ইউরোপিয়ান সুপার লিগের আবির্ভাবের আগে থেকেই নানারকম নিষেধাজ্ঞার হুমকি-ধা্মকি দিয়ে আসছিল উয়েফা। ইউরোপীয় ফুটবলের নিয়ন্তা সংস্থার সঙ্গে যোগ দেয় এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও ফিফা।
অবশেষে শুক্রবার রাতে এই তিন ক্লাবের বিরুদ্ধে শাস্তিস্বরূপ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুর ঘোষণা দেয় উয়েফা।
গত মাসে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভুত সুপার লিগে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয় ইউরোপের ১২টি শীর্ষ ক্লাব। ঝড় ওঠে ফুটবল বিশ্বে। সমালোচনায় মুখর হয় ফুটবল বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে ক্লাবগুলোর সমর্থকরাও। সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার হুমকি তো ছিলই।
প্রবল চাপের মুখে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ডের ৬ ক্লাব। পর দিন সেই কাতারে যোগ দেয় ইন্টার মিলান ও আতলেতিকো মাদ্রিদ। তাতে প্রকল্পটি কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। পরবর্তীতে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নেয় এসি মিলানও।
উয়েফার শুক্রবারের বিবৃতিতে বলা হয়, সুপার লিগ থেকে বেরিয়ে আসা ক্লাবগুলো পুরনো অবস্থায় ফেরার অঙ্গীকারনামা ‘ক্লাব কমিটমেন্ট ডিক্লারেশন’ এ স্বাক্ষর করেছে। ক্লাবগুলো হলো-ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, লিভারপুল, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, টটেনহ্যাম হটস্পার, আর্সেনাল, ইতালির এসি মিলান, ইন্টার মিলান ও স্পেনের আতলেতিকো মাদ্রিদ।
উয়েফা সভাপতি আলেকসান্দের চেফেরিন বলেন, “প্রস্তাবিত ওই ‘সুপার লিগ’ থেকে সরে আসার আহ্বান প্রত্যাখান করা ক্লাবগুলোর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সবরকম অধিকার উয়েফার আছে।”
পরদিন বার্সেলোনা, রিয়াল মাদ্রিদ ও ইউভেন্তুস যৌথ বিবৃতিতে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে।
“প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবগুলোকে আগেও অনেক ভুগতে হয়েছে, এখনও তারা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অগ্রহণযোগ্য এক তৃতীয় পক্ষ আমাদেরকে সুপার লিগ থেকে সরে যেতে চাপ ও হুমকি দিচ্ছে।”
“আইনিভাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না, ট্রাইবুনাল যেখানে ইতোমধ্যে সুপার লিগের পক্ষে রায় দিয়েছে। ফিফা ও উয়েফাকে সরাসরি বা এর অনুমোদিত সংগঠনগুলোর মাধ্যমে এর (সুপার লিগের) বিরুদ্ধে কোনোরকম ব্যবস্থা নেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছে, যতদিন পর্যন্ত মামলার নিষ্পত্তি না হয়।”
গত ১৮ এপ্রিল সুপার লিগ আবির্ভাবের দুই দিন পরই অনেক আলোচিত-সমালোচিত এই টুর্নামেন্টের পক্ষে মত দেয় স্পেনের একটি বাণিজ্যিক আদালত। রায়ে বলা হয়, ফিফা ও উয়েফা ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় ১২টি ক্লাবের সুপার লিগ গঠন রোধ করতে পারে না।
অধিকাংশ ক্লাব সরে যাওয়ায় আপাত সুপার লিগের কোনো ভবিষ্যৎ দেখা যাচ্ছে না। তবে আগের অবস্থানেই থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রস্তাবিত এই প্রকল্পের প্রথম চেয়ারম্যান ও রিয়াল সভাপতি ফ্লোরেন্তিনো পেরেস।
পেরেসের যুক্তি, প্রস্তাবিত টুর্নামেন্টটি চালু হলে ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবগুলোর আয় বাড়বে এবং তারা ফুটবলের উন্নয়নে বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারবে। তবে উয়েফা ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর মতে, সুপার লিগ কেবলমাত্র অভিজাত ক্লাবগুলোর শক্তি ও সম্পদ বাড়িয়ে তুলবে।
প্রবল চাপ থাকলেও সুপার লিগ থেকে সরে দাঁড়াতে রাজি নয় অবশিষ্ট তিন ক্লাব। প্রয়োজনে এর প্রস্তাবণা ও কাঠামোয় পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। তবে, প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়াটা ‘অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন’ এর মতো কাজ হবে বলে মনে করে তারা।
“সুপার লিগের উদ্যোগে যে নানারকম প্রতিক্রিয়া আসছে, সেগুলো সম্পর্কে আমরা সচেতন। এর মধ্যে কিছু বিষয়ের পেছনে কারণেও আলোকপাত করা যেতে পারে।”
সুপার লিগ থেকে সরে যাওয়া ৯ ক্লাব পুরনো অবস্থায় ফিরতে উয়েফার সঙ্গে অঙ্গীকারনামা ‘ক্লাব কমিটমেন্ট ডিক্লারেশন’ এ স্বাক্ষর করেছে। ‘বিদ্রোহী’ প্রকল্পটি সঙ্গে সম্পৃক্ততার ইতি টানতে তারা তাদের ক্ষমতার মধ্যে থেকে সবরকম পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে।
তারপরও অবশ্য শাস্তি পুরোপুরি এড়াতে পারেনি ক্লাবগুলো। আগের অবস্থায় ফেরার সদিচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ ক্লাবগুলোকে মিলিতভাবে মোট দেড় কোটি ইউরো অনুদান দিতে হবে। একই সঙ্গে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ বা ইউরোপা লিগ থেকে এক মৌসুমের প্রাপ্ত রাজস্বের পাঁচ শতাংশ তারা দিয়ে দেবে।
এছাড়া ভবিষ্যতে কোনো অননুমোদিত প্রতিযোগিতায় খেলতে গেলে ১০ কোটি ইউরো এবং কোনো প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করলে ৫ কোটি ইউরো জরিমানা গুনতে হবে।