পেনাল্টি মিসের পর বর্ণবাদের শিকার ইংল্যান্ডের ৩ খেলোয়াড়

আসর যত এগিয়েছে ততই ইংল্যান্ড সমর্থকদের বিখ্যাত ‘ইটস কামিং হোম’ স্লোগান জোরালো হয়েছে। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের পর প্রথম মেজর টুর্নামেন্টে শিরোপা জয়ের স্বপ্ন দেখছিল তারা। কিন্তু টাইব্রেকারে তাদের কাঁদিয়ে শেষ হাসি হেসেছে ইতালি। ইংলিশদের তিনটি পেনাল্টি মিস করেন মার্কাস র‍্যাশফোর্ড, জ্যাডন স্যানচো ও বুকায়ো সাকা। ম্যাচ শেষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমর্থকদের তীব্র রোষানলে পড়েছেন তিন জনই।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2021, 11:57 AM
Updated : 12 July 2021, 12:40 PM

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে সমতার পর টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইতালি।

টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই নিয়মিতভাবে ম্যাচ শুরুর আগে হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন ইংলিশ খেলোয়াড়রা। অথচ ফাইনালে হারের পর সেই দলের খেলোয়াড়দেরই শিকার হতে হলো বর্ণবাদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে র‍্যাশফোর্ড, স্যানচো ও সাকার দিকে ধেয়ে এসেছে বর্ণবাদী মন্তব্য।

দা মেট্রোপলিটন পুলিশ ইতোমধ্যে ঘটনার তদন্তে নেমেছে এবং ঘোষণা দিয়েছে “এটা (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদ) মেনে নেওয়া হবে না।”

এই ঘটনার সমালোচনা করেছেন ইংল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও।

“এই ইংল্যান্ড দলের নায়কের মর্যাদা প্রাপ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদের শিকার হওয়া নয়। যারা এই কাজ করেছে, তাদের নিজেদের নিয়ে লজ্জিত হওয়া উচিত।”

ইউরোতে নিজেদের সব ম্যাচের শুরুতে হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইংলিশ খেলোয়াড়রা। আসর শুরুর আগে দুটি প্রীতি ম্যাচে হাঁটু গেড়ে বর্ণবাদের বিপক্ষে প্রতিবাদ জানানোর সময় ইংলিশ খেলোয়াড়দের দুয়ো দেয় নিজ দেশের দর্শকরা।

টুর্নামেন্ট শুরুর দিন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই ব্যাপারে সরাসরি কিছু না বলে সমর্থকদের আহ্বান জানান দলকে সমর্থনের জন্য। এতে জনসনের নিন্দা করেন লেবার পার্টির নেতা স্যার কেইর স্ট্যামার। তার মতে, বর্ণবাদ নিয়ে কথা বলার সাহস নেই প্রধানমন্ত্রীর।

ইংল্যান্ড ফুটবল আসোসিয়েশন (এফএ) বর্ণবাদের এই ঘটনাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যা দিয়ে একহাত নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কর্তৃপক্ষের প্রতি।

“সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব নিতে হবে এবং আপত্তিজনক মন্তব্যকারীদের নিষিদ্ধ করতে হবে। প্রমাণাদি সংগ্রহ করতে হবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে এবং তাদের প্লাটফর্মকে এই ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষমূলক গালাগালি থেকে নিরাপদ রাখার জন্য সহায়তা করতে হবে।”

গত মে মাসে র‍্যাশফোর্ড জানিয়েছিলেন, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ইউরোপা লিগ ফাইনালে হারের পর তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্ণবাদের শিকার হয়েছিলেন।

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশের নির্যাতনে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর গোটা বিশ্বে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সেই আন্দোলনে ছিলেন বর্ণবাদের শিকার হওয়া স্যানচো।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইনে অসংখ্য ঘৃণামূলক ঘটনার প্রেক্ষিতে গত এপ্রিলে ইংল্যান্ডের ক্লাব, খেলোয়াড়, অ্যাথলেটরা চারদিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বয়কট করেন। এর মাধ্যমে তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বর্ণবাদ এবং ‘সেক্সিস্ট’ আচরণের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে আহবান জানান।

ইউরোর ফাইনালে হারের পর ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে বর্ণবাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফেইসবুক জানিয়েছে, তারা সম্প্রতি তাদের ইনস্টাগ্রাম প্লাটফর্মে নিয়মকানুন কঠিন করেছে। যার মাধ্যমে বারবার বর্ণবাদ কিংবা ঘৃণামূলক বার্তা ইনবক্সে পাঠালেই সেই অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে।