অলিম্পিকের আঙিনায় ৩৩ বছর!

সেই ১৯৮৮ সালের সিউল অলিম্পিকস থেকে ২০২১ টোকিও অলিম্পিকস। মাঝে সময়ের ডানায় চেপে পার হয়ে গেছে ৩৩টি বছর। ‘দা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিকসের আঙিনায় কতজন এসেছেন, চলেও গেছেন, তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু নিনো সালুকভাৎসে আজও অলিম্পিকের চেনা মুখ!

হাসিবুল করিমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 August 2021, 01:58 AM
Updated : 1 August 2021, 04:06 AM

দীর্ঘ এই পথচলায় সালুকভাৎসেরও হয়ত এবার ক্লান্তি চেপে বসেছিল কিছুটা। ভেবেছিলেন থেমে যাবেন। কিন্তু সেখানেও ঘোর আপত্তি ছেলে সোৎনি মাখাভারিয়ানির। মাকে সে দেখতে চায় প্যারিসের আসরে! অবসরের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে তাই সালুকভাৎসেকে ভাবতে হচ্ছে নতুন করে।

অলিম্পিকের মূলমন্ত্রে অংশগ্রহণই মুখ্য। সে দিক থেকে সালুকভাৎসে হতে পারেন দারুণ উদাহরণ। বৈশ্বিক ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় আসরে এ নিয়ে নয়বার তার পা পড়ল। এর মধ্যে প্রথমবারই পেয়েছিলেন সেরা সাফল্য। ১৯৮৮ সালে সিউলের আসরে ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে রুপা এবং ২৫ মিটার পিস্তলে জিতেছিলেন সোনা। সিউলের প্রতিযোগিতায় অবশ্য তিনি অংশ নিয়েছিলেন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে।

এরপর একবারই অলিম্পিকসে পদকের স্বাদ পেয়েছেন সালুকভাৎসে; সেটা ২০০৮ সালে বেইজিংয়ে। সেবার ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে জিতেছিলেন ব্রোঞ্জ। ৫২ বছর বয়সী এই শুটার এবার টোকিওতে আলো ছড়াতে পারেননি; ১০ মিটার এয়ার পিস্তলে ৩১তম এবং ২৫ মিটার পিস্তলে হয়েছেন ২৫তম। অবশ্য এবার সব মিলিয়ে মোটেও স্বস্তিতে ছিলেন না তিনি। করোনাভাইরাসের থাবা, রোগ-ব্যাধিতে জেরবার অবস্থা ছিল সালুকভাৎসের।

“আমার বাবা, তিনি আমার কোচ। তিনি ৯০ বছর বয়সী। তিনি বেঁচে আছেন ও ভালো আছেন। তিনি এমনকি করোনাকে হারিয়েছেন। তার পা ভেঙেছে ও অস্ত্রোপচারও করাতে হয়েছে। আমার মা, স্বামী, ছেলে সবাই অসুস্থ ছিল। ওই সময় আমি ভাবিওনি অলিম্পিকে অংশ নেব।”

শেষ পর্যন্ত সব বাধা পেরিয়ে সালুকভাৎসে টোকিওতে এলেন। প্রথম নারী অ্যাথলেট হিসেবে সবচেয়ে বেশি অলিম্পিকসে খেলার দারুণ কীর্তি গড়লেন। হাতছানি আছে ঈর্ষণীয় এক প্রাপ্তির। সবচেয়ে বেশি ১০বার অলিম্পিকসে অংশ নেওয়ার রেকর্ডটি এখনও কানাডার একুস্ট্রিয়ান জাম্পার ইয়ান মিলারের। ২০২৪ সালে প্যারিসের পা রাখতে পারলেই মিলারের পাশে বসবেন সালুকভাৎসে।

অলিম্পিকসে সব রঙের পদকের স্বাদ পেয়েছেন। বেইজিং অলিম্পিকে দেশের পতাকা টেনেছেন। গড়েছেন নয় আসরে খেলার রেকর্ডও। তিন দশকেরও বেশি সময়ের পথচলার ইতি এবার টেনে দিতে চেয়েছিলেন ১৯৯৩ সালে ‘অর্ডার অব অনার’ স্বীকৃতি পাওয়া জর্জিয়ার এই শুটার। কিন্তু ছেলের এক ফোন কলেই শুরু হয়েছে দোটানা। একদিকে মিলারের ওই রেকর্ডও ভাসছে চোখের সামনে, অন্যদিকে মন বলছে ‘থেমে যাও।’

“...আমাদের কথা বলার পুরোটা সময় সে বলেই যাচ্ছিল, ‘এ নিয়ে প্রশ্নের কিছু নেই। তিন বছর বাকি। তুমি দশম অলিম্পিকের জন্য যেতে পার, তোমার সুযোগ আছে। কেন সেটা নেবে না? তুমি যদি অবসর নাও, আমিও নেব!’ আর সে অবসর নিক, আমি চাই না।”

“শারীরিকভাবে আমি পর্যাপ্ত শক্তিশালী। কিন্তু মনোবলের দিক থেকে চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন। আমরা (মা-ছেলে) এক সাথে যাব (প্যারিসে)। আমি কোচ হিসেবেও যেতে পারি। কিন্তু সে এটা বুঝবে না। আমাকে বাড়ি যেতে হবে এবং তাকে বোঝাতে হবে। দেখা যাক। এটা নির্ভর করছে কে কাকে বোঝাতে পারে, তার উপর।”

ছেলের সঙ্গে যুক্তি-তর্কে যদি হেরেই যান, তাহলে হয়ত প্যারিসেও পা পড়বে সালুকভাৎসের। মিলারের রেকর্ডের পাশেও বসা হবে তার। অলিম্পিকসে তার পথচলার বছরও বেড়ে দাঁড়াবে ৩৩ থেকে ৩৬ বছরে!