টোকিও অলিম্পিকে ‘নতুন স্বপ্ন’ বাংলাদেশের

ছয় অ্যাথলেটের মধ্যে কেবল রোমান সানাই অর্জন করেছেন টোকিও অলিম্পিকে সরাসরি খেলার যোগ্যতা। এই তারকা আর্চারকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। টোকিও যাত্রার আগে বিওএর সংবাদ সম্মেলনের ব্যানারের স্লোগানে শোভা পেল সেই বার্তা-নতুন স্বপ্নে অলিম্পিক যাত্রা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2021, 02:07 PM
Updated : 14 July 2021, 02:07 PM

করোনাভাইরাসের কারণে এক বছর পিছিয়ে টোকিও অলিম্পিক মাঠে গড়াবে আগামী ২৩ জুলাই। আগামী ৮ অগাস্ট পর্দা নামবে বৈশ্বিক ক্রীড়াযজ্ঞের সর্ববৃহৎ আসরের। এ উপলক্ষে কয়েকধাপে টোকিওতে যাবে বাংলাদেশ দল।

১৮ সদস্যের দলে ৬ জন অ্যাথলেট। দুই আর্চার রোমান সানা ও দিয়া সিদ্দিকী। শুটার আব্দুল্লাহ হেল বাকি, সাঁতারু আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ ও স্প্রিন্টার জহির রায়হান।

২০১৯ সালে নেদারল্যান্ডসে হওয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে রিকার্ভ পুরুষ এককে ব্রোঞ্জ জিতে বাংলাদেশকে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার টিকেট এনে দেন রোমান। গত এসএ গেমসে হ্যাটট্রিক সোনা জেতা এই আর্চার গত মে মাসে সুইজারল্যান্ডের লুসানে আর্চারি ওয়ার্ল্ড কাপ স্টেজ-২তে দিয়া সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈতে রুপা জিতেন। ঘরোয়া পর্যায়ে সবশেষ বাংলাদেশ গেমসে পদকশূন্য থাকলেও রোমানকে নিয়ে আশাবাদী বিওএ সহ-সভাপতি বশির আহমেদ আমিন।

“নতুন স্বপ্নে অলিম্পিক যাত্রা-এই শ্লোগান…. রোমান এই স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। স্বপ্ন যদি পুরোটা সফল নাও হয়, আমাদের বিশ্বাস আমরা ভালো করব। আমাদের সবারই লক্ষ্য ভালো করা। বাকি আন্তর্জাতিক মানের শুটার। তার যে স্কোর, সে সরাসরি কোয়ালিফাই না করলেও ওয়াইল্ড কার্ড পেয়েছে। লন্ডন অলিম্পিকে কিন্তু বাছাইয়ে অষ্টম স্থানে থাকা শুটারই সোনা জিতেছিল। বাকিও ভালো করতে পারবে।”

“রোমান এক্সেপসনাল গিফটেড প্লেয়ার। সে কখনও শীর্ষে ওঠে, নিচে নামে। যেমন সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো করেছে কিন্তু বাংলাদেশ গেমসে কিছু জিততে পারেনি। এই ইভেন্টগুলোতে নিজের দিনে ওরা অনেক কিছু করতে পারে। আমরা বলেছি, ওই দিনটাতে নিজের সেরাটা দাও।”

স্কলারশিপ নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে দুই সাঁতারু আরিফুল ফ্রান্সে ও জুনাইনা লন্ডনে অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিয়েছেন। দুই সাঁতারুর কাছে অলিম্পিকে দলের শেফ দ্য মিশন বশির আহমেদ মামুনের প্রত্যাশা ভালো টাইমিং।

“২০১৮ থেকে জুনাইনা ও আরিফুলকে স্কলারশিপের সহযোগিতায় আমরা ট্রেনিং দিচ্ছি। তাদের উন্নতি হয়েছে। কিন্তু এসএ গেমসে তারা সোনা জেতেনি। আরিফ ও জুনাইনার টাইমিংয়ের উন্নতি হয়েছে। আশা করি তারা ভালো টাইমিং করবে।”

