তারপরও এতদিনের আপন ঠিকানা ছেড়ে দেওয়ার কারণের প্রশ্নে রামোসের কণ্ঠে ধরা দিল খারাপ লাগার ছাপ। বললেন থাকতে তো চেয়েছিলাম!
“জীবনে অনেক কিছু হয়, অনেক ঘটনা ঘটে। প্রথমেই যেটা বলতে চাই, আমি কখনও রিয়াল মাদ্রিদ ছাড়তে চাইনি, সবসময় থাকতে চেয়েছিলাম।”
কয়েক মাস ধরেই জোর গুঞ্জন ছিল, রিয়ালে আর থাকবেন না রামোস। বৃহস্পতিবার রাতে রিয়ালের ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে সেটিই সত্যি প্রমাণিত হয়। পরদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সফল অধিনায়ককে বিদায় জানায় রিয়াল।
দীর্ঘ ১৬ বছরের সম্পর্কের ইতি টেনে প্রিয় ক্লাবকে বিদায় জানাতে গিয়ে কণ্ঠ ধরে আসে রামোসের। অনেক চেষ্টার পরও ধরে রাখতে পারেননি চোখের পানি।
বিদায়ী ওই অনুষ্ঠানেই ঘুরে ফিরে উঠল ছেড়ে যাওয়ার কারণ। স্প্যানিশ কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, রিয়াল ১০ শতাংশ বেতন কমিয়ে এক বছরের প্রস্তাবে দিয়েছিল এবং তাতে রাজি হননি রামোস। তিনি নাকি চেয়েছিলেন দুই বছরের চুক্তি। তবে আসল ঘটনা ছিল ভিন্ন।
“এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে গেলে ফিরে যেতে হবে (গত মৌসুমে) লকডাউন থেকে এসে আমাদের লা লিগা জয় ও উদযাপনের সময়। তারপর ক্লাব আমাকে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। তবে কোভিডের কারণে প্রক্রিয়াটি থেমে যায়।”
“গত কয়েক মাসে, ক্লাব আমাকে এক বছর মেয়াদ সঙ্গে বেতন কমানোর প্রস্তাব দেয়। অর্থ কখনোই সমস্যা ছিল না। সভাপতি জানতেন, আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি যে, অর্থ কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো চুক্তির মেয়াদ নিয়ে; তারা আমাকে এক বছর দিয়েছিল আর আমি দুই বছর চেয়েছিলাম। আমার পরিবারের একটা স্থিতিশীলতার দরকার ছিল।”
তবে পরে মত পাল্টেছিলেন রামোস। কিন্তু তখন ক্লাব আর তাকে চায়নি।
“শেষ আলোচনায় বলেছিলাম, আমি রাজি। কিন্তু তারা আমাকে বলে, ‘আমার জন্য আর কোনো প্রস্তাব নেই।’ আগের প্রস্তাবে আমি রাজি, এটা বলার পরও তারা আমাকে ওই কথা বলেছিল। আমাকে বলা হয়, যে প্রস্তাবটা দেওয়া হয়েছিল তার একটা মেয়াতোত্তীর্ণ তারিখ ছিল। কিন্তু আমি সেটি শুনিনি।”
রিয়াল সভাপতি পেরেস কি সরাসরি রামোসকে বলেছিলেন তাকে দেওয়া ওই প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে? ক্লাব ও সভাপতির সম্মানে এ বিষয়ে অবশ্য তেমন কিছু বলতে চাননি তিনি।
“কিছু বিষয় আছে ব্যক্তিগত, কিন্তু আমাকে আমার এজেন্টের (তার ভাই রেনে রামোস) মাধ্যমে জানানো হয়েছিল। আমরা অবাক হয়েছিলাম যে, আমাদের জানার আগেই প্রস্তাবের মেয়াদ শেষ হয়ে গেল। কোউ আমাকে কোনো আলটিমেটামও দেয়নি।”
“আমাদের মধ্যে আলোচনা চলছিল। আর যখন আমি জানালাম যে আমি আগের প্রস্তাবটা গ্রহণ করছি তখনই আমাকে ওই কথা বলা হলো। যাই হোক, কারো প্রতি আমার কোনো রাগ নেই।”
২০০৫ সালে শৈশবের ক্লাব সেভিয়া থেকে দুই কোটি ৭০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে রিয়ালে যোগ দিয়েছিলেন রামোস। ওই সময়ে যা কোনো স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের জন্য রেকর্ড ট্রান্সফার ফি।
পরে জিনেদিন জিদানের কোচিংয়ে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে রিয়াল। অভূতপূর্ব ওই কীর্তিতেও মূল নায়কদের একজন ছিলেন রামোস।
সব মিলিয়ে রিয়ালের হয়ে ৬৭১ ম্যাচে রামোসের গোল ১০১টি। তাদের হয়ে দীর্ঘ পথচলায় ৪টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ৪টি ক্লাব বিশ্বকাপ, ৫টি লা লিগাসহ তিনি জিতেছেন মোট ২২টি শিরোপা, পাকো গেন্তোর (২৩) পর যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এত এত অর্জন, এর মাঝেও কী কোনো আক্ষেপ আছে? রামোস বুঝিয়ে দিলেন নেই।
“সের্হিও রামোস ব্র্যান্ড কিনবে, তার সব দোষ-গুণ মিলিয়েই কিনতে হবে। আর আমি আমার আপনরূপেই থাকতে পছন্দ করি।”
ক্লাবের সঙ্গে এতদিনের পুরনো সম্পর্কের শেষটা ভালোভাবে না হলেও যেমন কোনো রাগ পুষে রাখেননি রামোস। তেমনি সভাপতি পেরেসের সঙ্গেও তার সম্পর্কটা আগের মতোই আছে, বললেন রামোস।
“প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অসাধারণ, বাবা ও ছেলের মতো। তার প্রতি আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব।”