ব্রাজিল: ভাবনায় বিশ্বকাপ রেখে কোপায় নজর

মঞ্চটা আপন ভুবন হলেই মুকুট ওঠে ব্রাজিলের মাথায়-কোপা আমেরিকার ইতিহাস তাই বলে। সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স এবং তুঙ্গে থাকা আত্মবিশ্বাস মিলিয়ে আসছে মহাদেশ সেরার লড়াইয়ে ফেভারিট তাদের বলাই যায়। তবে নানামুখী সমস্যায় ঘেরা ২০২১ অন্য সাধারণ বছরগুলোর মতো নয়, এবারের আসরটিকেও তাই মেলানো যাবে না অতীতের কোনোটির সঙ্গে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 June 2021, 05:43 PM
Updated : 11 June 2021, 12:44 PM

অপরাজিত দৌড়ে ২০১৯ আসরে শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখতেও দেরি হয়নি; ফাইনালে পেরুর বিপক্ষে জয়ের পর পথ হারিয়ে ফেলেছিল তিতের দল। পরের পাঁচ ম্যাচে ছিল জয়শূন্য, হার দুটি। মাস দুয়েকের সেই ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ওই বছরেরই নভেম্বরে জয়ের পথে ফেরে তারা।

কক্ষপথ ধরে ছুটবে কী, বিশ্ব জুড়ে আঘাত হানে করোনাভাইরাস মহামারী। দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে পরের বছর অক্টোরে বিশ্বকাপ বাছাই দিয়ে মাঠে ফেরে দল। মাঝে আরেকবার পড়ে বিরতি, তবে কোনোকিছুতেই আর পথ হারায়নি সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ছুটছে তারা চেনা ছন্দে।

টানা সাত জয়ের শেষ ছয়টি বিশ্বকাপ বাছাইয়ে, দক্ষিণ আমেরিকার একমাত্র দল হিসেবে বাছাইয়ে ছয় রাউন্ডের সবকটি জিতেছে তারা। এর পাঁচ ম্যাচেই তাদের জাল অক্ষত। সমস্যাও কিছু ছিল, মাঠের বাইরের বিতর্ক।

যে কারণে আর্জেন্টিনা থেকে এবারের কোপা আমেরিকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে সেই কোভিড-১৯ এর প্রকোপ ব্রাজিলে আরও বেশি। এমন দুরূহ পরিস্থিতিতে দেশে এই ফুটবল যজ্ঞ আয়োজনের সিদ্ধান্তে সরাসরিই কর্মকর্তাদের সমালোচনা করে খেলোয়াড়রা। গত এক সপ্তাহে বোর্ডের সঙ্গে দলের দুরত্বটাও অনেক স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

তবে মাঠের পারফরম্যান্সে তার কোনো প্রভাব পড়তে দেয়নি তারা। কদিনের দোলাচলের পর অবশেষে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয়ের পর কোপা আমেরিকায় খেলতে আপত্তি না থাকার কথা জানায় নেইমাররা।

খেলোয়াড়দের বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের প্রতিবাদ রাজনৈতিক নয় এবং তারা দেশের বাম-ডান মতাদর্শের দ্বন্দে পড়তে চায় না। গত কয়েক বছরে যা দেশটিতে অনেক আন্দোলনের জন্ম দিয়েছে, প্রতিবাদে মানুষজন রাস্তায় নেমেছে।

দুদিন বাদে ব্রাজিল-ভেনেজুয়েলা ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে এবারের কোপা আমেরিকা। এখন প্রশ্ন হলো, বোর্ডের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে যে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে তারা, তা কি দলটির একতাকে আরও মজবুত করবে নাকি ভাঙন ধরাবে?

দুই বছর আগের ওই আসরও ঘরের মাঠে খেলেছিল ব্রাজিল। টুর্নামেন্ট শুরুর দিন কয়েক আগে চোট পেয়ে ছিটকে পড়েন নেইমার। সেরা তারকাকে হারিয়ে ভেঙে না পড়ে নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল দলটি, মেলে সাফল্যও। কোয়ার্টার-ফাইনালে টাইব্রেকারে প্যারাগুয়েকে, সেমি-ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারায় তারা। আর শিরোপা লড়াইয়ে পেরুর বিপক্ষে জেতে ৩-১ গোলে।

এবার অবশ্য আছেন নেইমার এবং দারুণ ছন্দেই আছেন তিনি। তবে চোটে ছিটকে গেছেন গত আসরে দলকে শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দেওয়া অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার দানি আলভেস।

দলে তারকা বা অভিজ্ঞতার কমতি অবশ্য নেই। বরং কাকে বাদ দিয়ে কাকে নিবেন-মধুর সমস্যাতেই পড়তে হচ্ছে তিতেকে। দারুণ সব খেলোয়াড়দের ভিড়ে ম্যানচেস্টার সিটির গোলরক্ষক এদেরসন ও স্ট্রাইকার গাব্রিয়েল জেসুস এবং লিভারপুলের মিডফিল্ডার ফাবিনিয়ো ও স্ট্রাইকার রবের্তো ফিরমিনোদেরও একাদশে জায়গা পেতে ভীষণ লড়াই করতে হবে।

তাই সাম্প্রতিক কিছু বিতর্কিত ঘটনা ও সমস্যা দূরে রেখে দলটি যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে পারে, তাহলে তাদের দশম কোপা আমেরিকা জয়ে সম্ভাবনা বেড়ে যাবে অনেকটাই। ‘এ’ গ্রুপে তাদের অন্য তিন প্রতিপক্ষ কলম্বিয়া, একুয়েডর ও পেরু।

অনেকের মতে অবশ্য আসন্ন প্রতিযোগিতাটি ব্রাজিলের জন্য ২০২২ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির মঞ্চ। ২০০২ সালের পর আর বিশ্বসেরার মুকুট পরতে পারেনি তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপে শক্তিশালী স্কোয়াড নিয়েও কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ছিটকে পড়েছিল দলটি।

এবার যেকোনো মুল্যে ২০ বছরের খরা কাটিনোর পরিকল্পনা আঁটছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। টানা দ্বিতীয় মহাদেশ সেরার মুকুট জয় তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে বহুগুনে। এর চেয়েও বড় ব্যাপার, প্রমাণ হবে যে সঠিক পথে আছে দল।