পিএসজির ব্যর্থতার দায় নেইমারের একার?

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের লক্ষ্যেই বছর চারেক আগে রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে দলে ভিড়িয়েছিল পিএসজি। কিন্তু গত চার মৌসুমে ফরাসি ক্লাবটির চাওয়া পূরণ করতে পারেননি তিনি। আরও একবার প্রতিযোগিতাটি থেকে পিএসজি খালি হাতে ফেরার পর অনেকে দলের ব্যর্থতার দায় দিচ্ছেন নেইমারকে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2021, 06:11 PM
Updated : 5 May 2021, 06:12 PM

২০১৭ সালে ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফিতে পিএসজিতে যাওয়ার পর চোট বেশ ভোগাচ্ছে এই ব্রাজিলিয়ান তারকাকে। গত চার মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে দলের ১৫ ম্যাচের পাঁচটিতে খেলতে পারেননি। যে ১০ ম্যাচ খেলেছেন সেখানেও ভালো করতে পারেননি, গোল কেবল দুটি।

গত সপ্তাহে সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে নেইমারের পারফরম্যান্স খারাপ ছিল না। দারুণ দুটি সুযোগও তৈরি করেছিলেন। কিন্তু পাননি সাফল্যের দেখা। মঙ্গলবার রাতে ফিরতি লেগে তিনি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। দল হেরে যায় ২-০ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-১ গোলের জয়ে প্রথমবারের মতো ফাইনালে পা রাখে ম্যানচেস্টার সিটি।

চোটের জন্য সিটির বিপক্ষে ফিরতি লেগে ছিলেন না শেষ ষোলোয় বার্সেলোনা ও কোয়ার্টার-ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে জয়ের নায়ক কিলিয়ান এমবাপে। সবার আশা ছিল তাই নেইমারকে ঘিরে। কিন্তু সমন্বয় করতে পারেননি তিনি স্ট্রাইকার মাউরো ইকার্দির সঙ্গে, হারিয়ে খুঁজেছেন নিজেকে।

ইতিহাদ স্টেডিয়ামে মঙ্গলবারের ম্যাচে আরও একবার স্পষ্ট হয়েছে, এমবাপে ও নেইমারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল পিএসজি। গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে দেখা গেছে শীর্ষমানের খেলোয়াড়ের অভাব।

ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে শেষ চারের ফিরতি লেগে নিজের ছায়া হয়ে ছিলেন নেইমার

ফুলব্যাক আলেস্সান্দ্রো ফ্লোরেন্সি ও আবদু দিয়ালো পারেননি তাদের কাজটা ঠিকঠাক করতে। রিয়াদ মাহরেজের প্রথম গোলের সময় যেখানে থাকা দরকার, তার ধারেকাছেও ছিলেন না ইতালিয়ান ডিফেন্ডার ফ্লোরেন্সি। এবং তিনি বল হারানোর পর দ্বিতীয় গোলটা করেন মাহরেজ। 

গত দুই বছরে গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে ছাড়া বিশ্বমানের কোনো খেলোয়াড় দলে টানতে পারেনি পিএসজি। বরং এই সময়ে তারা হারিয়েছে চিয়াগো সিলভা ও এদিনসন কাভানির মতো খেলোয়াড়। ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার চিয়াগো এখন চেলসিতে রক্ষণের দলনেতা। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ভালো সময় পার করছেন উরুগুয়ের স্ট্রাইকার কাভানি।

দুজনই এই মৌসুমে টমাস টুখেলের পরিকল্পনায় ছিলেন। গত অক্টোবরে ক্লাবের খেলোয়াড় কেনা-বেচার নীতির সমালোচনা করেছিলেন এই জার্মান কোচ। যা তার চাকরি হারানোর ক্ষেত্রে রাখে বড় ভূমিকা। ক্লাবের স্পোর্টিং ডিরেক্টর লিওনার্দোর সঙ্গে মতবিরোধের মধ্যে শীতকালীন বিরতিতে টুখেলকে ছাঁটাই করে পিএসজি।

টুখেল এরপর যোগ দেন চলসিতে। তার হাত ধরেই বদলে গেছে ইংলিশ ক্লাবটি। উঠেছে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে। বুধবার রাতে ফিরতি লেগে রিয়াল মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে তারা। প্রথম লেগে প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে ১-১ ড্র করে ফিরেছিল।

আরও একবার পিএসজি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে খালি হাতে ফিরলেও প্রাপ্তি দেখছেন স্পোর্টিং ডিরেক্টর লিওনার্দো।

“গত দুই বছরে আমরা যা করেছি তা ভুলে যেতে পারি না। আমরা ফাইনালে উঠেছি এবং বায়ার্নের কাছে ১-০ গোলে হেরেছি, যারা সবকিছু জিতেছিল। এটা সত্যি যে এই বছর আমাদের পারফরম্যান্সে ওঠা-নামা ছিল। তবে আমরা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, বার্সেলোনা এবং বায়ার্নের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়েছি।”

২০১২ সালের পর পিএসজির প্রথম কোচ হিসেবে কোনো বড় শিরোপা ছাড়া মৌসুম শেষ করতে না চাইলে এখন ঘরোয়া ফুটবলে মনোযোগ দিতে হবে মাওরিসিও পচেত্তিনোকে। গত জানুয়ারিতে তার হাত ধরে দলটি জিতেছে ফরাসি সুপার কাপ।

আগামী সপ্তাহে ফরাসি কাপের সেমি-ফাইনালে মোঁপেলিয়ের বিপক্ষে খেলবে তারা। সেখানে জিতলে ফাইনালে সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে মোনাকো। আর লিগ ওয়ানে লিলের চেয়ে ১ পয়েন্টে পিছিয়ে দুই নম্বরে আছে পিএসজি। ম্যাচ বাকি আর তিনটি।