লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে রোববার নির্ধারিত ও অতিরিক্ত সময়ের খেলা ১-১ সমতায় শেষের পর টাইব্রেকারে ৩-২ গোলে জিতে ইতালি। ইংল্যান্ডের জর্ডান স্যানচো ও বুকায়ো সাকার শট আটকান দোন্নারুম্মা।
গত মাসে পিএসজিতে নাম লেখানো দোন্নারুম্মা ইতালির জার্সিতে খেলেছেন ৩৩টি ম্যাচ। এইবারের ইউরোতে সব মিলিয়ে খেলেছেন ৭১৯ মিনিট, ক্লিনশিট নিয়ে ফিরেছেন তিন ম্যাচে। গোল হজম করেছেন মাত্র ৪টি। সেভ করেছেন ৯টি। প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে পুরস্কারটি জিতলেন তিনি।
পুরো টুর্নামেন্টে কেবল গ্রুপ পর্বে ওয়েলসের বিপক্ষে ইতালির ১-০ গোলে জেতা ম্যাচেই পুরোপুরি খেলেননি দোন্নারুম্মা। ওই ম্যাচে ৭৯তম মিনিটে তাকে তুলে নিয়ে সালভাতোরে সিরিগুকে বদলি নামিয়েছিলেন ইতালি কোচ রবের্তো মানচিনি। তবে সব মিলিয়ে দোন্নারুমা এবারের আসরে যেকোনো খেলোয়াড়ের চেয়ে বেশি সময় খেলেছেন।
গ্রুপপর্বের কোনো ম্যাচেই দোন্নারুম্মা পরাস্ত হননি। ইতালিও হজম করেনি গোল। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে দোন্নারুম্মা ও ইতালি প্রথম গোল হজম করে। সব মিলিয়ে ১১ ম্যাচ পর এবং এক হাজার মিনিটেরও বেশি সময়ের মধ্যে এটাই ছিল ইতালির জালে প্রথম গোল!
টুর্নামেন্ট জুড়ে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ও দলীয় পারফরম্যান্স, দলের পারফরম্যান্সে সেটার প্রভাব এবং ইতিবাচক মানসিকতা এসব বিবেচনায় নিয়ে টেকনিক্যাল পর্যবেক্ষক দল সেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করেছেন।
আগের ছয় আসরের সেরা খেলোয়াড়
সাল | খেলোয়াড় | দেশ |
২০১৬ | অঁতোয়ান গ্রিজমান | ফ্রান্স |
২০১২ | আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা | স্পেন |
২০০৮ | চাভি | স্পেন |
২০০৪ | থিয়োদোরোস জাগোরাকিস | গ্রিস |
২০০০ | জিনেদিন জিদান | ফ্রান্স |
গোল্ডেন বুট রোনালদোর
দলীয়ভাবে আসরটা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর জন্য হতাশায় শেষ হয়েছে। কষ্টেসৃষ্টে ‘মৃত্যুকূপ’ পেরুনোর পর নকআউট পর্বের শুরুতেই থামে পর্তুগালের পথচলা। ইউরোপ সেরা মুকুট ধরে রাখার স্বপ্নও ভাঙে রোনালদোদের। তবে চার ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে ঠিকই এবারের প্রতিযোগিতার গোল্ডেন বুট জিতেছেন এই ফরোয়ার্ড।
প্রথম ম্যাচে হাঙ্গেরির বিপক্ষে দলের ৩-০ ব্যবধানে জয়ের ম্যাচে করেছিলেন জোড়া গোল। জার্মানির কাছে ৪-২ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচেও পর্তুগালকে প্রথম এগিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর গ্রুপ পর্বে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-২ ড্র করে করেছিলেন দুই গোল।
সব মিলিয়ে এবারের আসরে রোনালদো ৩৬০ মিনিট খেলে গোল করেন ৫টি, অ্যাসিস্ট ১টি। গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে ছিলেন চেক রিপাবলিকের পাত্রিক শিক; ৫ গোল তারও, কিন্তু ৪০৪ মিনিট খেলা চেক রিপাবলিকের এই ফরোয়ার্ডের কোনো অ্যাসিস্ট নেই। তিনি পেয়েছেন সিলভার বুট। ৪ গোল নিয়ে এ তালিকায় তৃতীয় ফরাসি ফরোয়ার্ড করিম বেনজেমা।
আগের ৫ আসরের গোল্ডেন বুট জয়ী
সাল | খেলোয়াড় | দেশ |
২০১৬ | অঁতোয়ান গ্রিজমান (৬ গোল) | ফ্রান্স |
২০১২ | ফের্নান্দো তরেস (৩ গোল) | স্পেন |
২০০৮ | দাভিদ ভিয়া (৪ গোল) | স্পেন |
২০০৪ | মিলান বারোস (৫ গোল) | চেক রিপাবলিক |
২০০০ | পেত্রিক ক্লাইভার্ট ও সাভো মিলোসেভিচ (৫ গোল) | নেদারল্যান্ডস এবং সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রো |
বয়স কেবল ১৮ বছর, এরই মধ্যে জাতীয় দলে জায়গা পাকা করে ফেলেছেন পেদ্রি। দারুণ ধারাবাহিক পথচলায় এবার স্বীকৃতিও পেয়ে গেলেন তিনি। উয়েফার টেকনিক্যাল পর্যবেক্ষকদের মতে, আসরের সেরা তরুণ খেলোযাড় স্পেনের এই মিডফিল্ডার।
পরিসংখ্যানে পেদ্রির ইউরো ২০২০ খেলেছেন: ৬২৯ মিনিট মোট দৌড়েছেন: ৭৬.১ কি.মি. বল পায়ে দৌড়েছেন ৩৮.২৩ কিলোমিটার সফল পাসের শতকরা হার: ৯২.৩% |
এবারের ইউরো শুরুর আগে জাতীয় দলের হয়ে মাত্র চার ম্যাচ খেলেছিলেন পেদ্রি। কিন্তু এখানে এসে শুরু থেকেই কোচের আস্থা ছিল তার ওপর। সেমি-ফাইনাল পর্যন্ত স্পেনের পথচলায় মাত্র এক মিনিট মিস করেন তিনি; কোয়ার্টার-ফাইনালে সু্ইজারল্যান্ডের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের আগের মিনিটে তাকে তুলে নিয়েছিলেন কোচ লুইস এনরিকে। ম্যাচটি টাইব্রেকারে জিতেছিল স্পেন।
আসরজুড়েই নজরকাড়া পারফরম্যান্সে পেদ্রি প্রশংসা আদায় করে নিয়েছেন। বিশেষ করে সেমি-ফাইনালে ইতালির বিপক্ষে তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। ১২০ মিনিটে তার ৬৬ পাসের ৬৫টিই ছিল সফল।
২০১৬ আসরে সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের পুরস্কারটি জিতেছিলেন পর্তুগালের রেনাতো সানচেস।