কাতারের বিপক্ষে উপভোগের মন্ত্র কোচের

প্রীতি ম্যাচ, প্রস্তুতি ম্যাচের পর্ব শেষ। এবার অপেক্ষা মূল লড়াইয়ের। প্রতিপক্ষ এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতার। জেমি ডেও আঁটঘাঁট বেঁধে কষছেন ছক। রক্ষণের ফাঁক-ফোকর, রক্ষণ-মাঝমাঠের বোঝাপড়ার কমতি ও ফিনিশিংয়ের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার প্রাণান্ত চেষ্টা চলছে। প্রত্যাশা একটাই-নিজেদের সেরাটা মেলে ধরে ম্যাচটা উপভোগ করুক দল।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2020, 11:01 AM
Updated : 3 Dec 2020, 11:01 AM

২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের ‘ই’ গ্রুপের প্রিলিমিনারি রাউন্ডের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচে আগামী শুক্রবার কাতারের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। প্রথম লেগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের আয়োজকদের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল ডের দল।

নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচের আগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ডে। সেরে উঠে গত বুধবার কাতারে নোঙর ফেলেছেন। দলের সঙ্গে না থাকলেও তার নির্দেশনায় স্টুয়ার্ট ওয়াটকিসের অধীনে চলেছে অনুশীলন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় দলের রক্ষণ, মাঝমাঠ, আক্রমণভাগের শক্তি-দুর্বলতা নিয়ে কোচ বলেছেন অনেক কথাই।

প্রীতি ও প্রস্তুতি ম্যাচের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্টি

দেশে নেপালের বিপক্ষে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচের প্রথমটিতে বাংলাদেশ জিতেছিল ২-০ গোলে। গোল পেয়েছিলেন নাবীব নেওয়াজ জীবন ও বদলি ফরোয়ার্ড মাহবুবুর রহমান সুফিল। কাতারে গিয়ে দুই প্রস্তুতি ম্যাচেই হারে দল। আর্মি দলের বিপক্ষে ৩-২ ব্যবধানের হারা ম্যাচে লক্ষ্যভেদ করেছিলেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম, এম এস বাবলু। লুসাইল ক্লাবের কাছে হেরেছিল ১-০ গোলে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত মার্চ থেকে বন্ধ থাকা জামাল-জীবনরা মাঠে ফিরেন গত অক্টোবরের শেষ দিকে। কাতার ম্যাচের জন্য তাই প্রস্তুতির সময় মেলেনি যথেষ্ট। ম্যাচের ফলের চেয়ে খেলোয়াড়দের ফিটনেস ফিরে পাওয়া, পরিকল্পনাগুলো একটু গুছিয়ে নিতেই মনোযোগী ছিলেন কোচ। জানালেন, সন্তুষ্টির কথাও।

“দুটি করে প্রীতি ও প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে ছেলেরা। তাদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। আমরা ফিটনেস ফিরে পাওয়ার দিকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি; কেননা, আমি মনে করি না, পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছি আমরা।”

রক্ষণ-মাঝমাঠের বোঝাপড়ায় স্বস্তি

নেপালের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচের সিরিজে রক্ষণ ছিল দারুণ জমাট। ক্লিনশিট নিয়ে শেষ করেছিল দল। বিশ্বনাথ ঘোষ, রহমত মিয়া, রিয়াদুল হাসান ও তপু বর্মন মিলে দারুণ সামলেছিলেন সব। কাতারের প্রস্তুতি ম্যাচে প্রতিপক্ষের ফরোয়ার্ডদের আটকে রাখতে পারেনি রক্ষণভাগ। তবে রক্ষণের ছোটখাটো ভুল দীর্ঘদিন পর মাঠে ফেরার কারণে বলেই মনে করেন ডে।

“আমি মনে করি, নেপালের বিপক্ষে আমাদের রক্ষণভাগ খুবই ভালো পারফরম্যান্স করেছিল। দুটো ম্যাচেই আমরা ক্লিনশিট পেয়েছিলাম। নেপাল আমাদের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ভালো কোনো সুযোগই তৈরি করতে পারেনি। (রক্ষণের বোঝাপড়ার কমতি) মনে রাখতে হবে আমরা দীর্ঘদিন পর খেলায় ফিরেছি। গুছিয়ে ওঠার জন্য যথেষ্ট সময়ও পায়নি।”

বাছাইয়ের আগের চার ম্যাচে জামালের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে খেলেছেন বিপলু আহমেদ, সোহেল রানা। গত জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপে জামালের সঙ্গী ছিলেন মানিক হোসেন মোল্লা। প্রীতি ম্যাচ ও প্রস্তুতি ম্যাচেও খেলেছেন এই ২১ বছর বয়সী। কোচের মনে হচ্ছে মানিক থাকায় তার হাতে বিকল্প বেড়েছে।

“জামাল-মানিককে নিয়ে আমরা যে কম্বিনেশন সাজিয়েছি এবং আগের ম্যাচগুলোয় খেলিয়েছি, আমি মনে করি এতে আমাদের শক্তি বেড়েছে। মাঝমাঠে আমরা যে কম্বিনেশনের খোঁজে আছি, সেটা পাওয়া কঠিন। আসলে কাতার ম্যাচে আমি শুধু এই দুজনের উপর নির্ভর করছি না। সবার উপরই নির্ভর করছি।”

বড় ম্যাচে উপভোগের মন্ত্র

কাতারের বিপক্ষে খেলা গত পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যানে ২০০৬ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের সেই ১-১ ড্র বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি। পরের চার ম্যাচে যথাক্রমে ৪-০, ৪-১, ৩-০ ও ২-০ গোলে হার। ডেও মানছেন এবারও ফেভারিট কাতার।

ডের অধীনে এ পর্যন্ত ২১ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। নয়টি করে জয় ও হার; বাকি তিন ম্যাচ ড্র। ৪১ বছর বয়সী এই ইংলিশ কোচের কৌশলে বাছাইয়ে শক্তিশালী ভারতের সল্টলেক থেকে ড্র নিয়ে ফিরেছিল দল। নিজেদের সেরাটা মেলে ধরতে পারলে বড় দলকে আটকে দেওয়া যায়, সেটা দল দেখিয়েছিল কলকাতায়। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে ইব্রাহিম-জীবন-সাদ ত্রয়ীর বনিবনা স্বস্তি দিচ্ছে কোচকে। তিনিও চাইছেন, কাতারের বিপক্ষে বড় ম্যাচ উপভোগ করুক তার শিষ্যরা।

“(নেপাল ম্যাচে) জীবন গোল পাওয়ায় আমি খুশি। কোনো কারণ ছাড়াই সে সমালোচনার শিকার হয়। সাদ উদ্দিন সবসময় খুবই নিখুঁত (সলিড) এবং সেটা সে আবারও দেখিয়েছে। ইব্রাহিম উইংয়ে ভালো খেলছে।”

“কাতার শক্তিশালী দল; সবাই মনে করছে তারা সহজে জিতবে। ম্যাচটা ছেলেদের জন্য অনেক বড় অভিজ্ঞতা এবং আমি শুধু চাই ছেলেরা যতটা পারে ভালো খেলুক।”