রুমানিয়ার বুখারেস্টে সোমবার রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে পেনাল্টি শুট আউটে ৫-৪ এ জিতেছে সুইজারল্যান্ড। নির্ধারিত সময় ৩-৩ এর পর অতিরিক্ত সময়ও ওই স্কোরলাইনে শেষ হয়।
ম্যাচের আগে এমন ফল কে ভেবেছিল? একদিকে বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স, ইউরোপেরও দুবারের চ্যাম্পিয়ন তারা। মৃত্যুকূপ নামের ‘এফ’ গ্রুপের সেরা দলও তারাই। তারকায় ভরা এক স্কোয়াড নিয়ে তিন ফেভারিটের একটি হয়েই আসর শুরু করেছিল দলটি।
অন্যদিকে, চার সেরা তৃতীয় দলের একটি হয়ে নকআউট পর্বে পা রাখে সুইজারল্যান্ড। সেই দলটিই দিনশেষে অবিশ্বাস্য এক গল্পের জন্ম দিল।
৬৭ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো মেজর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠল সুইজারল্যান্ড। ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে শেষ আটে খেলেছিল তারা। আর ইউরোর হিসেবে এবারই প্রথম। অবশ্য এবারই প্রথম নকআউট পর্বের প্রথম ধাপ পেরুল দলটি।
তবে, টাইব্রেকারে সব আলো কেড়ে নেন সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সমের। সুইজারল্যান্ড তাদের প্রথম পাঁচ শটের সবকটিতেই সফল, ফ্রান্স সফল প্রথম চারটিতে। তাদের শেষ শট নিতে আসেন বিশ্বকাপ জয়ী এমবাপে। তার শটটিই ঠেকিয়ে দলকে উৎসবের উপলক্ষ এনে দেন সমের।
গ্রুপের শেষ রাউন্ডে পর্তুগালের বিপক্ষে জোড়া গোল করা বেনজেমা ষষ্ঠ মিনিটেই দলকে এগিয়ে নিতে পারতেন। বাঁ দিক থেকে গ্রিজমানের দারুণ ক্রস ডি-বক্সে খুঁজে পায় তাকে; কিন্তু বল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেননি রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
সাবেক ইউরো চ্যাম্পিয়নদের হতবাক করে প্রথম আক্রমণেই এগিয়ে যায় সুইজারল্যান্ড। পঞ্চদশ মিনিটে বাঁ থেকে স্টিভেন জুবেরের দারুণ ক্রস ডি-বক্সে পেয়ে লাফিয়ে হেডে বল জালে পাঠান সেফেরোভিচ। সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডার ক্লেঁমো লংলে প্রতিহত করার কোনো চেষ্টাই করেননি।
প্রথমার্ধে ফ্রান্সের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। বল দখলে কিছুটা এগিয়েও ছিল বটে, আক্রমণও করেছে; তবে গোলের উদ্দেশে নেওয়া তাদের ছয় শটের একটিও ছিল না লক্ষ্যে।
প্রথম ৪৫ মিনিটে ফ্রান্সের আক্রমণভাগের একমাত্র উজ্জ্বল নাম গ্রিজমান। ৪৭তম মিনিটে অনেক দূর থেকে তার নেওয়া শট পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়।
পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের লাইনে জুবেরকে ডিফেন্ডার বাঁজামাঁ পাভার্দ ফাউল করলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। কিন্তু ফরাসিদের ওপর চাপ বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগটা নষ্ট করেন রিকার্দো রদ্রিগেস; তার দুর্বল স্পট কিক ঠেকিয়ে দেন উগো লরিস।
এরপরই জেগে ওঠে ফ্রান্সের আক্রমণভাগ। দুই মিনিটে বেনজেমার দুই গোলে এগিয়ে যায় গতবারের রানার্সআপরা। ৫৭তম মিনিটে এমবাপের ডি-বক্সের মুখে বাড়ানো বল সামনে ঝুঁকে থাকা বেনজেমার পেছনে ছিল। অসাধারণ দক্ষতায় বাঁ পায়ের ফ্লিকে বল সামনে টেনে নেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা, আর দ্বিতীয় টোকায় খুঁজে নেন ঠিকানা।
৭৫তম মিনিটে অনেক দূর থেকে স্কোরলাইন ৩-১ করেন পগবা। তার জোরালো শটে বল ক্রসবার ঘেঁষে জালে জড়ায়। ইউরোর ইতিহাসে পিছিয়ে বিরতিতে গিয়েও সবচেয়ে বেশি জয়ের দেখা পাওয়া দল ফ্রান্স, চারটি। সংখ্যাটা বাড়ার পথেই ছিল। কিন্তু শেষ দিকে বদলে যায় সবকিছু।
৮১তম মিনিটে কেভিনের দারুণ ক্রসে আবারও হেডে ব্যবধান কমান সেফেরোভিচ। আর নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে স্কোরলাইন ৩-৩ করেন গাভরানোভিচ।
চার মিনিট যোগ করা সময়ের শেষ ৩০ সেকেন্ডে দুই দলই পেয়েছিল জয় ছিনিয়ে নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু পারেনি কেউ। ওয়ান-অন-ওয়ানে সুইসদের প্রচেষ্টা রুখে দেন লরিস আর কিংসলে কোমানের শট লাগে ক্রসবারে।
১১০তম মিনিটে দলকে আবারও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পান এমবাপে। কিন্তু ডি-বক্সে দারুণ পজিশনে বল পেয়েও পাশের জালে মারেন পিএসজি ফরোয়ার্ড। পুরো টুর্নামেন্টে এটাই হয়ে রইলো তার রূপ। খানিক পর হতাশ করেন বেনজেমার বদলি নামা অলিভিয়ে জিরুদ। শেষের আগের মিনিটে চেলসি ফরোয়ার্ডের হেড ঠেকিয়ে ম্যাচ টাইব্রেকারে নেন সমের।
দ্বিতীয়ার্ধ জুড়ে দাপুটে ফুটবল খেলেও এভাবে বিদায় নেওয়াটা হয়তো ফরাসিদের কষ্ট বাড়িয়ে দিচ্ছে বহুগুণে। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে গোলের উদ্দেশে মোট ২৬টি শট নেয় তারা, যার আটটি ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে, সুইসদের ১২ শটের পাঁচটি লক্ষ্যে।
অবশ্য পরিসংখ্যানের এসব হিসেবে কী যায় আসে, কোয়ার্টার-ফাইনালের টিকেট তো তাদের হাতেই। যেখানে তাদের অপেক্ষায় স্পেন। এ রাতেই প্রথম ম্যাচে যারা আট গোলের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে হারিয়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়াকে।