‘রামোসের মতো কেউ আসবে না’
স্পোর্টস ডেস্ক, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 18 Jun 2021 02:20 AM BdST Updated: 18 Jun 2021 03:04 AM BdST
-
সের্হিও রামোস
-
রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেসের সঙ্গে সের্হিও রামোস। ছবি: রিয়াল মাদ্রিদ
-
রিয়াল মাদ্রিদ সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেসের সঙ্গে পরিবারসহ সের্হিও রামোস। ছবি: রিয়াল মাদ্রিদ
-
১৯ বছর বয়সে রিয়াল মাদ্রিদে পা রাখা সের্হিও রামোস সময়ের পরিক্রমায় হয়ে উঠেছেন সেরা ডিফেন্ডারদের একজন। দলকে ভুরিভুরি সাফল্যে নেতৃত্ব দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ক্লাবের ইতিহাসে সেরা অধিনায়কদের একজন হিসেবে। জিতেছেন সম্ভাব্য প্রায় সবকিছু। জন্ম দিয়েছেন স্মরণীয় কত না মুহূর্তের। দীর্ঘ ১৬ বছরের সাফল্যে মোড়া পথচলা শেষে প্রিয় ক্লাবকে বিদায় বলে দিয়েছেন এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। শেষ হয়েছে ইউরোপের সফলতম ক্লাবটিতে বর্ণাঢ্য রামোস-অধ্যায়ের।
Related Stories
স্প্যানিশ রেডিও কাদেনা সের-এ ফুটবল বিশ্লেষক আলভারো বেনিতো বললেন, রামোসের মতো আর কাউকে পাবে না রিয়াল।
“রিয়াল মাদ্রিদের একটি যুগের সমাপ্তি ঘটল। যতবার এমন মাপের খেলোয়াড় চলে যায় ততবারই একটি চক্রের পরিবর্তন ঘটে। যেই আসবে, সে রামোসের মানের হবে না।”
ঘোষণাটা আসে বুধবার দিন রাতে। পরদিন অশ্রুসিক্ত চোখে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয় আঙিনাকে বিদায় বলেন ৩৫ বছর বয়সী এই ফুটবলার।
“আমার জীবনের কঠিনতম মুহূর্তগুলোর একটি এসে গেছে। এসেছে রিয়াল মাদ্রিদকে বিদায় বলার সময়। বাবার হাত ধরে আমি এখানে এসেছিলাম…(এরপর চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি)। আবেগাক্রান্ত না হওয়াটা অসম্ভব। সান্তিয়াগো বের্নাবেউ থেকে বিদায় নিতে পারলে ভালো লাগত।”
আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ৩০ জুন শেষ হবে রিয়ালের সঙ্গে রামোসের চুক্তির মেয়াদ। ১০ শতাংশ বেতন কমানোসহ তাকে এক বছরের চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল ক্লাব। তিনি চেয়েছিলেন দুই বছর। শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক বছরের চুক্তিতেই রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তখন ক্লাব থেকে তাকে জানানো হয় অনেক দেরি হয়ে গেছে।
এখন ফ্রি ট্রান্সফারে যেকোনো ক্লাবে যোগ দিতে পারবেন তিনি। সময়টা তার পক্ষে না থাকলেও আধুনিক ফুটবলের সেরা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের একজন হয়ে ওঠা রামোসকে দলে নিতে আগ্রহী ক্লাবের অভাব হওয়ার কথা নয়।

তবে তার এমন বিদায় মানতে পারছেন না দলটির আরেক সাবেক স্ট্রাইকার ইভান জামোরানো।
“এমন বিদায় রামোসের প্রাপ্য নয়। সে ক্লাবের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক। আজ ক্লাব তাকে ধরে রাখার কোনো চেষ্টা করেনি।”
২০০৫ সালে শৈশবের ক্লাব সেভিয়া থেকে দুই কোটি ৭০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে রিয়ালে যোগ দেন রামোস। ওই সময়ে যা কোনো স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের জন্য রেকর্ড ট্রান্সফার ফি।
রিয়ালে নিজেকে চিনিয়েছেন তিনি আলাদা করে। মাঠে নিজেকে নিংড়ে দেওয়া আর অসাধারণ নেতৃত্বগুণে ১৬ বছর ধরে প্রায় সবকিছুই জিতিয়েছেন দলকে।
@SergioRamos x GOALS!#GraciasSergio pic.twitter.com/zM3dEDLOOc
— Real Madrid C.F. (@realmadriden) June 17, 2021
২০১৫ সালে রিয়াল ছাড়ার প্রায় কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন রামোস। আলোচনা এগিয়েছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে। তবে শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ওই বছরই ইকের কাসিয়াস ক্লাব ছাড়ার পর দায়িত্ব পান অধিনায়কের।
এর আগের মৌসুমে চাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে তিনি জন্ম দেন স্মরণীয় এক মুহূর্তের। নির্ধারিত সময় শেষের পর যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে শিরোপার সুবাস পাচ্ছিল নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী আতলেতিকো মাদ্রিদ। পরের মিনিটেই দারুণ হেডে রিয়ালকে সমতায় ফেরান রামোস। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যেখানে ৪-১ গোলে জিতে প্রতিযোগিতাটিতে রিয়াল জিতেছিল নিজেদের দশম শিরোপা, যা পরিচিতি পায় ‘লা দেসিমা’ নামে।

