টোকিওতে ছোট-ছোট প্রাপ্তি বাংলাদেশের

বরাবরের মতো টোকিও অলিম্পিকসেও বাংলাদেশের জন্য অংশগ্রহণই মূখ্য হয়ে থাকল। তবে এর মধ্যেও আছে ছোট কিছু প্রাপ্তি; সাঁতারু আরিফুল ইসলাম, জুনাইনা আহমেদ গড়েছেন ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং। আর্চারিতে লড়াইয়ের আশা দেখিয়েছেন রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। বাংলাদেশের প্রথম আর্চার হিসেবে অলিম্পিকসে দ্বিতীয় রাউন্ডে গেছেন রোমান। স্বদেশের গত আসরের প্রতিযোগীর চেয়ে বেশি স্কোর করেছেন দিয়া।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 06:58 AM
Updated : 1 August 2021, 06:58 AM

টোকিওর আসরে এবার অংশ নেয় বাংলাদেশের ছয় অ্যাথলেট। কেবল রোমান সরাসরি অর্জন করেছিলেন অলিম্পিকের টিকেট। বাকিরা পেয়েছিলেন ওয়াইল্ড কার্ড। রোববার জহিরের ৪০০ মিটার দৌড়ের হিট থেকে ছিটকে পড়া দিয়ে শেষ হয়েছে টোকিও অলিম্পিকসে বাংলাদেশের পথচলা।

টাইমিংয়ে উন্নতি আরিফুল ও জুনাইনার

দুই সাঁতারুর কাছে প্রত্যাশাই ছিল টাইমিংয়ের উন্নতি। সেটা করেও দেখিয়েছেন তারা। স্কলারশিপ নিয়ে গত দুই বছর ফ্রান্সে অনুশীলন করা আরিফুল ইসলাম ৫০ মিটার ফ্রিস্টাইলে ২৪ দশমিক ৮১ সেকেন্ডে সাঁতার শেষ করে ছাপিয়ে যান নিজের সেরাকে। এ ইভেন্টে ২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিনা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন্সশিপসে ২৪ দশমিক ৯২ সেকেন্ড টাইমিং ছিল তার আগের সেরা।

টোকিওতে নিজের ৪ নম্বর হিটে আট প্রতিযোগীর মধ্যে তৃতীয় এবং সব মিলিয়ে হিটে ৭৩ প্রতিযোগীর মধ্যে ৫১তম হন গত এসএ গেমসে রুপা জেতা আরিফুল। অবশ্য পাঁচ বছর আগে এ ইভেন্টে রিওতে গড়া মাহফিজুর রহমান সাগরের গড়া ২৩ দশমিক ৯২ সেকেন্ড টাইমিং পেছনে ফেলতে পারেননি তিনি। সেবার  ৮৫ জনের মধ্যে ৫৪তম হয়েছিলেন মাহফিজুর।

লন্ডন প্রবাসী বাংলাদেশের সাঁতারু জুনাইনা আহমেদ ২৯ দশমিক ৭৮ সেকেন্ড সময় নিয়ে নিজের হিটে আট প্রতিযোগীর মধ্যে পঞ্চম হন। হিটে সব মিলিয়ে ৮১জনের মধ্যে ৬৮তম। ২০১৯ সালের দক্ষিণ কোরিয়ার ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন্সশিপসে গড়া আগের সেরা টাইমিং ৩০ দশমিক ৯৬ সেকেন্ড টোকিওতে পেছনে ফেলেছেন তিনিও।

জুনাইনা অবশ্য রিওতে সোনিয়া আক্তারের গড়া টাইমিং পেছনে ফেলেছেন। ২৯ দশমিক ৯৯ সেকেন্ড নিয়ে ৮৮ জনের মধ্যে ৬৯তম হয়েছিলেন সোনিয়া।

দ্বিতীয় পর্বে রোমান, শ্যামলীকে ছাড়িয়ে দিয়া

আর্চারির র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে রোমান পেরুতে পারেননি ব্যক্তিগত সেরা স্কোর। ৬৬২ স্কোর গড়ে ৬৪ প্রতিযোগীর মধ্যে ১৭তম হয়েছিলেন। ওয়ার্ল্ড আর্চারি স্বীকৃত প্রতিযোগিতার বাছাইয়ে তার সেরা স্কোর ৬৮১; যা থাইল্যান্ডে ২০১৯ সালে এশিয়া কাপ স্টেজ-১-এ গড়েছিলেন। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে সেরা স্কোর ৬৮৬; গত এসএ গেমসে পোখারায় গড়া। ৬৩৫ স্কোর গড়ে মেয়েদের র‌্যাঙ্কিং রাউন্ডে ৬৪ প্রতিযোগীর মধ্যে ৩৬তম হয়েছিলেন দিয়া সিদ্দিকী।

গত মাসে সুইজারল্যান্ডের লুজানে রোমান-দিয়া জুটি মিশ্র দ্বৈতে রুপা জেতায় টোকিওতেও তাদের নিয়ে আশা ছিল। তা পূরণ হয়নি। কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার ম্যাচে শক্তিশালী দক্ষিণ কোরিয়ার জুটির কাছে ৬-০ সেট পয়েন্ট হারে বাংলাদেশ। এ ইভেন্টের পদক তো বটেই, এবার আর্চারির পাঁচ পদকের চারটিই উঠেছে দক্ষিণ কোরিয়ার ঝুলিতে। পুরুষ এককের পদক জিতে চমক দেখিয়েছেন তুরস্কের মেতে গাজোজ।

