জার্মানিকে হারিয়ে কোয়ার্টার-ফাইনালে ইংল্যান্ড

দুই দলের ডিফেন্ডারদের দৃঢ়তায় কেটে গেল ম্যাচের অনেকটা সময়। গোলের দেখা আর মেলে না। অবশেষে পথ খুঁজে পেলেন রাহিম স্টার্লিং। বাঁধ ভেঙে গেল জার্মানির। দুর্দান্ত জয়ে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠে গেল ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 June 2021, 05:54 PM
Updated : 29 June 2021, 10:15 PM

লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার শেষ ষোলোর ম্যাচে ২-০ গোলে জিতেছে ইংল্যান্ড। স্টার্লিং দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হ্যারি কেইন।

বড় মঞ্চে জার্মানি সামনে পড়লেই যেন পথ ভুলে যায় ইংল্যান্ড-অন্তত গত কয়েক দশকে মেজর টুর্নামেন্টে নকআউট পর্বে দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের গল্পটা ছিল এমনই। ১৯৬৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে জেতার পর ১৯৯০ বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল ও ১৯৯৬ ইউরোর সেমি-ফাইনালে টাইব্রেকারে হেরেছিল ইংল্যান্ড। পরে ২০১০ বিশ্বকাপে জার্মানির বিপক্ষে উড়ে যায় শেষ ষোলোয়।

৫৫ বছর পর অবশেষে কোনো মেজর টুর্নামেন্টের নকআউট পর্বে জার্মানিকে হারাতে পারল ইংল্যান্ড।

পুরো ম্যাচে বল দখলে একটু পিছিয়ে থাকা ইংল্যান্ড আক্রমণেও ছিল কিছুটা পিছিয়ে। তবে কার্যকারিতার দিক থেকে এগিয়ে ছিল তারাই; তাদের পাঁচ শটের চারটিই ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে জার্মানির ৯ শটের তিনটি লক্ষ্যে থাকে।

গোলের পর হ্যারি কেইনের উল্লাস।

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে চলে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ। তবে বিরতির আগে নিশ্চিত সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কেউ। গ্রুপ পর্বে তিন ম্যাচেই জাল অক্ষত রাখা ইংল্যান্ডের রক্ষণ এদিনও ছিল জমাট। প্রথম তিন ম্যাচে পাঁচ গোল হজম করা জার্মানির রক্ষণভাগের প্রথমার্ধের পারফরম্যান্সও ছিল দারুণ।

৩০তম মিনিটে ডান দিক থেকে ইয়াসুয়া কিমিখ দূরের পোস্টে দারুণ ক্রস বাড়িয়েছিলেন; কিন্তু জায়গামতো পৌঁছাতেই পারেননি রবিন গোজেন্স। দুই মিনিট পর সতীর্থের বাড়ানো বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন টিমো ভেরনার; কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি সুযোগ। সময়মতো এগিয়ে গিয়ে রুখে দেন গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড।

বিরতির ঠিক আগে মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের ভুলে বল পেয়ে আক্রমণে ওঠেন স্টার্লিং। ডি-বক্সের মুখে ডিফেন্ডারদের বাধায় যদিও পড়ে যান তিনি, কিন্তু বল পেয়ে যান ফাঁকায় দাঁড়ানো কেইন। তবে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি রাশিয়া বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৬ গোল করা এই স্ট্রাইকার।

দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে দূর থেকে বুলেট গতির শটে পিকফোর্ডের পরীক্ষা নেন কাই হাভার্টজ। দারুণ দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক।

৭৫তম মিনিটে দারুণ গোছালো এক আক্রমণে জার্মান রক্ষণ ভেঙে দেয় ইংল্যান্ড। আক্রমণের শুরুটা হয় গোলদাতা স্টার্লিংয়ের পায়েই। তিনি কেইনকে বল বাড়িয়ে দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন। এর ফাঁকে কেইন ও জ্যাক গ্রিলিশ হয়ে বাঁ দিকে বল পেয়ে গোলমুখে ক্রস বাড়ান লুক শ। আর গোলমুখে সাইড-ফুট শটে বল জালে পাঠান ম্যানচেস্টার সিটি মিডফিল্ডার স্টার্লিং।

এই গোলে কিছুটা দায় আছে মাটস হুমেলসের। কেইন বল রিসিভ করার সময় তার পাশেই ছিলেন তিনি, কিন্তু চ্যালেঞ্জ জানানোর চেষ্টাই করেননি অভিজ্ঞ এই ডিফেন্ডার। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে তার আত্মঘাতী গোলেই হেরেছিল জার্মানি।

গোলের সহজ সুযোগ হাতছাড়ার পর হতাশ জার্মান ফরোয়ার্ড টমাস মুলার।

খানিক বাদেই নায়ক থেকে খলনায়ক হতে বসেছিলেন স্টার্লিং। তার ভুলে বল পেয়ে হাভার্টজ বাড়ান সামনে মুলারকে। দ্রুত এগিয়ে যাওয়া বায়ার্ন মিউনিখ ফরোয়ার্ড গোলরক্ষককে একাও পেয়েছিলেন; কিন্তু লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নিয়ে হতাশ করেন মুলার।

এরপরই ৮৬তম মিনিটে ব্যবধান বাড়িয়ে জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন কেইন। বুকায়ো সাকার বদলি গ্রিলিশের দারুণ ক্রসে হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক। জার্মান বাধা টপকে শেষ আটে ওঠার উল্লাসে ফেটে পড়ে পুরো ওয়েম্বলি।

সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে গ্যারেথ সাউথগেটের দল মুখোমুখি হবে সুইডেন ও ইউক্রেনের মধ্যে বিজয়ীর বিপক্ষে।

ইউরোয় জার্মানির বিদায়ের সঙ্গেই দলটির সঙ্গে দীর্ঘ ১৫ বছরের পথচলা শেষ হলো বিশ্বকাপ জয়ী কোচ ইওয়াখিম লুভের। হান্স ফ্লিকের কোচিংয়ে নতুন যাত্রা শুরু করবে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।