লেভান্তের মাঠে বার্সেলোনার দুঃস্বপ্ন

প্রথমার্ধের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে দুই গোলের লিড। সহজ জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা। কিন্তু লেভান্তের মাঠে বারবার পথ হারানোর ভীতি, সঙ্গে শিরোপা লড়াইয়ের প্রবল চাপ-দুইয়ে মিলিয়েই কিনা বিরতির পর একটু নড়ে গেল বার্সেলোনা। সেই সুযোগে অসাধারণভাবে ঘুরে দাঁড়াল লেভান্তে। শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে পয়েন্ট হারিয়ে শিরোপা লড়াইয়ে অনেকখানি পিছিয়ে পড়ল কাতালান ক্লাবটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 May 2021, 09:50 PM
Updated : 11 May 2021, 10:40 PM

লা লিগায় মঙ্গলবার রাতের ম্যাচটি ৩-৩ গোলে ড্র হয়েছে। লিওনেল মেসির নৈপুণ্যে বার্সেলোনা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান বাড়ান পেদ্রি। গনসালো মেলেরো ও হোসে লুইস মোরালেসের গোলে লেভান্তে সমতায় ফেরার পর উসমান দেম্বেলের গোলে আবারও এগিয়ে যায় শিরোপাপ্রত্যাশীরা। তবে সের্হিও লেওনের গোলে মূল্যবান একটি পয়েন্ট আদায় করে নেয় স্বাগতিক দল।

মূল্যবান দুটি পয়েন্ট হারালেও আপাতত লিগ টেবিলে দুইয়ে ফিরেছে বার্সেলোনা। ৩৬ ম্যাচে রোনাল্ড কুমানের দলের পয়েন্ট ৭৬।

একটি করে ম্যাচ কম খেলেছে শিরোপা লড়াইয়ের অন্য দুই দল আতলেতিকো মাদ্রিদ ও রিয়াল। ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে দিয়েগো সিমেওনের দল। ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নেমে গেছে জিনেদিন জিদানের দল।

লা লিগায় লেভান্তের বিপক্ষে বার্সেলোনা খেললে একটা ব্যাপার যেন নিশ্চিত, গোল পাবেই কাম্প নউয়ের দলটি। এ নিয়ে ৩০ ম্যাচেই তারা পেল জালের দেখা, মোট ৮৯টি। ম্যাচ প্রতি গোলের হিসেবে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ; অন্তত ১৫ ম্যাচ খেলেছে এমন দলের বিপক্ষে এর চেয়ে ভালো গড় কেবল রায়ো ভায়োকানোর বিপক্ষে (৩.২)।

তবে এই দলটির মাঠে মুদ্রার উল্টো পিঠও দেখতে হয় বার্সেলোনার। লিগে গত তিন আসরে দুবারই এখানে হেরেছে মেসিরা। মাঝে ২০১৮-১৯ মৌসুমে জিতলেও সেবার কোপা দেল রের শেষ ষোলোর প্রথম লেগে হারে বার্সেলোনা।

এদিন ম্যাচের শুরুতেই ২-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারত বার্সেলোনা। লেভান্তের রক্ষণ ভেঙে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ফ্রেংকি ডি ইয়ং। কাটব্যাক করেন পেদ্রিকে। কিন্তু পেনাল্টি স্পটের কাছে ফাঁকায় দাঁড়িয়ে উড়িয়ে মারেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার।

পঞ্চম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সে আবারও ডি ইয়ংয়ের নৈপুণ্য। এবার তাকে বাধা দিতে ছুটে যান গোলরক্ষক আইতর ফের্নান্দেস। এক ঝটকায় সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ফের্নান্দেসকেও ফাঁকি দিয়ে পেনাল্টি স্পটের কাছে ফের পেদ্রিকে খুঁজে নেন ডাচ মিডফিল্ডার। এবার লক্ষ্যে শট নেন পেদ্রি, তবে জায়গায় ফিরে রুখে দেন স্প্যানিশ গোলরক্ষক।

