স্পেনের সংবাদমাধ্যম এএস এর সাথে সাক্ষাৎকারে সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কথা বলেছেন তার রিয়াল মাদ্রিদের থাকাকালীন সময়, পিএসজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত এবং নেইমার ও এমবাপের সাথে খেলা নিয়ে।
২০০৫ সালে তরুণ ডিফেন্ডার হিসেবে মাদ্রিদের ক্লাবটিতে যোগ দেয়ার পর থেকে রামোস কাটিয়েছেন ক্যারিয়ারের সেরা অধ্যায়। সময়ের পরিক্রমায় হয়েছেন অধিনায়ক। তার নেতৃত্বেই টানা তিনটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে রিয়াল। গত বছর থেকেই চোটের সাথে লড়াই করে মাঠের বাইরে ছিলেন লম্বা সময়। রামোসের চাওয়া ছিল দুই বছরের নতুন চুক্তি, রিয়াল রাজি ছিল এক বছরের চুক্তিতে। শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবে রামোস রাজি হলেও রিয়ালের পক্ষ থেকে আর সাড়া মেলেনি। অবশেষে যোগ দেন ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট পিএজিতে।
রিয়াল মাদ্রিদে কাটানো সুন্দর মুহূর্ত এখনো নিজের মধ্যে ধারণ করেন রামোস। তবে অতীতের স্মৃতি না হাতড়ে এখন তার পূর্ণ মনোযোগ নতুন ক্লাবে, নতুন শুরুর ব্যাপারে। তিনি আশাবাদী, নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে ক্লাবকে করবেন সমৃদ্ধ এবং এগিয়ে যাবেন নতুন সাফল্যের সীমানায়।
“আমি চ্যালেঞ্জ পছন্দ করি। আমি জেতার সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে চাই। আশা করি, মাদ্রিদেও সেটা করতে পেরেছি। আমি এটা অতুলনীয় এবং অসামান্য স্মৃতি হিসেবে মনে রাখব। আমি আদর্শ দলেই এসেছি এবং সেই দলে যেখানে আমি আসতে চেয়েছি।”
পিএজিতে যোগ দিয়ে রামোস দেখছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসেও নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে রোমাঞ্চিত স্পেনের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা এই তারকা।
“আমি শুধু সর্বোচ্চ পর্যায়ে পারফর্ম করার চিন্তা করি এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চাই। এখানে আমি প্রথম থেকে শুরুর জন্য এসেছি, একটি নতুন দল এবং নিজের সবটুকু দেয়ার জন্য। এসব নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভাবতে আমার ভালো লাগে। আশা করি এটি একটি ভালো বছর যাবে।”
তিক্তভাবে ক্লাব ছেড়ে আসলেও সাবেক ক্লাবের প্রতি রামোসের ভালোবাসায় কোন কমতি নেই। জানিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গোল করলে কিংবা জয় পেলেও উদযাপন না করার কথা।
“রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে আমি কখনই গোল উদযাপন করব না। সবার ওপরে, তারা আমার পরিবার এবং আমার হৃদয়ে আছে। এই সম্মান তাদের প্রাপ্য। গোল কিংবা জয় (উদযাপন করব না রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে)।”
“ব্যক্তিগতভাবে আমি কখনই পরামর্শ দেই না। অভিজ্ঞতা থেকে আমি হয়ত কিছু বলতে পারি, কিন্তু সেটা গোপনীয়তা বজায় রেখে। পিএসজির খেলোয়াড় হিসেবে আমি তাকে (পিএসজিতে) থাকতে বলব। আমি সেরাদের সাথে খেলতে পছন্দ করি এবং এমবাপে সেরাদের একজন।”
“কেউ যখন (ক্লাব) ছাড়ার কিংবা থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা শেষ পর্যন্ত ব্যক্তিগতই হয়। আমার ক্ষেত্রে, আমার পরিবার, স্পোর্টস প্রজেক্ট… আমি জানি না এমবাপের ভাবনায় কি আছে। আমি চাই সে এখানে থাকুক, কারণ সে তরুণ এবং পার্থক্য গড়ে দেয়। এটা একটি ভালো দল। আমার জয়ের মানসিকতা দলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারি এবং সেটা যদি কোনো সতীর্থকে প্রভাবিত করে, তাহলে ভালোই হবে।”
বিভিন্ন সময়ে এমবাপে রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন। সাবেক ক্লাবের প্রতি পূর্ণ সম্মান রেখেই রামোসের চাওয়া এমবাপে যেনে পিএসজিতেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
“রিয়াল মাদ্রিদ বিশ্বের সেরা ক্লাবের একটি। ইতিহাসের দিক থেকে, সবার সেরা। আমার মতে, সেরা খেলোয়াড়দের সেখানে যেতেই হবে। কিন্ত এখন আমি তাকে আমার দলেই চাই। আমি জিততে চাই এবং সেটার জন্য আমি সেরা খেলোয়াড়দের নিজের দলে চাই।”
“লিও (লিওনেল মেসি) বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়দের একজন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত আমার ওপর নয়। আমি আপনাকে হাজারটা কথা বলতে পারি, কিন্তু দিনশেষে সেটা কাজে নাও লাগতে পারে। প্রত্যেককেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তবে আমি সেরাদের মাঝে পরিবেষ্টিত থাকতে পছন্দ করি এবং আমার দলে সবসময় তার জায়গা থাকবে।”
এমবাপের পাশাপাশি পিএসজির আরেক বড় তারকা নেইমার। দুজনের সাথেই খেলার জন্য মুখিয়ে আছেন রামোস। তার বিশ্বাস, একত্রে তারা অনেক সাফল্য অর্জন করবেন।
“আমার মনে হয় তারা দুজনই অসাধারণ খেলোয়াড়। নেইমারের সাথে খেলতে আমি মুখিয়ে আছি, যার সাথে আমার চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। কিলিয়ানের (এমবাপে) সাথেও, সেও দুর্দান্ত খেলোয়াড়। কিন্তু যেই খেলুক না কেন, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল জেতাটা।”