনেকটা দূরে দৌড়ায়। কারণ বাঁকটা প্রশস্ত হওয়ায় এটা শরীরে কম প্রভাব ফেলে, এটা কঠিন কিছু নয়। এর আরও কারণ হলো, তিনি চান আমি যেন চোটে কম পড়ি এবং ক্যারিয়ারটা লম্বা করতে পারি।”

“তবে অবশ্যই চ্যাম্পিয়নশিপে যে লেনটা আপনি পাবেন, সেখানেই দৌড়াতে হবে, আর আমার এতে কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি বেছে নিতে বলা হয়, আমি সবসময় ৭ নম্বর লেনটাই নেব। এই লেনে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।”

ইম্পসিবল গেমসে ৩০০ মিটার হার্ডলসে বিশ্বরেকর্ড ৩৩ দশমিক ৭৯ সেকেন্ডে দৌড় শেষ করার সময় সাত নম্বর লেনে দৌড়েছিলেন ওয়ারহোম।

৩. পছন্দ করেন সাজতে

বিভিন্ন ধরনের সাজ নেওয়াও খুব পছন্দের ওয়ারহোমের। বন্ধুদের সঙ্গে এমন অনেক ছবি তিনি পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গত বছরের শুরুতে বন্ধুদের সঙ্গে শতবছর আগের কাল্পনিক বার্মিংহ্যাম গ্যাং সেজে ছবি তুলে পোস্ট করেন তিনি। এ থেকে বোঝা যায় নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় শো দ্য পিকি ব্লাইন্ডার্সও তিনি দেখেছেন।

ইনস্টাগ্রামে কয়েক বছর আগের একটি ছবিও কেড়েছে নজর, জাপান ভ্রমণের বিষয়টি মাথায় রেখেই হয়ত সাজটি দিয়েছিলেন তিনি।

৪. বিজ্ঞাপণেও রসবোধ

ওয়ারহোমের রসবোধও আছে বেশ। যখন কোনো চমৎকার সৃষ্টিশীল ভাবনা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিলে যায়, তার থেকে সেরাটা বের করে আনার মতো হয়, তখন পর্দাও তা দারুণভাবে ফুটে ওঠে। এক্সট্রা-র একটি বিজ্ঞাপণেও সেটি দেখা গেছে।

৫. দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ তাকে দেখেছিলেন দোহায়

কিছু বিষয় বিশ্বাস করাই কঠিন। ২০১৯ সালে দোহায় হওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ঘটনাও তেমনি। প্রতিযোগিতার চতুর্থ দিনে ওয়ারহোমের ৪০০ মিটার হার্ডলস সরাসরি টিভির পর্দায় দেখেছিলেন নরওয়ের দেড় কোটি মানুষ। ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য ছিল ওয়ারহোমের কাছেও।

“…আমাদের দেশে মানুষ কেবল পাঁচ কোটি। তার মানে দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ মানুষ এটা সরাসরি দেখেছে। সংখ্যাটা অবিশ্বাস্য।”

ওয়ারহোম চাইনিজ হলে এই শতাংশের হিসাবে খেলাটি সরাসরি দেখতেন প্রায় ৩৫ কোটি মানুষ।

৬. স্ট্রিটফাইটারে প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষে হার

দোহার সে দিনের দৌড় সরাসরি দেখেছিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবের্গও। ওয়ারহোম হয়ত ভাবতেও পারেননি একদিন তিনি সোলবের্গেরই মুখোমুখি হবেন। তবে ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডে নয়, ভিডিও গেমসে। স্ট্রিটফাইটারের সেই লড়াইয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষে পেরে ওঠেননি।

লড়াইয়ের সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে দিয়েছিলেন মজার এক ক্যাপশন, “স্ট্রিটফাইটারে আজ আমি প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষে হেরেছি…এবার হয়ত লড়াইটা হবে ৪০০ মিটার হার্ডলসে।”

৭. তুষারের মধ্যে কাঠ চেলানো

তুষারময় সকালে কাঠ ফাড়া যেন নরওয়ের বাসিন্দাদের খুব নিয়মিত একটা কাজ। এমন একটা ক্যাপশন দেওয়া ছবিতে তুষারের মধ্যে কাঠ ফাড়তে দেখা যায় ওয়ারহোমকে।

৮. তার কোচও রসিক

কোচের সঙ্গে তার সম্পর্ক ঠিক প্রথাগত গুরু-শিষ্যের মতো নয়। বরং লেইফ ওলাভ আলনসকে তিনি কোচ ও বেস্ট ফ্রেন্ড-ই মনে করেন। এর কারণ হিসেবে একবার বলেছিলেন, “জীবনের ১০ বছর যদি (কারো কোচিংয়ে) এমন প্রশিক্ষণে ব্যয় করতে হয় তাহলে বন্ধু হতেই হয়।”

“আমাদের সম্পর্কটা সাধারণ ছেলেদের বন্ধুত্বের মত। আমরা একে অন্যকে উপহাস করি, একসঙ্গে প্রচুর মজা করি এবং একই মজার জিনিস ভাগাভাগি করি। বয়স যাই হোক না কেন- মনের দিক দিয়ে মনে হয় আমরা একই বয়সের। বয়স ৫ হতে পারে আবার ৫০, ব্যাপারটা নির্ভর করে নিজের ভাবনার ওপর।”