চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে যেগুলো হতে পারে নির্ণায়ক

দুয়ারে কড়া নাড়ছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। স্বপ্নের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে প্রতিপক্ষ বধের প্রস্তুতি নিচ্ছে টমাস টুখেলের চেলসি ও পেপ গুয়ার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। শেষ পর্যন্ত কাদের মুখে ফুটবে বিজয়ের হাসি, তা সময়ই বলে দেবে। তবে পর্তুগালের পোর্তোর ফাইনালে পাঁচটি বিষয় হয়ে উঠতে পারে শিরোপা নির্ণায়ক।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 May 2021, 12:59 PM
Updated : 29 May 2021, 05:15 PM

পোর্তোয় শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় মুখোমুখি হবে চেলসি ও সিটি। চেলসি আট বছর পর ও সিটি এই প্রথম ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতার ফাইনালে উঠেছে।

চেলসির দুই উইং-ব্যাক কি আক্রমণ শানাতে পারবে?

টুখেলের কৌশলে উইং-ব্যাকদের আক্রমণে ওঠার লাইসেন্স দেওয়া আছে। ডান দিক দিয়ে সেসার আসপিলিকুয়েতা বা রিস জেমস এবং বাঁ দিক দিয়ে বেন চিলওয়েল বা মার্কোস আলোনসো-মোদ্দা কথা ট্রানজিশনের সময়ে কার্যকরী এবং আরও ছড়িয়ে খেলার মতো খেলোয়াড় আছে টুখেলের হাতে।

চেলসি কোচ টমাস টুখেলের সঙ্গে ডিফেন্ডার সেসার আসপিলিকুয়েতা

কিন্তু এখানে একটা বিষয় বেশ জটিল। কেননা, সিটির কোচ গুয়ার্দিওলা সবসময় অনেকটা জায়গা জুড়ে খেলতে সক্ষম দুই ফরোয়ার্ড খেলান। ফাইনালে সম্ভবত ডান দিকে রিয়াদ মাহরেজ এবং বাঁ দিকে ফিল ফোডেন বা রাহিম স্টার্লিংকে খেলাতে পারেন কোচ। তাদের আক্রমণও ভীষণ ধারাল। ফলে চেলসির উইং-ব্যাকদের আক্রমণে উঠে আসার পথটা হয়ে যেতে পারে সংকীর্ণ।

যদি সেটাই হয়, তাহলে চেলসির (ইনসাইড ফরোয়ার্ড) ম্যাসন মাউন্ট ও ক্রিস্টিয়ান পুলিসিক সাধারণ পরিস্থিতির চেয়ে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে পারেন।

টুখেল অবশ্য সবসময় নিজের ফরমেশন এবং প্রতিপক্ষের কৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে পরিকল্পনা করে থাকেন। সম্প্রতি ডান দিকে আসপিলিকুয়েতা এবং জেমসকে খেলিয়েছেন তিনি। বাঁ দিক দিয়ে আসা আক্রমণ সামলাতে যা অবশ্যই কাজে আসবে।

চেলসি কি ডে ব্রুইনেকে থামাতে পারবে?

সিটির বিপক্ষে সম্প্রতি দুটি ম্যাচ জিতেছে চেলসি। এতে বোঝা যাচ্ছে, নিজেদের কৌশলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সেট-আপ কার্যকরভাবে সাজাতে পারদর্শী টুখেল। কিন্তু কেভিন ডে ব্রুইনের মতো মেধাবী খেলোয়াড়কে আটকাতে এগুলো যথেষ্ট নাও হতে পারে।

সতীর্থদের সঙ্গে কেভিন ডে ব্রুইনে

যদি বেলজিয়ামের এই খেলোয়াড় জায়গা পান, তাহলে রক্ষণ ভেদ করে এক ছুটে বেরিয়ে যাওয়ার এবং দূরপাল্লার শট নেওয়ার সামর্থ্য তার রয়েছে; যেটা চেলসির জন্য পরিষ্কার এবং নিশ্চিত বিপদ। এমনকি ডে ব্রুইনে কড়া পাহারায় থাকার সময়ও সতীর্থদের উদ্দেশে তার বাড়ানো থ্রু বল কিংবা সুইপিং পাস প্রতিপক্ষের জন্য হুমকির।

চেলসির দুই হোল্ডিং মিডফিল্ডার এনগোলা কঁতে এবং জর্জিনিয়োর সামর্থ্য আছে ডে ব্রুইনের খেলাটাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলার। কিন্তু যদি তারা সেটা না পারেন, তাহলে সমস্যায় পড়তে হবে চেলসিকে।

‘ফলস নাইন’ বনাম তিন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার?