২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসে হওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ পুরুষ এককে ব্রোঞ্জ জেতা রোমানকে নিয়ে ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রত্যাশা ছিল সবচেয়ে বেশি। তা পূরণের কিছুটা ইঙ্গিতও এই তারকা আর্চার দিয়েছিলেন প্রথম রাউন্ডে গ্রেট ব্রিটেনের টম হলকে ৭-৩ সেট পয়েন্টে হারিয়ে। কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডে কানাডার প্রতিপক্ষ ক্রিসপিন ডুয়েনাসের বিপক্ষে শুরুটা আশা জাগানিয়া হলেও ৬-৪ সেট পয়েন্টে হেরে ছিটকে যান। তবে দেশের প্রথম আর্চার হিসেবে অলিম্পিকসের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার তৃপ্তিটুকু আছে গত এসএ গেমসে হ্যাটট্রিক সোনা জেতা এই আর্চারের।

দারুণ লড়াইয়ের পর শুট-অফে হেরে গেলেন বাংলাদেশের দিয়া। ফাইল ছবি।

দিয়াও ব্যক্তিগত এককে আশা জাগানিয়া শুরু পেয়েছিলেন। শেষ ৩২-এর লড়াইয়ে বেলারুশের প্রতিযোগী কারিনা জোমিন্সকায়ার বিপক্ষে ম্যাচ নিয়ে গিয়েছিলেন পঞ্চম সেটে। ৫-৫ পয়েন্টের সমতার পর এক শটের লড়াইয়ে ১০-৯ ব্যবধানে হেরে যান ১৭ বছর বয়সী এই আর্চার। কিছুটা তৃপ্তি খুঁজে নেওয়ার সুযোগ অবশ্য দিয়ারও আছে। রিও দে জেনেইরোর গত অলিম্পিকসে অংশ নেওয়া শ্যামলী রায়ের (৬০০) চেয়ে বাছাইয়ে ৩৫ স্কোর বেশি করেছেন তিনি।

রিওর চেয়েও মলিন শুটার বাকী

টোকিও অলিম্পিকসে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ দলের ৬ অ্যাথলেটের মধ্যে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ছিলেন আব্দুল্লাহ হেল বাকী। রিও দে জেনেইরোর পর দ্বিতীয় অলিম্পিকসে অংশ নিলেন এই শুটার। কিন্তু বিবর্ণ পারফরম্যান্সে সবার আগে ছিটকে যান তিনি। এমনকি পারেননি রিওর স্কোরকেও ছাপিয়ে যেতে।

১০ মিটার এয়ার রাইফেলের বাছাইয়ে ৬১৯.৮ স্কোর গড়ে ৪৭ প্রতিযোগীর মধ্যে ৪১তম হন বাকি। ২০১৬ সালে রিওতে ৬২১ দশমিক ২ স্কোর গড়ে বাছাইয়ে ২৫তম হয়েছিলেন কমনওয়েথ গেমসে দুটি রুপা জেতা এই শুটার।

এ ইভেন্টে বাকি পারেননি নিজের ব্যক্তিগত সেরা স্কোরকেও পেছনে ফেলতে। ২০১৬ সালে দিল্লীর শুটিং বিশ্বকাপে ৬২৪.৮ স্কোর গড়েছিলেন। এই স্কোরের খুব কাছাকাছি গিয়েছিলেন এ বছরই মার্চে দিল্লিতে হওয়া বিশ্বকাপে, সেবার ৬২৪.৫ স্কোর করেছিলেন ৩১ বছর বয়সী এই শুটার। রিও টু টোকিও-বাকির গল্পটা তাই হতাশারই।

জহিরের দৌড়ে নেই উন্নতি ছাপ

কেনিয়ার নাইরোবির ওয়ার্ল্ড-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্সে নজর কেড়েছিলেন জহির। দেশের দ্রুততম মানব মোহাম্মদ ইসমাইলকে রেখে তাই তাকেই বেছে নিয়েছিল বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন। কিন্তু প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও পূরণ করতে পারেননি জহির।

টোকিওর অলিম্পিক স্টেডিয়ামের ট্র্যাকে ৪৮ দশমিক ২৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেন জহির, যা তার ব্যক্তিগত সেরা টাইমিংয়ের চেয়ে বেশ কম।  ২০১৯ সালে ভারতে অন্ধ্র প্রদেশে জাতীয় জুনিয়র অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের ৪০০ মিটারে ৪৭ দশমিক ৩৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেরা হন জহির। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এটাই তার সেরা টাইমিং। ঘরোয়াতে সেরা টাইমিং ২০১৯ সালে গড়া ৪৬ দশমিক ৮৬ সেকেন্ড।

সব মিলিয়ে হিটে ৪৭ প্রতিযোগীর মধ্যে ৪৪তম হয়েছেন জহির। এ ইভেন্টের হিট পেরিয়ে পরের ধাপে যাওয়া ২৫ অ্যাথলেটের মধ্যে সবশেষ জনের টাইমিং ৪৫ দশমিক ৬৪ সেকেন্ড।

২০১৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে হওয়া ওয়ার্ল্ড-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি-ফাইনালে ওঠার মধ্য দিয়ে আলোচনায় আসেন জহির। সেবার ৪৮ দশমিক ২২ সেকেন্ড সময় নিয়ে সেমির হিটে পঞ্চম হয়ে ছিটকে পড়লেও দারুণ এক কীর্তি গড়েন তিনি। ১৯৯৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইয়্যুথ গেমসে ১০০ মিটারে আব্দুল্লাহ হেল কাফি সেমি-ফাইনালে ওঠার পর প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের কোনো প্রতিযোগিতায় সেমিতে পা রাখেন জহির। কিন্তু অলিম্পিকের আঙিনায় জহিরের মতো বাংলাদেশও এবার রাখতে পারেনি ছাপ।