ফুটবলের সামান্যতম অনুসারী হলেও ভিয়েরিকে না চেনার কারণ নেই। ইতালির হয়ে ৮ বছরের ক্যারিয়ারে ৪৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ২৩ গোল। ১৯৯৮ বিশ্বকাপে করেন ৫ গোল, ২০০২ বিশকাপে ৪টি। প্রায় দুই দশকের ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ারে খেলেছেন তিনি ইউভেন্তুস, ইন্টার মিলান, এসি মিলান, আতলেতিকো মাদ্রিদের মতো ইউরোপের শীর্ষ ক্লাবে।
ইতালির একজনের পক্ষে অবশ্য বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হওয়া কঠিন। ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়ের ধারেকাছেও নেই দেশটি। এখানেও ভিয়েরির জীবনে আছে গল্প।
জন্ম ইতালিতে হলেও তার ছেলেবেলা কেটেছে অস্ট্রেলিয়ায়। ৪ বছর বয়স থেকে বছর দশেক ছিলেন সেখানে। ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় ও ভালোবাসা জন্ম নেয় সেখানেই। সেই গল্পই সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে শুনিয়েছেন ৪৭ বছর বয়সী ভিয়েরি।
“ব্যাপারটা একটু অদ্ভুত বটে, আমার বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে সবকিছুই ছিল স্বাভাবিক- স্কুলে যাওয়া, ক্রিকেট, ফুটবলসহ নানাবিধ খেলায় খেলা। ক্রিকেটের বড় ভক্ত ছিলাম আমি।”
“এমনকি ১৩-১৪ বছর বয়সে সিডনিতে অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট, ওয়ানডে ম্যাচ খেলা দেখতে যেতাম আমরা। অনেক বড় ক্রিকেট অনুরাগী আমি।”
পরে বদলে গেছে তার ক্যারিয়ারের বাঁক। ২২ গজে বোলারদের যম হতে পারেননি, প্রতিপক্ষের বক্সে হয়ে ওঠেন ডিফেন্ডারদের জন্য আতঙ্ক। রান করার বদলে করেছেন গোল।
তবে ভেতরের ক্রিকেটার সত্ত্বা প্রায়ই নাড়া দেয় তাকে। নিজেই ভাবেন, সাদা বলের ক্রিকেটের জন্য বেশ মানানসই হতে পারতেন তিনি।
“আমার মনে হয়, আমার খেলার ধরনটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইলের মতো। আমি বাঁহাতি। টেস্ট ঘরানার নই একদমই। যখন খেলতাম, বল স্টেডিয়ামের বাইরে আছড়ে ফেলতে চাইতাম। আমার ধারণা, ভালো হতে পারতাম আমি।”
“আমি খেলতে ভালোবাসি। স্কুলে সম্ভবত ফুটবলের চেয়ে ক্রিকেটই বেশি খেলতাম। টেনিস বলে টেপ জড়িয়ে নিতাম, যাতে গতির পাশাপাশি সুইংও মেলে। আমার মনে হয়, যদি ক্রিকেট খেলতাম, বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান হতে পারতাম। অলরাউন্ডার ছিলাম, আসলেই ভালো ছিলাম।”
ক্রিকেটার না হলেও ক্রিকেটের প্রতি ভিয়েরির ভালোবাসা এত বছর পরও কমেনি একটুও। এখন তার মনের খোরাক জোগায় ইউটিউব। ভিভ রিচার্ডস, জোয়েল গার্নার, ক্লাইভ লয়েডদের মতো কিংবদন্তিদের চির অম্লান সেই পারফরম্যান্সগুলো দেখেন নিয়মিতই। এসব দেখে তার ক্রিকেট অজ্ঞ স্ত্রী আকাশ থেকে পড়েন।
“সে ফোন কেড়ে নেয় আমার থেকে। ইউটিউবে আমি অনেক ক্রিকেট খেলা দেখি। আমার স্ত্রী সবসময় বলে, ‘কি দেখো এগুলো? কী এসব!’ প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে ১৯৮৪-৮৬ সালের ম্যাচগুলো যখন দেখি, সে বলে, ‘তোমার সমস্যাটা কি? কেন এমন অস্বাভাবিক!’ আমি বলি, ‘শোনো, আমি যেখানে বড় হয়েছি। ওই দিনগুলোতে আমি সেখানে ক্রিকেট অনুসরণ করতাম।”
ফুটবলকে বিদায় বলেছেন তিনি অনেক আগেই। ভিয়েরির মাথায় এসেছে নতুন ভাবনা। ইতালিতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি হলেই পুনরায় ব্যাট-প্যাড পরে নেমে যেতে চান ২২ গজে।
“কিছুটা গরম পড়লে বাইরে বের হওয়া যখন সহজ হবে, ইচ্ছা আছে ইতালি ক্রিকেট দলের অনুশীলনে যোগ দেওয়ার। প্যাড, গ্লাভস পরে দেখতে চাই বল কতটা জোরে আসে। আমার মনে হয়, দারুণ অভিজ্ঞতা হবে!”