এরপর তার নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়ে রিয়াল। ২০১৬ সালের ফাইনাল রামোস আবার গোল করেন সেই আতলেতিকোর বিপক্ষেই। পরে জালের দেখা পান টাইব্রেকারেও।
রামোসের অন্য রূপ
প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে ফাউল করার ক্ষেত্রেও কম যান না রামোস। যার সাক্ষ্য দিচ্ছে রিয়ালের হয়ে তার ২৬ লাল কার্ড।
সেগুলোও যে দলের জয়ে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তার উদাহরণ মেলে ২০১৬ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে আতলেতিকোর পাল্টা আক্রমণ আটকাতে অঁতোয়ান গ্রিজমানকে তার করা মারাত্মক ফাউল। এতে যেমন তার খেলার নির্মম দিকটি ফুটে ওঠে, তেমনি তাকে করে তোলে দলটির সোনালী সময়ের কার্যকর তারকা।
২০১৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে লিভারপুলের মোহামেদ সালাহর চোট পাওয়ার ঘটনায়ও জড়িয়ে ছিল রামোসের নাম। ম্যাচটির প্রথমার্ধে তার সঙ্গেই বল দখলের লড়াইয়ে চোট পান লিভারপুলের সবচেয়ে বড় ভরসা সালাহ। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে মাঠে নামলেও ঘাড়ে গুরুতর আঘাতের কারণে পরে আর খেলতে পারেননি মিশরীয় এই ফরোয়ার্ড। রিয়াল জেতে ৩-১ গোলে। আর লিভারপুল সমর্থকদের চক্ষুশূলে পরিণত হন রামোস।
২০১৯-২০ মৌসুমে রিয়ালের লা লিগা জয়ে তার ছিল বড় অবদান। যেখানে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো লিগে তার গোল সংখ্যা স্পর্শ করে দুই অঙ্ক (১১)।

এমনকি চোটের কারণে যখন মাঠের বাইরে ছিলেন, তখনও আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামের দর্শকশূন্য গ্যালারিতে বসে দলকে উৎসাহ জুগিয়েছেন রামোস। সান্তিয়াগো বের্নাবেউয়ে সংস্কার কাজ চলায় গত বছরের মাঝামাঝি থেকে হোম ম্যাচগুলো এই মাঠেই খেলছিল রিয়াল।
সামনে আবার নতুন রূপে গড়ে ওঠা বের্নাবেউয়ে খেলবে রিয়াল। কিন্তু সেখানে আর ফেরা হচ্ছে না রামোসের। বিদায় নেওয়া হচ্ছে না ক্লাবের সমর্থকদের কাছ থেকে, যারা তাকে গ্রেট রাউল গনসালেস, আলফ্রেদো দি স্তেফানো ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর মতোই ভালোবাসে।
২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত রিয়ালে রামোসের সঙ্গে খেলা মেসুত ওজিল তো তাকে বর্ণনা করলেন ক্লাবটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি হিসেবে।
“ক্লাব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কিংবদন্তি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে চলে যাচ্ছে। তোমার পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য শুভকামনা ভাই। এখনও মাদ্রিদে একসঙ্গে কাটানো আমাদের সময়গুলো মনে পড়ে।”
সর্বাধিক পঠিত
- স্বর্ণ উদ্ধার করে মাদকের মামলা: চাকরি গেল এসপি আলতাফের
- ফাইনালের আগে আবারও রিয়ালের হোঁচট
- কানের গালিচায় নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ
- নাঈমের বিকল্প ভাবনায় কয়েকজন
- মাঙ্কিপক্স নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
- ওভারে ৬ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৯ বলে ফিফটি মইনের
- চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চেয়েও তৃপ্তিদায়ক ইপিএলের শিরোপা!
- বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে ভ্যানে, প্রাণ গেল ২ জনের
- ‘গণকমিশনের' নামে বিশৃঙ্খলা করলে ব্যবস্থা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
- অবশিষ্ট যোদ্ধাদের আত্মসমর্পণ, শেষ হল ইস্পাত কারখানার অবরোধ