বাছাইয়ের তিন ম্যাচ থেকে কি চায় বাংলাদেশ?

অধিনায়ক জামাল ভূইয়াসহ খেলোয়াড়দের অনেকের প্রত্যাশা জয়, ড্র। কোচ জেমি ডের কথাগুলোও প্রায় একই ধাঁচের। কিন্তু চোট জর্জর দল, নির্ভরযোগ্যদের অনেকে নেই। এর সঙ্গে আছে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারার ঘাটতি। সব মিলিয়ে প্রশ্নটা তাই থাকছে, ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে বাকি তিন ম্যাচ থেকে আসলে কি পেতে চায় বাংলাদেশ?

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 June 2021, 11:58 AM
Updated : 2 June 2021, 11:58 AM

তিনটি ম্যাচই ছিল বাংলাদেশের হোম ম্যাচ। কিন্তু করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সবগুলোই খেলতে হচ্ছে কাতারে। আগামী বৃহস্পতিবার দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় প্রথম ম্যাচ। এরপর ৭ জুন ভারতের বিপক্ষে এবং ১৫ জুন ওমানের বিপক্ষে বাছাইয়ের ম্যাচ খেলবে দল।

ঈদের পর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হওয়া ক্যাম্পে হানা দেয় চোট। অভিজ্ঞ গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা, ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ, ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিনকে কেড়ে নিয়েছে চোট। একই কারণে আগে থেকেই ছিটকে গেছেন স্ট্রাইকার নাবীব নেওয়াজ জীবন। সব শেষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ছিটকে যাওয়া মিছিলে যোগ দিয়েছেন ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। এই ভাইরাসের ছোবল থেকে মুক্ত হয়ে শেষ মুহূর্তে দলে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম।

বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রুপে বাংলাদেশ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে চারটিতে হেরেছে। একমাত্র পয়েন্ট দল পেয়েছিল সল্টলেকে ভারতের বিপক্ষে ১-১ ড্র করে। কলকাতার সেই আলোচিত ড্রয়ে যারা আলো ছড়িয়েছিলেন, তাদের মধ্যে জীবন, রানা, বিশ্বনাথ, ইয়াসিন খান, সাদরা উঠতে পারেননি কাতারগামী বিমানে।

তার থাকলেও বাংলাদেশের মূল যে সমস্যা গোল খরা সেটা কতটা কাটত বলা কঠিন। গোল নিয়ে বাংলাদেশের আক্ষেপ অনেক পুরান। বাছাইয়ে এ পর্যন্ত ২টি দিয়ে ১৩টি হজম করেছে জেমির দল; যা এই গ্রুপে এক দলের জালে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের পরেই আছে আফগানিস্তান, ৩টি দিয়ে ১১টি খেয়েছে তারা। তাদের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে হেরেই বাছাই শুরু করেছিল বাংলাদেশ।

এবারের দেখায় যে আফগানদের বিপক্ষে বা বাকি দুই দলের বিপক্ষে গোল মিলবে, তার নিশ্চয়তাও পাওয়া কঠিন। বর্তমান দলের আক্রমণভাগে যারা আছেন, তাদের লিগের পরিসংখ্যান খুব একটা আশা দেখাচ্ছে না। রাকিব হোসেনের গোল ৬টি, সুমন রেজার ৫টি, মোহাম্মদ জুয়েলের নামের পাশে গোল ৩টি। লিগে ৬টি করে গোল করা তৌহিদুল ইসলাম সবুজ ও নিহাদ জামান উচ্ছ্বাসের ঠাঁই মেলেনি জেমির পরিকল্পনায়।

বাছাইয়ের আগে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে আফগানিস্তান। ইন্দোনেশিয়াকে ৩-২ গোলে হারানোর পর সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে করেছে ১-১ ড্র। সে অর্থে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের বিপক্ষে খেলা নামমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে দুই গোল হজম করে পরে ড্র করেছিল জেমির দল। ওই ম্যাচে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখার কথা বলেছিলেন শেখ জামাল কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক। প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে না পারার ঘাটতির কথা বলেছিলেন জাতীয় দলের অধিনায়ক জামাল।

গ্রুপে ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে থাকা বাংলাদেশের সুযোগ নেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ের পরের ধাপে যাওয়ার। ১৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে কাতার। ১২ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ওমান। আফগানিস্তানের পয়েন্ট ৪, ভারতের ৩। এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে টিকে থাকতে হলে আফগানিস্তান ও ভারতকে এই তিন ম্যাচে পেছনে ফেলতে হবে বাংলাদেশকে। না পারলে খেলতে হবে প্লে-অফ। এখানেও চোখ রাঙানি আছে!

২০১৮ বিশ্বকাপ ও ২০১৯ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে প্লে-অফের অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের ছিল না বাংলাদেশের। সেবার তলানিতে থাকায় প্লে-অফে ভুটানের বিপক্ষে নিজেদের মাঠে ড্রয়ের পর অ্যাওয়ে ম্যাচে ৩-১ গোলের ভরাডুবি হয়েছিল। ২০১৬ সালের ওই বিপর্যয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে ১৬ মাসের জন্য নির্বাসনে ছিল দল!

সামনের তিন প্রতিপক্ষের মধ্যে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ (১৮৪তম)। ওমান ৮০তম, ভারত ১০৫তম ও আফগানিস্তান ১৪৯তম। প্রস্তুতি, পরিকল্পনাতেও এগিয়ে তারা। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে তাই জেমির কাছে প্রশ্ন ছিল তিন ম্যাচে মূল লক্ষ্য কি? ফল নাকি সুন্দর আগামীর জন্য দল গুছিয়ে নেওয়া। কিছুটা কৌশলী উত্তর দিয়েছেন কোচ।

“আমার চাওয়া সামনের তিন ম্যাচে তিনটি ভালো পারফরম্যান্স এবং এরপর দেখব সেটা আমাদের কোথায় নিয়ে যায়। যদিও ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা কঠিন, কিন্তু দেখা যাক, কি হয়। অন্য দলগুলো র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তাই আমরাও জানি, যদি নিজেদের সেরাটা দিতে না পারি, তাহলে প্রতিপক্ষরাই জিতবে।”