২১তম মিনিটে নিজেদের ভুলে বিপদে পড়তে বসেছিল বার্সেলোনা। ডি-বক্সের বাইরে দেম্বেলের দুর্বলতায় বল পেয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন গার্সিয়া আরান্দা। শট নেওয়ার সুযোগ ছিল যথেষ্ট, কিন্তু তা না করে ভুল পাস দিয়ে বসেন তিনি।

এরপরই মেসির নৈপুণ্যে এগিয়ে যায় বার্সেলোনা। বাঁ দিক থেকে জর্দি আলবার ক্রসে বল প্রতিপক্ষের একজনের মাথা হয়ে ডি-বক্সে ফাঁকায় পান আর্জেন্টাইন তারকা। প্রায় শুয়ে পড়ে বাঁ পায়ের ভলিতে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন তিনি।

অষ্টম পিচিচি ট্রফি জয়ের পথে ছুটে চলা মেসির আসরে গোল হলো ২৯টি। ২১ গোল নিয়ে তালিকার দুই নম্বরে করিম বেনজেমা।

তৃতীয় প্রচেষ্টায় সফল হন পেদ্রি। ৩৪তম মিনিটের ওই গোলে অবশ্য বড় কৃতিত্ব দেম্বেলের। দারুণ গতিতে বক্সে ঢুকে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডার ও আগুয়ান গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে ছয় গজ বক্সের মুখে বল বাড়ান ফরাসি ফরোয়ার্ড। অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান পেদ্রি।

প্রথমার্ধে আরও দুটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিলেন মেসি; কিন্তু আলবার লক্ষ্যভ্রষ্ট শটের পর বিরতির একটু আগে ঠিকমতো হেড করতে ব্যর্থ হন সের্হিও বুসকেতস।

প্রথমার্ধে একচ্ছত্র আধিপত্য করলেও বিরতির পর তা ধরে রাখতে পারেনি বার্সেলোনা। দুই মিনিটে দুই গোল করে উল্টো চাপ দেয় লেভান্তে।

৫৭তম মিনিটে ডান দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে হেডে ব্যবধান কমান স্প্যানিশ মিডফিল্ডার মেলেরো। আর ৫৯তম মিনিটে ডি-বক্সে বল পেয়ে বাঁ পায়ের কোনাকুনি শটে স্কোরলাইন ২-২ করেন আরেক স্প্যানিয়ার্ড মোরালেস।

মুহূর্তের ব্যবধানে শক্ত অবস্থান নড়বড়ে হয়ে পড়ায় আবারও পয়েন্ট হারানোর শঙ্কা জাগে বার্সেলোনা শিবিরে। যদিও পাঁচ মিনিট পর আবারও এগিয়ে যায় তারা। ডি-বক্সে ফাঁকায় বল পেয়ে বুলেট গতির শটে ঠিকানা খুঁজে নেন দেম্বেলে।

বার্সেলোনাকে হতভম্ব করে দেওয়া গোলটি আসে ৮৩তম মিনিটে। ডি-বক্সের বাঁয়ে সের্জিনো দেস্তের থেকে বল কেড়ে নিয়ে লেভান্তের ডিফেন্ডার তোনো বাড়ান ছয় গজ বক্সের কাছে। দারুণ ফ্লিকে কাছের পোস্ট দিয়ে বল জালে পাঠান লেওন। কাছেই ছিলেন জেরার্দ পিকে, কিন্তু বাধা দেওয়ার মতো যথেষ্ট ক্ষিপ্র হতে পারেননি তিনি।

লিগে এই নিয়ে টানা দুই ম্যাচ ড্র করল বার্সেলোনা। আগের ম্যাচে আতলেতিকোর বিপক্ষে ঘরের মাঠে গোলশূন্য ড্র করে তারা। শেষ চার রাউন্ডে মাত্র একটি জয়, অন্যটি হার।

শিরোপা লড়াইয়ে ভাগ্য আগে থেকেই আতলেতিকোর হাতে। সবশেষ এই হোঁচটে তাই আরও পিছিয়ে পড়ল বার্সেলোনা। হয়তো শেষই হয়ে গেল!