যদিও হাতে দুজন চমৎকার সেন্টার ফরোয়ার্ড ক্লাবের রেকর্ড গোলদাতা সের্হিও আগুয়েরো ও ব্রাজিলিয়ান গাব্রিয়েল জেসুস আছে, তারপরও গুয়ার্দিওলা মাঝমাঠের একটু ওপরে সেন্ট্রাল রোলে একজন মিডফিল্ডারকে খেলান, যেটা এই কোচের প্রিয় ‘ফলস নাইন’ পদ্ধতি।

বের্নার্দ সিলভা

এই ‘ফলস নাইন’ পজিশনে বের্নার্দ সিলভার খেলার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি এবং যদি এ ছকেই সিটি খেলে, তাহলে এটা চেলসিকে ধন্দে ফেলে দিতে পারে। সেক্ষেত্রে টুখেল তার সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের পজিশন ছেড়ে বেরিয়ে এসে সিলভাকে আটকাতে বলবেন নাকি হোল্ডিং মিডফিল্ডারদের পরিস্থিতি সামাল দিতে বলবেন, সেটাও দেখার বিষয়।

ওয়াকার কি নিজের জায়গায় থাকবেন নাকি চাপ দেবেন?

পিএসজির বিপক্ষে সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগের প্রথমার্ধে রাইট-ব্যাক কাইল ওয়াকারের প্রতি গুয়ার্দিওলার স্পষ্ট নির্দেশনা ছিল নিজের জায়গা আকঁড়ে থাকার; কোনোভাবে উপরে না ওঠার এবং নিজের পেছনে ফাঁকা জায়গা না রাখার।

কাইল ওয়াকার

ডান প্রান্ত দিয়ে তার সঙ্গে মাহরেজের সংযোগ না থাকায় ম্যাচে সিটির মাঝমাঠে এবং আক্রমণে আধিপত্য কম ছিল। বিরতির পর ওয়াকার তার মাঝেমধ্যে আক্রমণে ওঠার সহজাত ভূমিকায় ফিরলে ম্যাচের চিত্র বদলে যায়।

চিলওয়েল ও ম্যাসন মাউন্টের হাত ধরে বাঁ দিক দিয়ে চেলসি আক্রমণ সাজালে ওয়াকারকে রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব নিয়ে পড়ে থাকতে হতে পারে। অবশ্য এটা সিটির জন্য ইতিবাচকও হতে পারে, কিন্তু তা অবশ্যই সিটিকে আক্রমণের একটা বিকল্প পথ হারানোর মাশুলের বিনিময়ে হবে।

ভেরনার কি সিটির জন্য হুমকি হতে পারবেন?

টিমো ভেরনারের সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ৫১ ম্যাচে ১২ গোল করাটা চেলসির ৫ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগের প্রতিদান নয় মোটেও।

রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে গোল করেছিলেন ভেরনার; এ গোল দিয়েই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা সাত ম্যাচের গোলখরা কাটান এই জার্মান।

টিমো ভেরনার

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের চলতি মৌসুমে ফাইনালে ওঠা পর্যন্ত সিটি মাত্র ৪ গোল হজম করেছে এবং রুবেন দিয়াস ও জন স্টোনস সেন্ট্রাল ডিফেন্সে দুর্দান্ত খেলছেন।

মোদ্দা কথা, জম্পেশ এক লড়াই হবে, যে সুযোগগুলো আসবে, চেলসি চাইবে তার সর্বোচ্চটা কাজে লাগাবে ভেরনার।