মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আরএআই স্পোর্ত-এ ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করছিলেন রস্সি। ইতালিয়ান এই টিভি চ্যানেলটিই বৃহস্পতিবার নিশ্চিত করেছে তার মৃত্যুর খবর। পরে রস্সির স্ত্রী টুইটারে দুজনের একটি ছবি দিয়ে ক্যাপশনে লিখেন, “ফরএভার।”
রস্সির মৃত্যুর কারণ আনুষ্ঠানিকভাবে জানা যায়নি। তবে আরএআই স্পোর্ত জানায় ‘অনারোগ্য রোগ’ কেড়ে নিয়েছে তাকে।
বিশ্বকাপ জয়ের পাশাপাশি ইউভেন্তুসের হয়ে দুটি সিরি আ, একটি করে ইউরোপিয়ান কাপ, কোপা ইতালিয়া ও উয়েফা সুপার কাপ জেতেন রস্সি। তবে ফুটবলে তিনি অমর হয়ে থাকবেন ১৯৮২ বিশ্বকাপে অভাবনীয় পারফরম্যান্সের জন্য।
স্পেনে অনুষ্ঠিত ওই বিশ্বকাপে রস্সির খেলারই কথা ছিল না। ম্যাচ পাতানোয় জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯৮০ সালে ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় তাকে। তিনি অবশ্য বরাবরই সেই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অবিচারের শিকার হয়েছিলেন। সেই নিষেধাজ্ঞা পরে দুই বছরে কমিয়ে আনা হলে বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ মেলে তার।
তাকে বিশ্বকাপ দলে নেওয়ার পর ইতালিয়ান সংবাদমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা হয় যে, তার ফিটনেস ও সার্বিক অবস্থা মাঠে নামার মতো অবস্থায় নেই। কিন্তু সেই রস্সিই জন্ম দেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা পারফরম্যান্সগুলোর একটি।
এখানেই অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করে ব্রাজিলকে বিদায় করে দেন রস্সি। জিকো-সক্রেতিস-ফালকাওয়ের ওই ব্রাজিল দলকে অনেকেই মনে করেন ফুটবল ইতিহাসের সেরা দল। রস্সির সেই ম্যাচের পারফরম্যান্স এখনও জায়গা পায় বিশ্বকাপ ইতিহাসের সেরা পারফরম্যান্সগুলোর ছোট্ট তালিকায়।
এরপর সেমি-ফাইনালে পোলান্ডের বিপক্ষে রস্সি উপহার দেন জোড়া গোল। ফাইনালেও পশ্চিম জার্মানির বিপক্ষে দলের ৩-১ ব্যবধানের জয়ে প্রথম গোল করেন রস্সি। ১৯৩৮ বিশ্বকাপের পর প্রথম শিরোপার স্বাদ পায় ইতালি।
বিশ্বকাপে সেবার গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল জেতেন তিনি। সে বছর জিতে নেন ব্যালন ডি’অর ও ওয়ার্ল্ড সকারের বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মানও।
১৯৭৮ বিশ্বকাপেও রস্সি ৩ গোল করেছিলেন। ইতালি হয়েছিল চতুর্থ। বিশ্বকাপে তার মোট ৯ গোল এখনও ইতালির হয়ে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড।
জাতীয় দলের জার্সিতে তিনি শেষ ম্যাচ খেলেন ১৯৮৬ সালে। ক্লাব ফুটবল ক্যারিয়ারের পুরোটাই কাটিয়েছেন ইতালিতে। ইউভেন্তুসের হয়ে শিরোপা জিতলেও তার সেরা গোল স্কোরিং ফর্ম দেখা গেছে ভিসেনজায়। খেলেছেন এসি মিলানেও। অবসরের পর ফুটবল বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করে আসছিলেন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে।
রস্সির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর জার্মানির ১৯৯০ বিশ্বকাপজয়ী তারকা ইয়ুর্গেন ক্লিন্সমানের টুইটে ফুটে উঠেছে যেন ফুটবল বিশ্বের সবার কথা, “প্রিয় পাবলিতো, আমরা তোমাকে সবসময় মনে রাখব।”