ডেনমার্ককে হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ইংল্যান্ড

প্রতিপক্ষের আক্রমণে পিষ্ট ডেনমার্ক মাথা তুলতে পারল সামান্যই। অবশ্য তাতেই ঘাম ছুটে গেল ইংল্যান্ডের। প্রতিপক্ষের ভুলে সমতায় ফিরলেও কাসপের স্মাইকেলের দেয়াল আর ভাঙতে পারছিল না তারা। অবশেষে অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে মিলল জালের দেখা। প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2021, 09:36 PM
Updated : 7 July 2021, 10:12 PM

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে বুধবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ২-১ গোলে জিতেছে গ্যারেথ সাউথগেটের দল। মিকেল ডামসগার্ডের দারুণ ফ্রি কিকে এগিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর আত্মঘাতী গোল করে বসে ডেনমার্ক। অতিরিক্ত সময়ে গিয়ে ব্যবধান গড়ে দেন হ্যারি কেইন।

দারুণ এ জয়ে আরেকটি অপেক্ষারও অবসান হলো ইংল্যান্ডের। ১৯৬৬ বিশ্বকাপ জয়ের ৫৫ বছর পর মেজর কোনো টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠল ‘থ্রি লায়ন্স’।

পুরো ম্যাচে বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণে একচেটিয়া আধিপত্য করেছে ইংল্যান্ড। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে গোলের উদ্দেশে ২০টি শট নেয় তারা, যার ১০টিই ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে ঘর সামলাতে ব্যস্ত ডেনিশরা নিতে পারে মোটে ৬ শট, যার চারটি ছিল লক্ষ্যে।

প্রথম ১০ মিনিটের ইংলিশ আক্রমণের পর ধীরে ধীরে গুছিয়ে ওঠে ডেনমার্ক। উল্লেখযোগ্য সুযোগ অবশ্য কেউই পাচ্ছিল না। ম্যাচের ঘড়িতে ২৭ মিনিট হতেই দারুণ একটি রেকর্ড গড়ে ফেলেন ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড; নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় জাল অক্ষত রাখার কীর্তি। ভাঙেন ১৯৬৬ সালের মে-জুলাইয়ে গর্ডন ব্যাঙ্কসের গড়া ৭২০ মিনিটের রেকর্ড।

এর তিন মিনিট পরই আসরে প্রথম গোল হজম করে ইংল্যান্ড। মিকেল ডামসগার্ডের দুর্দান্ত ফ্রি কিকে বল রক্ষণ দেয়ালের ওপর দিয়ে গিয়ে শেষ মুহূর্তে একটু নিচু হয়ে ক্রসবার ঘেঁষে জালে জড়ায়। পিকফোর্ড ঝাঁপিয়ে বলে আঙুল ছোঁয়ালেও রুখতে পারেননি। এবারের ইউরোয় সরাসরি ফ্রি কিকে এটাই প্রথম গোল।

আট মিনিট পর সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন রাহিম স্টার্লিং। হ্যারি কেইনের পাস পেয়ে ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডারের নেওয়া শট দারুণ নৈপুণ্যে রুখে দেন কাসপের স্মাইকেল।

পরের মিনিটেই প্রতিপক্ষের ভুল আর কিছুটা ভাগ্যের জোরে সমতায় ফেরে ইংলিশরা। কেইনের আরেকটি দারুণ থ্রু বল ধরে বুকায়ো সাকা বাইলাইন থেকে গোলমুখে স্টার্লিংয়ের উদ্দেশে ক্রস বাড়ান। সেটাই রুখতে গিয়ে আত্মঘাতী গোল করে বসেন ডেনমার্ক অধিনায়ক সিমোন কেয়া।

দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে কাসপের ডলবার্ডের ডি-বক্সে বাইরে থেকে নেওয়া নিচু শট ঝাঁপিযে ফেরান পিকফোর্ড। চার মিনিট পর হ্যারি ম্যাগুইয়ারের হেড একইভাবে ঠেকিয়ে দলকে সমতায় রাখেন স্মাইকেল। ৭৩তম মিনিটে ম্যাসন মাউন্টের ক্রসও কর্নারের বিনিময়ে ফেরান তিনি।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে আবারও ইংল্যান্ডকে হতাশ করেন স্মাইকেল; এবার কেইনের কোনাকুনি শট রুখে দেন তিনি। খানিক পর জ্যাক গ্রিলিশের শট পাঞ্চ করেন  লেস্টার সিটির এই গোলকিপার।

অবশেষে ১০৪তম মিনিটে কেইনের গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। তার স্পট কিকও ফিরিয়েছিলেন স্মাইকেল; কিন্তু বল হাতে রাখতে পারেননি, আলগা বল ছুটে গিয়ে জালে পাঠান রাশিয়া বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট জয়ী। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন ওঠার অবকাশ আছে যথষ্টে। ডি-বক্সে স্টার্লিংকে বাধা দিতে জোয়াকিম পা বাড়িয়েছিলেন বটে, তবে একটু সহজেই যেন পড়ে যান ইংলিশ মিডফিল্ডার। রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ভিএআরের বজায় থাকে।

গ্রুপ পর্বে গোলশূন্য থেকে খানিকটা সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কেইন। নকআউট পর্ব শুরু হতেই তার ভিন্ন রূপ; তিন ম্যাচেই করলেন চার গোল।

দীর্ঘ সময় খোলসবন্দী থাকা ডেনমার্ক পিছিয়ে পড়ার পর আক্রমণে মন দেয়। সময়ও ছিল অনেকটা; কিন্তু তেমন কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি তারা।

তবে প্রথম ম্যাচে মাঠে ক্রিস্তিয়ান এরিকসেনের অসুস্থ হয়ে পড়া, সতীর্থকে হারিয়ে ভগ্নহৃদয়ে খানিক পরই মাঠে নামতে বাধ্য হওয়া, প্রথম দুই ম্যাচে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই ছিটকে পড়ার দোরগোড়ারায় চলে যাওয়া দলটি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে-তাতে কাসপের হিউমান্দের দলকে নিয়ে গর্ব করতে পারে ডেনমার্কবাসী।

অন্যদিকে, ১৯৬৮ সালে চার দলের আসরে সরাসরি হয়েছিল সেমি-ফাইনাল, যেখানে তৃতীয় হয়েছিল ইংল্যান্ড। তাই সত্যিকারের সেমি-ফাইনাল লড়াই হিসেবে নিলে এর আগে একবারই এই ধাপে উঠেছিল তারা; ১৯৯৬ এর ওই আসরে জার্মানির কাছে হেরেছিল দলটি।  

এবার সেই জার্মানিকে হারিয়েই কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। আর শেষ আটে উড়িয়ে দেয় ইউক্রেনকে। এবার মিলল ফাইনালের টিকেট, যেখানে তাদের অপেক্ষায় টানা ৩৩ ম্যাচ ধরে অপরাজিত ইতালি।

আগামী রোববার এই মাঠেই শিরোপা লড়াইয়ে নামবে দারুণ ছন্দে থাকা দল দুটি।