একের পর এক কোচ বদল, ক্লাব পরিচালকদের পদত্যাগ, করোনাভাইরাসের থাবায় ভঙ্গুর অর্থনীতি, মাঠের বাজে পারফরম্যান্স, লিওনেল মেসির ক্লাব ছাড়তে চাওয়া, এরপর তোপের মুখে সভাপতি জোজেপ মারিয়া বার্তোমেউয়ের পদত্যাগ-সব মিলিয়ে ক্লাবটির ইতিহাসের হতাশাময় বছরগুলোর একটি এই ২০২০।
জানুয়ারি
এস্পানিওলের বিপক্ষে কাতালান ডার্বি দিয়ে বছর শুরু হয়েছিল বার্সেলোনার। প্রথম ম্যাচেই পয়েন্ট হারায় সেই সময়ের এরনেস্তো ভালভেরদের দল।
এই মাসেই স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমি-ফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদের কাছে হারের পর ছাঁটাই হন ভালভেরদে।
কোচ হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে দলটির কিংবদন্তি ফুটবলার চাভি এরনান্দেসের কাছে যান ওস্কার গুরু ও এরিক আবিদাল। কিস্তু বার্সেলোনার দুই কর্মকর্তাকে ‘না’ বলে দেন সাবেক অধিনায়ক।
নতুন কোচ কিকে সেতিয়েনের কোচিংয়ে শুরুটা ভালো হয়নি দলটির। কোপা দেল রেতে ইবিজার বিপক্ষে কষ্টের জয়ের পর লিগে তারা হারে ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে।
ফেব্রুয়ারি
বছরের সবচেয়ে ছোট মাসটি বার্সেলোনার জন্য ছিল ঘটনাবহুল। খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলায় স্পোর্টিং ডিরেক্টর আবিদালের কড়া জবাব দেন মেসি।
লিগে সময়টা ভালো কাটলেও আথলেতিক বিলবাওয়ের বিপক্ষে হেরে কোপা দেল রের শেষ আট থেকে বিদায় নেয় তারা।
মার্চ
ক্লাসিকোয় রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে ২-০ গোলে হেরে মার্চ মাস শুরু করে বার্সেলোনা।
সাইডলাইনে অশালীন আচরণের জন্য শিরোনাম হন সহকারী কোচ এদের সারাবিয়া। পরে তার জন্য ক্ষমা চান প্রধান কোচ সেতিয়েন।
রিয়াল সোসিয়েদাদের বিপক্ষে ১-০ গোলে তাদের জয়ের পর করোনাভাইরাসের আঘাতে বন্ধ হয়ে যায় ফুটবল, যা বার্সেলোনা সমর্থকদের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী ফুটবলপ্রেমীদের জন্য ছিল হতাশার।
এপ্রিল
লকডাউনের কারণে খেলা বন্ধ থাকলেও আলোচনায় ঠিকই ছিল বার্সেলোনা। অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়ে পদত্যাগ করেন ক্লাবের বেশ কয়েকজন পরিচালক।
মে
সেমি-লকডাউনের মধ্যে লিগ শুরুর প্রস্তুতি শুরু করে দলগুলো।
জুন
মাঠে ফেরে ফুটবল। রিয়াল মায়োর্কাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করে বার্সেলোনা।
জুলাই
বার্সেলোনার লিগ জয়ের আশা প্রায় শেষ হয়ে যায়। ১৬ জুলাই ঘরের মাঠে ওসাসুনার বিপক্ষে হেরে যায় সেতিয়েনের দল, সেই রাতেই শিরোপা নিশ্চিত করে রিয়াল।
এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মনোনিবেশ করে বার্সেলোনা। যদিও এর শেষটা হয় ভীষণ বাজে।
অগাস্ট
কাম্প নউয়ের দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে নাপোলিকে ৩-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আটে ওঠে বার্সেলোনা। এরপর বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ৮-২ গোলে হেরে বিদায় নেয় তারা।
এক যুগের মধ্যে প্রথমবার শিরোপাশূন্য মৌসুম শেষ হয় বার্সেলোনার। ছাঁটাই হন সেতিয়েন, আসেন রোনাল্ড কুমান।
এই মাসেই ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়ে ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার ইচ্ছা জানিয়ে বার্সেলোনাকে বার্তা পাঠান মেসি।
সেপ্টেম্বর
দলের বেশ কয়েকজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে ছেড়ে দেয় বার্সেলোনা। মাসের শেষ দিকে ভিয়ারিয়ালকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে নতুন মৌসুম শুরু করে দল, কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু হয় কুমানের।
অক্টোবর
গেতাফের বিপক্ষে হারের পর মৌসুমের প্রথম ক্লাসিকোয় ঘরের মাঠে হেরে যায় বার্সেলোনা।
সমর্থকরা প্রেসিডেন্ট বার্তোমেউয়ের পদত্যাগের জোরালো দাবি তোলেন। তোপের মুখে অনাস্থা ভোটের আগেই মাসের শেষের দিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বার্তোমেউ।
নভেম্বর
সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে পাঁচ ম্যাচের চারটিতে জেতে বার্সেলোনা, একমাত্র হার লিগে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে।
তবে আঘাত হানে চোট। লম্বা সময়ের জন্য ছিটকে যান পিকে, সের্হি রবের্তো ও আনসু ফাতি।
ডিসেম্বর
বছরের শেষ মাসের শুরুর দিকে লা লিগায় কাদিস ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইউভেন্তুসের বিপক্ষে হেরে যায় বার্সেলোনা। লিগ টেবিলে আরও পিছিয়ে পড়ে কুমানের দল। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় ওঠে গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে। যেখানে তারা প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে পিএসজিকে।
ভালেন্সিয়ার পর এইবারের বিপক্ষে হোঁচট, ঘরের মাঠে টানা দুই ম্যাচে পয়েন্ট হারিয়ে বছর শেষ হয় দলটির। দুই ম্যাচ বেশি খেলেও শিরোপা দৌড়ে ৭ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে তারা। হতাশ কোচ কুমানের মতে, এই অবস্থা থেকে লিগ জেতা কঠিন।