আবাহনীকে হারিয়ে ফাইনালে বসুন্ধরা কিংস

দুই পরাশক্তির জমজমাট লড়াইয়ে প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া বসুন্ধরা কিংস বিরতির পর সমতা টানে। অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অর্ধে শিরোপাধারীদের এগিয়ে নেন রাউল অস্কার বেসেরা। যোগ করা সময়ে ব্যবধান আরও বাড়ান জোনাথন দে সিলভেইরা ফের্নান্দেস। প্রতিযোগিতার রেকর্ড ১১ বারের চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে ফেডারেশন কাপের ফাইনালে উঠেছে অস্কার ব্রুসনের দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Jan 2021, 12:56 PM
Updated : 7 Jan 2021, 01:45 PM

বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ৩-১ গোলে জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। আগামী রোববার ফাইনালে তারা মুখোমুখি হবে প্রথম সেমি-ফাইনালে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ৩-০ গোলে হারিয়ে আসা সাইফ স্পোর্টিংয়ের।

শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবলের পসরা মেলা বসুন্ধরা কিংস গোলের সুযোগ পেলেও বঞ্চিত হচ্ছিল। দ্বাদশ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান রবসন দি সিলভা রবিনিয়োর ডি-বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শট পোস্ট লেগে ফেরে। পাঁচ মিনিট পর ইরানের ডিফেন্ডার খালেদ শাফিইয়ের কাটব্যাকে আর্জেন্টাইন বংশোদ্ভূত চিলিয়ান ফরোয়ার্ড বেসেরার শট শহিদুল আলম সোহেল ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ফেরান।

রক্ষণ সামলে খেলতে থাকা আবাহনী প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণ শানায় ২০তম মিনিটে। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার রাফায়েল অগাস্তো সান্তোস দা সিলভার ফ্রি কিকে কেরভেন্স ফিলস বেলফোর্টের হেড তালুবন্দি করেন আনিসুর রহমান জিকো। আবাহনীর এই হাইতিয়ান ফরোয়ার্ডকে ম্যাচজুড়ে কড়া পাহারায় রাখেন রিমন-তপুরা।

তিন মিনিট পর সিলভার পাস ধরে আফগানিস্তানের ডিফেন্ডার মাসিহ সাইঘানির শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে যায়। ৩০তম মিনিটে বিশ্বনাথ ঘোষের শটও উড়ে যায় একইভাবে; হতাশা বাড়ে সর্বশেষ ২০১৮ সালে ফেডারেশন কাপ জেতা আবাহনীর।

গোছালো আক্রমণ থেকে ৩১তম মিনিটে এগিয়ে যায় আবাহনী। ডান দিক দিয়ে বেলফোর্টের থ্রু পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ফ্রান্সিসকো রদ্রিগেজ দে সৌজা ফিলহো কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন। প্রথমার্ধের শেষ দিকে রাফায়েলের লব বুক দিয়ে নামিয়ে ফিলহোর জোরালো শট জিকো ফেরালে দ্বিগুণ হয়নি ব্যবধান।

বিপলু আহমেদ ও অকারণ ছোটাছুটিতে সুযোগ নষ্ট করা ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিলকে তুলে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আলমগীর কবির রানা ও মতিন মিয়াকে নামান বসুন্ধরা কিংস কোচ। তাতে দলটির খেলায় গতি বাড়ে।

৫১তম মিনিটে সমতার স্বস্তি ফিরে বসুন্ধরা কিংসের তাবুতে। রানার পাস ধরে ডি-বক্সে ঢুকে এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড জোনাথন দি সিলভেইরার ডান পায়ের শট ক্রসবারের ভেতরের কানায় লেগে গোললাইন পেরিয়ে ড্রপ খেয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। তখন আবার বেসেরা হেডে বল জড়ান গোল। অবশ্য বল আগেই গোললাইন পেরুনোয় গোল পেয়েছেন জোনাথনই।

ফাইনালে সাইফ স্পোটিংয়ের মুখোমুখি হবে বসুন্ধরা কিংস

চোট পাওয়া সাইঘানিকে ৭১তম মিনিটে তুলে মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলামকে নামান আবাহনী কোচ। নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডারের অনুপস্থিতি ভালোভাবেই সামলেছেন বাকিরা।

ছয় মিনিট পর জোনাথনের বাড়ানো বল ধরে মতিনের আড়াআড়ি ক্রসে হেড নিতে পারেননি বেসেরা। একটু পর চিলিয়ান এই ফরোয়ার্ডের দূরের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদের প্রচেষ্টা বাইরে দিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে ডি-বক্সে ঢুকে শট নিতে দেরি করে সুযোগ নষ্ট করেন কিংসের রবিনিয়ো। এরপর ডান দিক থেকে আবাহনীর ফিলহোর ক্রসে বেলফোর্টের হেড বাইরের জাল কাঁপায়। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথম অর্ধে মিডফিল্ডার মাশুক মিয়া জনিকে তুলে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে নামান ব্রুসন। এ পর্বে প্রতিপক্ষ গোলরক্ষকের তেমন কোনো পরীক্ষা নিতে পারেনি কোনো দল।

অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় অর্ধের শুরুতেই সতীর্থের লম্বা ক্রসে বেসেরার হেড পাস গোলমুখে থাকা জোনাথন বুক দিয়ে নামিয়ে শট নেওয়ার আগেই আবাহনীকে বিপদমুক্ত করেন নাসির উদ্দিন।

১০৯তম মিনিটে জোনাথনের বাড়ানো বল ধরে মতিন মিয়া ডান দিক থেকে ক্রস বাড়ান ছোট ডি-বক্সে। প্রথম ছোঁয়ায় বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঠাণ্ডা মাথার শটে বসুন্ধরাকে এগিয়ে নেন বেসেরা। মতিনকে আটকাতে শহিদুল আগেই বেরিয়ে যাওয়ায় ফাঁকা পোস্ট আগলে রাখতে পারেননি ডিফেন্ডাররা।

শেষ দিকে ফিলহো কাঁধ দিয়ে বল নামিয়ে দেওয়ার পর নাবিব নেওয়াজ জীবন হাঁটুর টোকায় জাল খুঁজে পেলেও অফসাইডের কারণে গোল হয়নি। এ নিয়ে উত্তেজনা ছড়ায়। লাইন্সম্যানকে জেঁকে ধরেন আবাহনীর খেলোয়াড়রা। ধাক্কাধাক্কির ঘটনাও ঘটে। পরে আবাহনীর স্টাফ, কর্মকর্তারা শান্ত করেন দলকে।

মিনিট দশেক বন্ধ থাকার পর শুরু হয় খেলা। যোগ করা সময়ে রবিনিয়োর ছোট পাস ধরে জোনাথন জাল খুঁজে নিলে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় বসুন্ধরা কিংস। একটু পরই শেষের বাঁশি বাজলে ফাইনালে ওঠার উৎসবে মাতে ব্রুসনের দল।