সুইসদের স্বপ্নযাত্রা থামিয়ে সেমিতে স্পেন

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে থেমে গেল সুইজারল্যান্ডের স্বপ্নময় পথচলা। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর অসাধারণ গল্প লেখা দলটি স্পেনের সামনেও লড়াই করল দুর্দান্ত। শুরুতে পিছিয়ে পড়ার ধাক্কা সামলে ফেরাল সমতা। অনেকটা সময় একজন কম নিয়েও রুখে দিল প্রতিপক্ষের একের পর এক আক্রমণ। তবে টাইব্রেকারে এবার আর পেরে উঠল না তারা। সেমি-ফাইনাল উঠল লুইস এনরিকের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2021, 06:46 PM
Updated : 2 July 2021, 10:39 PM

রাশিয়ার সেন্ত পিতার্সবুর্গে শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালে নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ে থাকে ১-১ সমতা। টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে জিতে উৎসবে মাতে প্রতিযোগিতাটির তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। যেখানে দুটি শট ঠেকিয়ে স্পেনের নায়ক গোলরক্ষক উনাই সিমোন।

পেনাল্টি শুট আউটে স্প্যানিশদের শুরুটা হয় বাজে। তাদের প্রথম শট পোস্টে মারেন অধিনায়ক সের্হিও বুসকেতস। বল জালে পাঠান সুইজারল্যান্ডের ফাবিয়ান, স্পেনের দানি ওলমো। সুইসদের দ্বিতীয় শট ঠেকান সিমোন। স্পেনের রদ্রির শট ফেরান ইয়ান সমের। সুইসদের পরের শটও রুখে দেন সিমোন।

স্পেনকে এগিয়ে নেন জেরার্দ মরেনো, ২-১। চতুর্থ শটে সুইজারল্যান্ডের রুবেন ভার্গাস বল উড়িয়ে মারেন। এরপর মিকেল ওইয়ারসাবাল বল জালে পাঠালে উৎসবে মাতে স্পেন।

চার সেরা তৃতীয় দলের একটি হয়ে নকআউট পর্বে উঠেছিল সুইজারল্যান্ড। শেষ ষোলোয় ফ্রান্সের বিপক্ষে ৩-১ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর শেষ ৯ মিনিটে দুই গোল করে ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে নেয় তারা। পরে টাইব্রেকারে ফরাসিদের ৫-৪ গোলে হারিয়ে ৬৭ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো মেজর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১৩ নম্বর দলটি। যাত্রাটা আর দীর্ঘ হলো না তাদের।

সুইসদের আগের ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক গ্রানিত জাকা নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারেননি এই ম্যাচে। শুরু থেকে বল দখলে আধিপত্য করা স্পেন অষ্টম মিনিটে প্রতিপক্ষের ভুলে এগিয়ে যায়। কোকের কর্নার তেমন ভালো হয়নি। ডি-বক্সের বাইরে থেকে জর্দি আলবার ভলি সুইস মিডফিল্ডার দেনিস জাকারিয়ার বাড়ানো পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক সমেরের।

ইউরোর এক আসরে সর্বোচ্চ আত্মঘাতী গোলের রেকর্ড বেড়ে দাঁড়াল ১০টিতে। যা মহাদেশীয় প্রতিযোগিতাটির আগের ১৫ আসরের সম্মিলিত আত্মঘাতী গোলের চেয়েও একটি বেশি! 

সপ্তদশ মিনিটে হাফ চান্স পায় স্পেন। ডি-বক্সের সামনে থেকে কোকের ফ্রি-কিক উড়ে যায় ক্রসবারের ওপর দিয়ে। ২৫তম মিনিটে আতলেতিকো মাদ্রিদের এই মিডফিল্ডারের কর্নারে সেসার আসপিলিকুয়েতার হেড ঠেকান গোলরক্ষক।

সুযোগ পেলেই পাল্টা আক্রমণে ওঠার চেষ্টায় ছিল সুইজারল্যান্ড। তবে প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের তেমন পরীক্ষা নিতে পারেনি তারা। এই সময়ে তাদের একটি শটও ছিল না লক্ষ্যে।

৫৬তম মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পায় সুইসরা। কর্নারে জাকারিয়ার হেডে পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে যায় বল। একটু পর আরেকটি সুযোগ আসে তাদের সামনে। ভার্গাস বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পাস দেন স্টিভেন সুবারকে। কাছ থেকে তার ফ্লিক কর্নারের বিনিময়ে ফেরান সিমোন।

৬৮তম মিনিটে সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড। এই গোলে যথেষ্ট দায় আছে স্পেনের রক্ষণভাগের। ডি-বক্সের কাছে এমেরিক লাপোর্ত ও পাও তরেস তালগোল পাকিয়ে বল হারান। রেমো ফ্রয়লারের পাসে জেরদান সাচিরির শট পোস্টের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। আসরে লিভারপুল মিডফিল্ডারের এটি তৃতীয় গোল।

৭৭তম মিনিটে বড় ধাক্কা খায় সুইসরা। মরেনোকে ফাউল করে সরাসরি লাল কার্ড দেখেন ফ্রয়লার। রেফারির সিদ্ধান্ত টিকে যায় ভিএআরেও। যদিও সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ আছে যথেষ্ট।

শক্তিশালী দলের বিপক্ষে এক জন কম নিয়েও নজরকাড়া ফুটবল খেলে সুইজারল্যান্ড। তাদের কার্যকর রক্ষণাত্মক কৌশল প্রশংসার দাবি রাখে। আর তার পেছনে চীনের প্রাচীর হয়ে ছিলেন সমের।

অতিরিক্ত সময়ের শুরুতেই দারুণ একটি সুযোগ পান মরেনো। আলবার ক্রসে কাছ থেকে বাইরে দিয়ে মেরে হতাশ করেন তিনি। একটু পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে আলবার শট এক হাতে ক্রসবারের ওপর দিয়ে পাঠান গোলরক্ষক।

১০২তম মিনিটে দুর্দান্ত সেভে সুইজারল্যান্ডের ত্রাতা সমের। কাছ থেকে মরেনোর ভলি ফিরিয়ে দেন ম্যাচজুড়ে দুর্দান্ত খেলা বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের এই গোলরক্ষক। পরের মিনিটে ওইয়ারসাবালের শটও ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি।

বাকি সময়েও চাপ ধরে রাখে স্পেন। ১১০তম মিনিটে ডি-বক্সে মার্কোস ইয়োরেন্তের শট দারুণ স্লাইডে ঠেকান ডিফেন্ডার রদ্রিগেস। ১১৬তম মিনিটে বুসকেতসের হেড যায় গোলরক্ষক বরাবর। 

স্প্যানিশদের ঠেকিয়ে রেখে ম্যাচ টাইব্রেকারে নিলেও সেখানে নিজেদের মেলে ধরতে পারল না সুইসরা। 

অনেক কষ্টে প্রত্যাশিত জয় মিললেও স্পেনের সুযোগ নষ্টের মিছিল সামনের পথচলায় বিপদ ডেকে আনতে পারে। পুরো ম্যাচে ৭২ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের জন্য ২৮টি শট নেয় তারা, যার ১০টি লক্ষ্যে। সেখানে গোল মাত্র একটি, তাও আবার প্রতিপক্ষের ভুলে।

কোচ এনরিকে এর সমাধান খুঁজে বের করতে না পারলে দলটির দুর্ভাবনার কারণ আছে যথেষ্ট। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে আগামী মঙ্গলবার সেমি-ফাইনালে বেলজিয়াম অথবা ইতালির মুখোমুখি হবে স্পেন।