অ্যাথলেটিক্সে ১০০ মিটারের দেশসেরা মোহাম্মদ ইসমাইলকে বাদ দিয়ে জহিরকে বেছে নেওয়া নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। জহিরকে বেছে নেওয়ার কারণও ব্যাখ্যা করলেন বিওএ সহ-সভাপতি।

“১০০ মিটার যে চ্যাম্পিয়ন সে কি গত এসএ গেমসে কিছু করতে পেরেছে? পারেনি। আমরাও তাদের কথা ভেবেছিলাম। যারা ১০০ মিটারে চ্যাম্পিয়ন তাদের তো আগেও পাঠিয়েছি, কিন্তু পদক আগেও আসেনি, এবারও  আসবে না। নাইরোবিতে (২০১৭ সালে) অনূর্ধ্ব-১৮ ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে সেমি-ফাইনালে উঠেছিল জহির, অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন, মেডিকেল কমিটি তার ফিটনেস যাচাই-বাছাই করে বাছাই করেছে, আমরা সম্মতি দিয়েছি।”

ভালো কিছুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলেনে অনলাইনে যুক্ত হওয়া রোমান , বাকিরাও। অলিম্পিকের জন্য কঠোর অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানালেন রোমান।

“প্রস্তুতি ভালো হয়েছে। প্রতিদিন কঠোর অনুশীলন হচ্ছে। ফাইনাল ম্যাচগুলো হয় যেভাবে, সেভাবে আলাদা অনুশীলনের একটা ব্যবস্থা করা হয়েছে আমাদের জন্য। ওয়ার্ল্ড কাপ স্টেজ-২ ও ৩-তে আমাদের ফলাফল ভালো ছিল।”

২০১৬ সালের রিও দে জেনেইরো অলিম্পিকে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে ৬২১ দশমিক ২ স্কোর গড়ে বাছাইয়ে ২৫তম হওয়া বাকিও জানালেন ভালো প্রস্তুতির কথা।

“প্রস্তুতি ভালো হচ্ছে। কিন্তু বিষয়গুলো নির্ভর করে ওই দিনের পারফরম্যান্সের উপর। মাঝে মাঝে ৬২৭-২৮ স্কোর হয়, আবারও কমও হয়। গড়ে ৬২৫-২৬ এর মধ্যে থাকে।”

টোকিওতে দেশের পতাকা থাকবে সাতারু আরিফুলের হাতে। তাকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে অন্য অ্যাথলেটদের ইভেন্টগুলো আগে থাকার কথা জানালেন বিওএ মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা।

বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি দিলেন নিরাপদ অলিম্পিকের প্রতিশ্রুতি। বক্তব্যের শেষে বাংলা ভাষায় বাংলাদেশ দলের জন্য শুভকামনাও জানালেন তিনি।

“করোনাভাইরাসের কারণে অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। তবে নিরাপদ ও সুরক্ষিত করার ব্যাপারে আমরা নিশ্চয়তা দিচ্ছি। আশা করি, বাংলাদেশ সেখানে ভালো করবে। প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল পাবে। সবাইকে ধন্যবাদ। আমি মনে করি, টোকিও অলিম্পিক দিয়ে জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে।”

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল ভিডিও বার্তায় শুভ কামনা জানিয়েছেন অ্যাথলেটদের।

“আন্তরিক শুভকমনা করছি। যদি তারা সর্বোচ্চটুকু দিতে পারে, উজাড় করে দিতে পারে, তাহলে দেশের জন্য মাইলফলক আনতে পারবে বলে বিশ্বাস করি। এ মুহূর্তে সুস্থ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি তারা সুস্থ থেকে সেরাটা উজাড় করে দিতে পারবে।”

অনুষ্ঠানে দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও বার্তা।

“বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদরা টোকিও-২০২০ তে অংশগ্রহণ করছে জেনে আমি খুবই আনন্দিত। কোভিড-১৯ মহামারীর এই কঠিন সময়ে আমাদের ক্রীড়াবিদরা দৃঢ় মনোবল নিয়ে লড়াই করবে এবং দেশের জন্য সুনাম বয়ে আনবে। আমি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর টোকিও-২০২০ তে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ দলের সকল ক্রীড়াবিদকে শুভকামনা জানাচ্ছি এবং সাফল্য কামনা করছি।”