তপুর গোলে আফগানিস্তানকে রুখে দিল বাংলাদেশ

রক্ষণের দৃঢ়তায় আফগানিস্তানকে প্রথমার্ধে আটকে রাখার স্বস্তি উড়ে গিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। শেষ দিকে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াল তপু বর্মনের দারুণ গোলে। বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে আফগানদের রুখে দিয়ে ফের পয়েন্ট পাওয়ার উচ্ছ্বাসে মাতল দল।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 June 2021, 03:05 PM
Updated : 3 June 2021, 04:40 PM

কাতারের দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১-১ ড্র করেছে বাংলাদেশ। আফগানদের কাছে ১-০ গোলে হেরে বাছাই শুরু করেছিল লাল-সবুজরা।

বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রুপে ৬ ম্যাচে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় ড্র। পয়েন্টও ২। সবশেষ ভারতের বিপক্ষে কলকাতার সল্টলেকে ড্র করে প্রথম পয়েন্ট পেয়েছিল জেমির দল।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশকে ‘হোম ম্যাচগুলো’ খেলতে হচ্ছে কাতারে। চেনা মাঠে খেলার সুযোগ হারালেও দোহায় পয়েন্ট পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল প্রবল। চোটের কারণে নির্ভরযোগ্য অনেককে হারালেও সে লক্ষ্য ঠিকই পূরণ করল দল।

এ ম্যাচে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে ফিনল্যান্ড প্রবাসী ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হানের। তার সঙ্গে রহমত মিয়া, তপু বর্মন ও রিয়াদুল হাসান রাফিকে দিয়ে রক্ষণভাগ সাজান জেমি। পাঁচ ফরোয়ার্ড নিয়ে সাজানো আফগানিস্তানের শক্তিশালী আক্রমণভাগের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষায় সফল রক্ষণভাগ।

বলের নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে থাকলেও প্রথম ভালো সুযোগটি পেয়েছিল বাংলাদেশ। ষোড়শ মিনিটে অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে বক্সে বল পান মাশুক মিয়া জনি। কিন্তু এই মিডফিল্ডারের আড়াআড়ি ক্রসে টোকা দেওয়ার মতো কেউ ছিল না গোলমুখে। অবশ্য জনির বল পেয়ে যাওয়ার পেছনে দায় আছে আফগানিস্তানের রক্ষণের বোঝাপড়ার ভুলেরও।

২০তম মিনিটে আফগানিস্তানের আমির শারিফির শট এক ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে কিছুটা দিক পাল্টালেও গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো পা দিয়ে আটকান। তিন মিনিট পর আহমেদ নাজেমের ক্রস দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় গ্লাভসে নেন জিকো।

২৭তম মিনিটে প্রথম কর্নার পায় বাংলাদেশ। জামালের নিচু কর্নার অনায়াসে বিপদমুক্ত করেন আফগানিস্তানের এক ডিফেন্ডার।

৩১তম মিনিটে আফগানিস্তান অধিনায়ক ফারশাদ নুরের কাছের পোস্টে নেওয়া শট কর্নারের বিনিময়ে ফেরান জিকো। প্রথম লেগে নুরের একমাত্র গোলে বাংলাদেশকে হারিয়েছিল আফগানিস্তান।

অভিষেকে দারুণভাবে রক্ষণ সামলানো তারিক ৩৭তম মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন। তবে সমতার স্বস্তি নিয়ে বিরতিতে যায় বাংলাদেশ।

তপু বর্মনের গোলেই হার এড়ায় বাংলাদেশ।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল হজম করে বসে বাংলাদেশ। আক্রমণ আটকাতে লেফট-ব্যাক রহমত মিয়া একটু উপরে উঠে এসেছিলেন। পেছনের ফাঁকা জায়গা পাহারায় রাখতে পারেননি বিপলু আহমেদ। সতীর্থের পাস ধরে নাজেমের কাট ব্যাকে আমিরের প্লেসিং শট দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেয়।

৫৫তম মিনিটে সোহেল রানার জায়গায় মিডফিল্ডার মানিক হোসেন মোল্লাকে নামান কোচ। তিন মিনিট পর রহমতের ক্রসে মতিন লাফিয়ে উঠলেও ঠিকঠাক হেড নিতে পারেননি।

৭২তম মিনিটে দুজন দুজন বদলি নামান কোচ। আক্রমণভাগের শক্তি বাড়াতে দুই মিডফিল্ডার জনি ও বিপলু আহমেদকে তুলে নিয়ে ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জুয়েল ও মেহেদী হাসান রয়েল নামান জেমি।

জাতীয় দলের জার্সিতে অভিষেক হলো জুয়েলেরও। তবে পুলিশ এফসির হয়ে লিগে তিন গোল করা এই তরুণ রাখতে পারেননি কোনো ছাপ। একটু পর রহমত ও রাকিব হোসেনের বদলি নামেন রিমন হোসেন এবং মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। দলের আক্রমণের গতি বাড়ে।

সমতায় ফেরার ভালো একটি সুযোগ বাংলাদেশের নষ্ট হয় ৮০তম মিনিটে। মানিক মোল্লার লম্বা পাস ধরে আব্দুল্লাহর কিছুটা দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট গোলরক্ষক ওয়াইস আজিজির পায়ে লেগে বাইরে যায়।

চার মিনিট পর রাফির হেড বুক দিয়ে নামিয়ে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে শরীরটা ঘুরিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন তপু। সমতার উচ্ছ্বাসে মাতে বাংলাদেশের ডাগআউট। চলতি বাছাইয়ে দলের তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে গোল পেলেন তপু। ভারতের বিপক্ষে সাদ উদ্দিন ও ওমানের বিপক্ষে বিপলু আহমেদ আগের দুই গোলদাতা।

একটু পরই ব্যবধান দ্বিগুণ হতে পারত। বাঁ দিক দিয়ে আক্রমণে ওঠা মতিন বক্সে ঢুকে ভারসাম্য হারান।

শেষ দিকে নাজেমের ক্রসে আমিরের হেড বাইরে দিয়ে গেলে দারুণ এক ড্র নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।

ড্রয়ের স্বস্তি থাকলেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়ের অপেক্ষা আরও বাড়ল। ১৯৭৯ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম এবং সবশেষ ৪-১ গোলে জিতেছিল দল। এরপর ২০১০ সালের এসএ গেমসে আফগানিস্তানকে ৪-০ গোলে হারিয়ে সোনার পদক জিতেছিল বাংলাদেশ; এ টুর্নামেন্ট অবশ্য অনূর্ধ্ব-২৩ দলের।

২ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতেই থাকল বাংলাদেশ। আগামী ৭ জুন ভারতের মুখোমুখি হবে দল। সবশেষ ম্যাচে ১৫ জুন মুখোমুখি হবে ওমানের বিপক্ষে।