কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে সোমবার শেষ ষোলোর ম্যাচে ৫-৩ গোলে জিতেছে প্রতিযোগিতাটির তিনবারের চ্যাম্পিয়নরা। নির্ধারিত সময়ে স্কোরলাইন ছিল ৩-৩।
স্পানিশদের হয়ে একটি করে গোল করেন পাবলো সারাবিয়া, সেসার আসপিলিকুয়েতা, ফেররান তরেস, আলভারো মোরাতা ও মিকেল ওইয়ারসাবাল। ক্রোয়াটদের দুই গোলদাতা মিসলাভ ওরসিচ ও মারিও পাসালিচ, অন্যটি আত্মঘাতী।
ইউরোর ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৮) গোলের ম্যাচ এটি। সর্বোচ্চ গোল ৯টি, ১৯৬০ আসরের সেমি-ফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-৪ ব্যবধানে হারিয়েছিল তৎকালীন যুগোস্লাভিয়া।
পুরো ম্যাচে বল দখল ও আক্রমণে আধিপত্য করা স্পেন গোলে শট নেয় ২৩টি। ১০টি ছিল লক্ষ্যে। ক্রোয়েশিয়ার ১২ শটের ৭টি লক্ষ্যে ছিল।
শুরু থেকে গত বিশ্বকাপের রানার্সআপদের চেপে ধরে স্পেন। দ্বিতীয় মিনিটে হোসে গায়ার উদ্দেশে দারুণ ক্রস বাড়ান সের্হিও বুসকেতস। সময়মতো এগিয়ে এসে বল ধরে ফেলেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক।
২০তম মিনিটে মারাত্মক ভুলটা করে বসেন সিমোন। প্রায় মাঝমাঠ থেকে তাকে ব্যাকপাস দিয়েছিলেন পেদ্রি। আশেপাশে প্রতিপক্ষের কোনো খেলোয়াড় ছিল না, ছিল না কোনো চাপ। একটু বাঁক খেয়ে এক ড্রপে আসা বল ডান পায়ে রিসিভ করতে যান খানিকটা এগিয়ে থাকা সিমোন, বল তার বুটের ওপরে হালকা ছোঁয়া দিয়ে গড়িয়ে চলে যায় গোললাইন পেরিয়ে!
ইউরোর এক আসরে সর্বোচ্চ আত্মঘাতী গোলের রেকর্ড বেড়ে দাঁড়াল ৯টিতে।
৩৮তম মিনিটে সমতায় ফেরে স্প্যানিশরা। ডি-বক্সে গায়ার শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান লিভাকোভিচ, কিন্তু বিপদমুক্ত করতে পারেননি। ১০ গজ দূর থেকে জোরালো শটে ঠিকানা খুঁজে নেন পিএসজির মিডফিল্ডার সারাবিয়া।
৫৭তম মিনিটে এগিয়ে যায় এনরিকের দল। বাঁ দিক থেকে ফেররান তরেসের দারুণ ক্রসে ছয় গজ বক্সে লাফিয়ে হেডে বল জালে পাঠান চেলসি ডিফেন্ডার আসপিলিকুয়েতা।
তখন সহজ জয়ের পথেই ছিল স্পেন। কিন্তু শেষের কয়েক মিনিটে পাল্টে যায় চিত্র।
নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মিনিট বাকি থাকতে ব্যবধান কমান দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা ওরসিচ। জটলার ভেতর তার শট আসপিলিকুয়েতা ফিরিয়েছিলেন বটে, তবে তার আগেই বল গোললাইন পেরিয়ে গিয়েছিল। আর পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে সতীর্থের ক্রসে হেডে সমতা ফেরান পাসালিচ।
অতিরিক্ত সময়ে শুরুতেই একটি সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। ডি-বক্সের মাথা থেকে ওরসিচের শট ক্রসবারের সামান্য ওপর দিয়ে যায়। একটু পর কাছ থেকে আনদ্রেই ক্রামারিচের শট ফিরিয়ে স্পেনের ত্রাতা সিমোন।
শততম মিনিটে চমৎকার এক গোলে স্পেনকে এগিয়ে নেন মোরাতা। ডান দিক থেকে দানি ওলমোর ক্রস ডি-বক্সে প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বুলেট গতির শটে জাল খুঁজে নেন ইউভেন্তুস ফরোয়ার্ড। আগের ম্যাচগুলোয় সুযোগ নষ্টের পাশাপাশি একটি পেনাল্টি মিস করে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি।
দুই মিনিট পরই স্কোরলাইন ৫-৩ করেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা ওইয়ারসাবাল। ওলমোর ক্রসে কাছ থেকে গোলটি করেন রিয়াল সোসিয়েদাদের এই ফরোয়ার্ড।
১০৬তম মিনিটে ব্যবধান কমানোর ভালো একটি সুযোগ পান ক্রোয়েশিয়ার আন্তে বুদিমির। কিন্তু ওয়ান-অন-ওয়ানে বাইরে মেরে হতাশ করেন তিনি।
গ্রুপ পর্বে প্রথম দুই ম্যাচে স্পেনের পারফরম্যান্স ভালো ছিল না। সুইডেনের সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ের পর পোল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ সমতায় শেষ করে ম্যাচ। তবে শেষ রাউন্ডে স্লোভাকিয়াকে ৫-০ গোলে উড়িয়ে ছন্দে ফেরে তারা। পাঁচ গোল করল পরের ম্যাচেও। প্রথম দল হিসেবে ইউরোয় টানা দুই ম্যাচে পাঁচ বা এর বেশি গোল করার কীর্তি গড়ল স্পেন।
সেমি-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্স অথবা সুইজারল্যান্ডের মুখোমুখি হবে স্প্যানিশরা।