ইউরোয় ‘নির্ভার’ রোনালদোকে ডাকছে রেকর্ড

গতবারের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আগের মতো কাঁধে নেই পর্তুগালকে টেনে নেওয়ার মহাভার। নতুন ও পরীক্ষিত যারা আছেন, তারাও দলকে টেনে নিতে সক্ষম। ৩৬ বছর বয়সী ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো তাই এবার কিছুটা হলেও নির্ভার। তবে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুট ধরে রাখতে নিজের সেরাটা দেওয়ার পাশাপাশি তার দায়িত্ব থাকবে সতীর্থদের অনুপ্রাণিত করা, সাহস জোগানোর। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড নিজের করে নেওয়ার হাতছানিও আছে তার সামনে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2021, 12:26 PM
Updated : 29 May 2021, 12:26 PM

আগামী ১১ জুন মাঠে গড়াবে ইউরোর এবারের আসর। শুরু হবে ২০১৬ সালে ফ্রান্সকে হারিয়ে শিরোপা জেতা পর্তুগালের মুকুট ধরে রাখার মিশনও। ‘ই’ গ্রুপে তাদের প্রতিপক্ষ জার্মানি, ফ্রান্স ও হাঙ্গেরি।

গত সেপ্টেম্বরে জাতীয় দলের জার্সিতে ‘গোলের সেঞ্চুরি’ পূরণ করেন রোনালদো। পর্তুগালের হয়ে বর্তমানে তার গোলসংখ্যা ১০৩টি। আর ৬টি হলে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ইরানের আলি দাইয়ের গড়া ১০৯ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করবে তিনি।

রেকর্ডটি নিয়ে মাঝেমধ্যে একটু-আধটু কথা বলেছেন রোনালদো। ২০১৯ সালে যেমন বলেছিলেন রেকর্ডটি নিজের করে নেওয়ার আগ্রহের কথা, “সব রেকর্ডই তৈরি হয় ভাঙার জন্য এবং এই রেকর্ড আমি ভাঙব।”

লক্ষ্য পূরণে ইউরোর বাছাই বেশ কাজে লাগিয়েছিলেন রোনালদো। আট ম্যাচে করেছিলেন ১১ গোল। এর মধ্যে সাতটি গোল ‘ছোট দল’ লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে। প্রথম লেগে চার গোল করার পর দ্বিতীয় লেগে দলটির বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন তিনি।

আন্তর্জাতিক ফুটবলে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৩ গোল রোনালদোর

সুদীর্ঘ পথচলায় অবশ্য অন্যান্য টুর্নামেন্টেও আলো ছড়িয়েছেন রোনালদো। ২০১৮ বিশ্বকাপে স্পেনের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৬ সালে ইউরোর সেমি-ফাইনালে ওয়েলসের বিপক্ষে ম্যাচেও ‘ডেডলক’ ভেঙেছিলেন তিনি।

এ পর্যন্ত খেলা আটটি শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিযোগিতার সবগুলোতেই গোল করেছেন রোনালদো। এবারের ইউরোয় শুরুর দিকেই বড় দলের বিপক্ষে নিজেকে প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছেন তিনি; গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে জার্মানি ও ফ্রান্সের মুখোমুখি হবে পর্তুগাল।

ইউরোর গত আসরে পর্তুগালের নির্ভরতার প্রতীক ছিলেন রোনালদো। চোটের কারণে ফাইনালের পুরোটা খেলতে পারেননি। কাঁদতে কাঁদতে ছেড়েছিলেন মাঠ। চিকিৎসা নিয়ে দ্রুতই ফিরেছিলেন ডাগআউটে। কোচ ফের্নান্দো সান্তোসের চেয়েও ডাগআউটে বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি। সতীর্থদের উজ্জীবিত রাখতে তার প্রচেষ্টা, মরিয়া ভাব ছুঁয়ে গিয়েছিল ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়। সাফল্যের প্রতি রোনালদোর ক্ষুধাটা দেখেছিল সবাই।

মাঠে এবার হয়তো তার ওপর চাপ একটু কম থাকবে, কিন্তু দেশের শিরোপা ধরে রাখার প্রশ্নে রোনালদো আরও বেশি অনুপ্রাণিত থাকবেন। কেননা, ক্লাব ফুটবলে ২০২০-২১ মৌসুমটা আশানুরূপ কাটেনি তার। সেরি আয় তিনি সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও তার দল ইউভেন্তুস ছিল বিবর্ণ।

লিগের মুকুট ধরে রাখতে পারেনি তারা। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আগেভাগে ছিটকে গিয়েছিল তুরিনের দলটি। এই তিক্ত মৌসুম ভুলতে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ রোনালদোর জন্য দারুণ একটি উপলক্ষ।

২০১৬ সালে পর্তুগালকে প্রথম বড় কোনো শিরোপা এনে দেওয়ার সময়ের তুলনায় এবার রোনালদোর ওপর দায়িত্বের গুরুভার কম হওয়াই উচিত। সেবার রিকার্দো কারেসমা এবং এদেরকে নিয়ে আক্রমণভাগে সবকিছু সামাল দিতে হয়েছিল তাকে।

এবার রোনালদোর সঙ্গে পর্তুগাল দলে আছেন বিশ্বমানের ফরোয়ার্ড জোয়াও ফেলিক্স, দিয়োগো জটা, ব্রুনো ফের্নান্দেস ও আন্দ্রে সিলভা। যে কোনো প্রতিযোগিতায় তাদের সম্মিলিত উপস্থিতি পর্তুগালকে শক্তিশালী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে বৈকি।

তবে শেষ কথা, পর্তুগাল যতই তারকাসমৃদ্ধ দল হোক, চারপাশে ফেলিক্স-জটা-সিলভার মতো যত নির্ভরতা ও পরীক্ষিতই থাকুক না কেন, সবার প্রত্যাশা থাকবে পর্তুগিজ রথের সারথি হোক রোনালদোই।