স্লোভাকিয়াকে কাঁদিয়ে নকআউট পর্বে স্পেন

তৃতীয় ম্যাচে এসে যেন হারানো ছন্দ ফিরে পেল স্পেন। কয়েকটি সহজ সুযোগ নষ্টের পর প্রতিপক্ষের ভুলে মিলল পথ। স্লোভাকিয়ার জালে গোল উৎসব করে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের নকআউট পর্বে উঠল লুইস এনরিকের দল।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2021, 05:55 PM
Updated : 23 June 2021, 07:17 PM

সেভিয়ার লা কার্তুহায় বুধবার রাতে ‘ই’ গ্রুপের শেষ রাউন্ডে ৫-০ গোলে জিতেছে স্পেন। স্লোভাকিয়ার শুরু ও শেষের দুই আত্মঘাতী গোলের মাঝে জালে বল পাঠান এমেরিক লাপোর্ত, পাবলো সারাবিয়া ও ফেররান তরেস।

একই সময়ে শুরু অন্য ম্যাচে পোল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে শীর্ষে সুইডেন। তাদের পয়েন্ট ৭। প্রথম দুই ম্যাচে ড্র করা স্পেন ৫ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ।

দ্বিতীয় স্থানে থেকে শেষ রাউন্ড শুরু করা স্লোভাকিয়া ৩ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে। তবে গোল ব্যবধানে অনেক পিছিয়ে পড়ায় চার তৃতীয় দলের একটি হয়ে পরের ধাপে খেলার আশা শেষ তাদের। সবার নিচে পোলিশদের পয়েন্ট ১।

প্রথম দুই ম্যাচে অনেক সুযোগ নষ্ট করে সমালোচনার মুখে পড়া আলভারো মোরাতা এদিন শুরুতেই দলকে এগিয়ে নিতে পারতেন। উল্টো দুর্বল স্পট কিকে সুযোগটা নষ্ট করেন। ডি-বক্সে কোকে ফাউলের শিকার হলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ইউভেন্তুস ফরোয়ার্ডের শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক মার্তিন দুবব্রাউকা।

ইউরোয় এই নিয়ে ১২টি পেনাল্টি পেয়ে সাতটিতেই গোল করতে ব্যর্থ হলো স্প্যানিশরা।

দ্বিতীয় রাউন্ডে পোল্যান্ডের বিপক্ষে ১-১ ড্র ম্যাচেও পেনাল্টি মিস করেছিল দলটি, ব্যর্থ হয়েছিলেন জেরার্দ মরেনো। ইউরোর ইতিহাসে (টাইব্রেকার বাদে) প্রথম দল হিসেবে গ্রুপ পর্বে দুটি এবং নেদারল্যান্ডসের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে আসরে দুটি পেনাল্টি মিস করল স্পেন। ২০০০ ইউরোয় দুটি স্পট কিকে গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিল ডাচরা।

১৯ ও ২০তম মিনিটে আরও দুটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয় স্পেনের। গোলমুখে বলে পা লাগাতেই ব্যর্থ হন পেদ্রি ও পাবলো সারাবিয়া। চার মিনিট পর দারুণ পজিশনে ক্রস পেয়ে বলে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি মোরাতা।

এরপরই দুবব্রাউকার হাস্যকর আত্মঘাতী গোল। প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে সারাবিয়ার জোরালো শট ক্রসবারে লেগে ওপরে উঠে যায়। নেমে আসা বল ধরার বদলে পাঞ্চ করে ক্রসবারের ওপর দিয়ে বাইরে পাঠাতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টাইমিংয়ে হয়ে যায় বড় গড়মিল, বল চলে যায় জালে।

ইউরোর ইতিহাসে প্রথম গোলরক্ষক হিসেবে একই ম্যাচে পেনাল্টি সেভ ও আত্মঘাতী গোল করলেন দুবব্রাউকা।

বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফ্রান্সের বয়সভিত্তিক দলে খেলার পর গত মাসেই স্পেনের হয়ে খেলার অনুমতি পাওয়া লাপোর্ত। এই গোলেও কিছুটা দায় আছে দুবব্রাউকার। স্লোভাকিয়ার ডিফেন্ডাররা একটি কর্নার ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে পেদ্রির পা হয়ে ডান দিকের বাইলাইনের কাছে বল পান মরেনো। তার দিকে বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়েই ভুলটা করে বসেন গোলরক্ষক, ফলে মরেনোর গোলমুখে বাড়ানো বলে লাপোর্তের হেড ঠেকানোর তেমন সুযোগই পাননি তিনি। 

দ্বিতীয়ার্ধের একাদশ মিনিটে বাঁ থেকে জর্দি আলবার পাস ডি-বক্সে মাঝ বরাবর পেয়ে নিখুঁত শটে ব্যবধান আরও বাড়ান সারাবিয়া। ৬৭তম মিনিটে আগের গোলদাতার ছয় গজ বক্সে বাড়ানো বল দারুণ ফ্লিকে স্কোরলাইন ৪-০ করেন তরেস। আগের মিনিটে মোরাতার বদলি নেমে এটাই ছিল বলে তার প্রথম ছোঁয়া।

আর ৭১তম মিনিটে জটলার মধ্যে গোলমুখে বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে নিজেদের জালে ঠেলে দেন সফরকারী মিডফিল্ডার কুচকা। বাকি সময়েও চাপ ধরে রেখে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া জয়ের আনন্দে মাঠ ছাড়ে স্পেন।

পুরো ম্যাচে দুই-তৃতীয়াংশ সময় বল দখলে রেখে ১৯টি শট নেয় স্পেন, যার ৯টি ছিল লক্ষ্যে। নিশ্চিত সুযোগগুলো নষ্ট না হলে ব্যবধান হতে পারতো আরও বড়।

তবে কোচ এনরিকের ভাবনায় নিশ্চিতভাবেই সেসব আর নেই। শেষ ষোলোর টিকেট মেলায় এবং ঠিক সময়ে দল ছন্দে ফেরাটাই স্বস্তির।

এখন দৃষ্টি দিতে হবে সামনে; আগামী সোমবার কোপেনহেগেনের পারকেন স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন।