মেসির রেকর্ড গড়ার রাতে পুরনো রূপে বার্সা

মৌসুমের শুরু থেকে অ্যাওয়ে ম্যাচে ভীষণ ভুগতে থাকা বার্সেলোনা অবশেষে যেন সেই ব্যর্থতা পেছনে ফেলল। রিয়াল ভাইয়াদলিদের বিপক্ষে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দাপুটে ফুটবল খেলল তারা। পেলেকে ছাপিয়ে যাওয়ার দিনে দুই সতীর্থের গোলেও অবদান রাখলেন লিওনেল মেসি। অধিনায়কের জাদুকরী পারফরম্যান্সে দুর্দান্ত এক জয় পেল রোনাল্ড কুমানের দল। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2020, 10:52 PM
Updated : 22 Dec 2020, 11:16 PM

অবনমন অঞ্চলের দল ভাইয়াদলিদের মাঠে মঙ্গলবার রাতে লা লিগার ম্যাচটি ৩-০ গোলে জিতেছে নিজেদের খুঁজে ফেরা বার্সেলোনা। ক্লেমোঁ লংলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন মার্টিন ব্রাথওয়েট।

প্রথমার্ধের পুরোটা আধিপত্য করা বার্সেলোনা পুরো ম্যাচে অধিকাংশ সময় বল দখলে রেখে গোলের উদ্দেশে মোট ২১টি শট নেয়, যার ১০টি ছিল লক্ষ্যে। অসংখ্য সুযোগ নষ্ট না হলে এবং ভাগ্য বিরূপ না হলে ব্যবধান হতে পারতো অনেক বেশি।

আগের চার রাউন্ডে মাত্র একটিতে জেতা ভাইয়াদলিদের বিপক্ষে শুরুটা দারুণ হতে পারতো বার্সেলোনার। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে মেসির প্রথম ছোঁয়ায় নেওয়া শট পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়।

২০তম মিনিটে পেদ্রির সঙ্গে বল দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকেই আর্জেন্টাইন তারকার আরেকটি জোরালো শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক।

পরের মিনিটে ওই কর্নার থেকেই গড়ে ওঠা আক্রমণে বাঁ দিক থেকে মেসির দারুণ ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে লাফিয়ে হেডে দলকে এগিয়ে নেন লংলে। বল গোলরক্ষকের হাতে লেগে জালে জড়ায়। আসরে ফরাসি ডিফেন্ডারের এটা প্রথম গোল।

এগিয়ে গিয়ে বার্সেলোনার সবাই যেন একসঙ্গে তেতে ওঠে। একের পর এক আক্রমণে কোণঠাসা করে ফেলে প্রতিপক্ষকে।

৩৫তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করা গোলে যেন দেখা মেলে সেই পুরনো বার্সেলোনার। পাসিং ফুটবলের পসরা সাজিয়ে ওঠা আক্রমণে তিন জনের মধ্যে ঘিরে থাকা অবস্থায় দুর্দান্ত এক সাইড-ফুট ফ্লিকে মেসি পাস দেন ডান দিকে, ওখানে সের্জিনো দেস্ত প্রথম ছোঁয়ায় ছোট ডি-বক্সে নিচু ক্রস বাড়ান আর পা বাড়িয়ে নিখুঁত টোকায় গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ব্রাথওয়েট।    

প্রতিপক্ষের টানা আক্রমণের মুখে প্রথমার্ধের অধিকাংশ সময়ে ভাইয়াদলিদের সব খেলোয়াড়কে নিজেদের ডি-বক্সের আশেপাশে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়।

দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে শুরু করা বার্সেলোনা আবারও গোল পেতে পারতো ৫১তম মিনিটে। কিন্তু এবার লক্ষ্যে শট রাখতে পারেননি ব্রাথওয়েট। দুই মিনিটে পর স্বাগতিক মিডফিল্ডার পাবলো হারভিয়াসের ফ্রি-কিক পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।

এক ক্লাবের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের তালিকায় পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকা মেসি সুযোগ পান ৫৮তম মিনিটে। কাছের পোস্ট ঘেঁষে নেওয়া তার শট ঝাঁপিয়ে ফেরান গোলরক্ষক।

তার অপেক্ষা অবশ্য দীর্ঘ হয়নি। ৬৫তম মিনিটে রেকর্ড গড়া গোলটি করেন মেসি। পেদ্রির ব্যাক হিলে ডি-বক্সে বল পেয়ে প্রথম ছোঁয়ায় ডিফেন্ডারদের বাধা এড়িয়ে নিখুঁত শটে ঠিকানা খুজে নেন তিনি।

ক্যারিয়ারের শুরু থেকে কাতালান ক্লাবটির হয়ে খেলা আর্জেন্টাইন তারকার এটি বার্সেলোনার জার্সিতে ৬৪৪তম গোল। সান্তোসের হয়ে ফুটবল কিংবদন্তি পেলে করেছিলেন ৬৪৩ গোল।

এই অর্ধে প্রতি-আক্রমণে কিছুটা পাল্টা জবাব দেওয়া ভাইয়াদলিদ ৭২তম মিনিটে মুহূর্তের ব্যবধানে দারুণ দুটি সুযোগ পেয়েছিল; কিন্তু মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের বাধা পেরুতে পারেনি। ওরিয়ানার জোরালো শট ঠেকানোর পর পেরেসের ফলোআপ শটও দারুণ নৈপুণ্যে ঠেকিয়ে দেন জার্মান গোলরক্ষক।

শেষ দিকে বদলি নামা ফিলিপে কৌতিনিয়োর নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে নেওয়া জোরালো শট পোস্টের নিচে বাধা পায়। দুই মিনিট পর মেসির শটও পোস্টে বাধা পেলে ব্যবধান আর বাড়েনি।

গত ১ অক্টোবরের পর অ্যাওয়ে ম্যাচে প্রথম জয় পেল বার্সেলোনা। মাঝের চারটি অ্যাওয়ে ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছিল তারা; গেতাফে, আতলেতিকো মাদ্রিদ ও কাদিসের বিপক্ষে। ড্র করেছিল আলাভেসের মাঠে।

১৪ ম্যাচে সাত জয় ও তিন ড্রয়ে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে আছে বার্সেলোনা।

দিনের আরেক ম্যাচে রিয়াল সোসিয়েদাদের মাঠে ২-০ গোলে জেতা আতলেতিকো মাদ্রিদ ১৩ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে আছে শীর্ষে। ১৪ ম্যাচে ২৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে রিয়াল মাদ্রিদ।

১৬ ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে সোসিয়েদাদ। চার নম্বরে থাকা ভিয়ারিয়ালের পয়েন্টও ২৬, তারা খেলেছে ১৫ ম্যাচ।