রোনালদোর জোড়া গোলে বার্সাকে উড়িয়ে দিল ইউভেন্তুস

ম্যাচ জুড়ে বেশ ভালোই খেললেন লিওনেল মেসি। সুযোগ পেলেন, সুযোগ তৈরি করলেন; কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় বল পাঠাতে পারলেন না। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর পায়ে অতটা বল দেখা গেল না, তবে দুটি সফল পেনাল্টিতে মূল কাজটা সেরে ফেললেন তিনি। তাতে তৈরি হয়ে গেল ম্যাচের ব্যবধানও। বার্সেলোনাকে তাদেরই মাঠে উড়িয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলো ইউভেন্তুস।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2020, 09:53 PM
Updated : 8 Dec 2020, 10:40 PM

কাম্প নউয়ে মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘জি’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতেছে ইউভেন্তুস। রোনালদোর দুই গোলের মাঝে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের দ্বিতীয় গোলটি করেন ওয়েস্টন ম্যাককেনি।

২০১৬ সালের পর এই প্রথম গ্রুপ পর্বের ম্যাচে হারল বার্সেলোনা।

ম্যাচের ফলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে ইউভেন্তুস গোলরক্ষক জানলুইজি বুফ্ফনেরও। মূলত অভিজ্ঞ এই ইতালিয়ান গোলরক্ষকের দেয়ালই ভাঙতে পারেননি মেসি। লক্ষ্যে সাতটি শট ছিল তার, এর একটিও জালে যায়নি।

গত অক্টোবরে প্রথম দেখায় ইউভেন্তুসের মাঠে ২-০ গোলে জিতেছিল বার্সেলোনা। গ্রুপ পর্বে টানা পাঁচ জয়ের পর প্রথম হারের স্বাদ পেল বার্সেলোনা।

সব প্রতিযোগিতা মিলে এই নিয়ে টানা দুই ম্যাচ হারল বার্সেলোনা। গত শনিবার লা লিগায় নবাগত কাদিসের মাঠে বিবর্ণ পারফরম্যান্সে তারা হেরেছিল ২-১ গোলে।    

শীর্ষস্থানের হাতছানি, সঙ্গে ঘরের মাঠে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনায় শুরুটা দুর্দান্ত করে ইউভেন্তুস। শুরুর ২০ মিনিটে মধ্যে দুই গোল করে নিয়ন্ত্রণ নেয় পিরলোর দল।

প্রথম সুযোগটি তারা পেয়েছিল নবম মিনিটে। তবে বাঁ দিক থেকে সতীর্থের বাড়ানো বল ডি-বক্সে পেয়ে তুলনামুলক ভালো পজিশনে থাকা হুয়ান কুয়াদরাদোকে পাস না দিয়ে গোলরক্ষক বরাবর শট নেন রোনালদো। চার মিনিট পর তার সফল স্পট কিকেই এগিয়ে যায় সফরকারীরা।

বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া রোনালদোকে ফাউল করে বসেন চোট কাটিয়ে এক মাস পর সম্প্রতি ফেরা ডিফেন্ডার রোনালদো আরাহো। পেনাল্টির বাঁশি বাজাতে দ্বিতীয়বার ভাবতে হয়নি রেফারিকে। গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে সোজাসুজি শটে বল জালে পাঠান পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।

আসরে টানা তিন ম্যাচে গোল পেলেন রোনালদো। ইউরোপ সেরা প্রতিযোগিতায় বার্সেলোনার বিপক্ষে এই প্রথম জালের দেখা পেলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক ফুটবলার।

২০তম মিনিটে দারুণ নৈপুণ্যে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ম্যাককেনি। ডান দিক থেকে কুয়াদরাদোর ক্রস ছয় গজ বক্সের বাইরে পেয়ে শরীর পুরো শূন্যে ভাসিয়ে ডান পায়ের ভলিতে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই মিডফিল্ডার।

দুই মিনিট পর ব্যবধান কমার সম্ভাবনা জেগেছিল; তবে মেসির দূরপাল্লার নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ৪২ বছর বয়সী গোলরক্ষক বুফ্ফন। প্রথমার্ধেরে শেষ পাঁচ মিনিটে বেশ চাপ বাড়ায় বার্সেলোনা। মেসির সামনে আবারও সুযোগ এসেছিল, কিন্তু এবার গোলরক্ষক বরাবর শট নেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে রোনালদোর দ্বিতীয় গোলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যায় ইউভেন্তুস। বার্সেলোনার ডি-বক্সে ডিফেন্ডার ক্লেমোঁ লংলের হাতে বল লাগলে ভিএআরের সাহায্যে পেনাল্টির বাঁশি বাজার রেফারি। এবার জোরালো কোনাকুনি শটে গোলটি করেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রেকর্ড গোলদাতা। প্রতিযোগিতায় তার মোট গোল হলো ১৩৪টি।

ছয় মিনিট পর ভাগ্যের ফেরে গোল পায়নি বার্সেলোনা। মেসির ফ্রি-কিকে গ্রিজমানের হেড পোস্টে বাধা পায়। ৬৫তম মিনিটে আবারও মেসিকে বিমুখ করেন বুফ্ফন; এবারও তারকা প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন অভিজ্ঞ ইতালিয়ান গোলরক্ষক। খানিক পর মেসি বাঁকানো ফ্রি-কিকে রক্ষণ প্রাচীরের ওপর দিয়ে বল পাঠালেও শেষ পর্যন্ত চলে যায় বুফ্ফন বরাবর।

৭০তম মিনিটে বার্সেলোনার পক্ষে পেনাল্টির বাঁশি বাজিয়েছিলেন রেফারি; তবে আগমুহূর্তে গ্রিজমান অফসাইডে থাকায় সেটাও বাতিল হয়ে যায়। ৭৬তম মিনিটে খুব কাছ থেকে বোনুচ্চি জালে বল পাঠিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেওয়ার উচ্ছাসে মেতেছিলেন; কিন্তু অফসাইডে ছিলেন তিনি।

নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে আবারও মেসিকে হতাশ করেন বুফ্ফন। ডি-বক্সের মুখ থেকে তার বাঁ পায়ের শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান আগামী জানুয়ারিতে ৪৩ বছর পূর্ণ করার অপেক্ষায় থাকা বিশ্বকাপজয়ী এই গোলরক্ষক।

ছয় ম্যাচে পাঁচ জয়ে ইউভেন্তুসের পয়েন্ট ১৫। নকআউট পর্বে তাদের সঙ্গী বার্সেলোনার পয়েন্টও ১৫।

অন্য ম্যাচে ফেরেন্সভারোসকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগে খেলা নিশ্চিত করেছে দিনামো কিয়েভ। তাদের পয়েন্ট ৪। ১ পয়েন্ট নিয়ে তলানিতে হাঙ্গেরির দলটি।