‘কাতারের বিপক্ষে গোলের সুযোগ আসবেই’

বাছাইয়ের আগের চার ম্যাচে মাত্র ২ গোল-এই পরিসংখ্যানই বলছে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বাংলাদেশের স্কোরিং সমস্যা কতটা প্রকট। সুযোগ যে আসেনি, তা নয়। ফরোয়ার্ডরা তা কখনও কাজে লাগাতে পারেননি, কখনও হয়েছেন দুর্ভাগ্যের শিকার। নাবীব নেওয়াজ জীবনের বিশ্বাস, এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন কাতারের বিপক্ষেও তাদের সুযোগ আসবে। বাকিটা নির্ভর করছে কাজে লাগানোর ওপর।

মোহাম্মদ জুবায়েরমোহাম্মদ জুবায়েরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2020, 10:20 AM
Updated : 2 Dec 2020, 10:20 AM

২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের প্রিলিমিনারি রাউন্ডের দ্বিতীয় ধাপের ম্যাচে আগামী শুক্রবার কাতারের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ‘ই’ গ্রুপে প্রথম লেগে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের আয়োজকদের কাছে ২-০ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।

প্রতিপক্ষ সমমানের হলে গোল মেলে। নেপালের বিপক্ষে সর্বশেষ দুই প্রীতি ম্যাচের প্রথমটিতে জীবন ও মাহবুবুর রহমান সুফিল দারুণ গোল পেয়েছিলেন। তার আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে মোহাম্মদ ইব্রাহিম দুবার ও মতিন মিয়া একবার পেয়েছিলেন জালের দেখা। কিন্তু বড় দলের বিপক্ষে গোলের সংকট কাটেনি। কাতার ম্যাচ সামনে রেখে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে আলাপচারিতায় জীবন জানালেন সংকট কাটিয়ে ওঠার আশাবাদ।

দুই দল এ পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে পাঁচবার। ২০০৬ সালে এশিয়ান কাপের বাছাইয়ের সেই ১-১ ড্র বাংলাদেশের একমাত্র প্রাপ্তি। পরের চার ম্যাচে যথাক্রমে ৪-০, ৪-১, ৩-০ ও ২-০ গোলে হার। সব মিলিয়ে দুই গোল দিয়ে দল হজম করেছে ১৪টি।

আক্রমণভাগের বোঝাপড়া ধরে রাখতে হবে

বেশ কিছুদিন ধরে জীবনকে প্লেমেকারের ভূমিকায় রেখে ডান দিকে সাদ উদ্দিন ও বাঁ দিকে ইব্রাহিমকে খেলাচ্ছেন জেমি ডে। এই ত্রয়ীর নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া দারুণ। বাছাইয়ে ভারতের মাঠ থেকে ড্র নিয়ে ফেরা ম্যাচে, সর্বশেষ নেপালের বিপক্ষে খেলা দুই প্রীতি ম্যাচেও তারা ছড়িয়েছেন আলো। কাতার ম্যাচে এই বোঝাপড়া অটুট রাখতে দারুণ প্রত্যয়ী জীবন।

“এই কম্বিনেশনে ভারতের বিপক্ষে খেলেছি। নেপালের বিপক্ষে খেলেছি। কোচই ভালো বলতে পারবেন, কাতারের বিপক্ষেও একই কম্বিনেশনে খেলতে পারব কিনা। কেননা, ওরা আমাদের চেয়ে অনেক শক্তিশালী দল।”

“ওদের বিপক্ষে আমরা যারা আক্রমণভাগে খেলব, তারা খুব একটা সুযোগ পাব না-এটাই স্বাভাবিক। আমাকে যেহেতু আগের ম্যাচগুলোতে প্লেমেকারের জায়গায় কোচ খেলিয়েছেন, সাদ ও ইব্রাহিমের সঙ্গে আমার একটা বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। ওদের কাছ থেকে বলটা ঠিকমতো পেলে অল্প-স্বল্প যে সুযোগ আমরা পাব, সেটা কাজে লাগানোর সম্ভাবনা বেশি থাকবে।”

প্রথমার্ধে সঞ্চয় করতে হবে দ্বিতীয়ার্ধের সাহস

কাতারের বিপক্ষে প্রথম লেগে দুই অর্ধে একটি করে গোল হজম করেছিল দল; দ্বিতীয় গোলটি দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়। ভারতের বিপক্ষে জিততে জিততে ড্র করে আসা ম্যাচেও গোল খেয়েছিল শেষ দিকে। দুই অর্ধেই জমাট থাকা, মনোযোগ ধরে রাখা জরুরি। তবে জীবনের মনে ফিরতি লেগে কাতারকে প্রথমার্ধে গোলবঞ্চিত রাখা গেলে দ্বিতীয়ার্ধে আরও সাহসী হয়ে খেলতে পারবেন তারা।

“নেপালের বিপক্ষে দুই প্রীতি ম্যাচে আমরা যেভাবে খেলেছি, কাতার ম্যাচের হিসাবটা তার থেকে একেবারেই আলাদা। যদি প্রথম অর্ধে আমরা ওদের আটকে রাখতে পারি, তাহলে আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। প্রথমার্ধে ওদেরকে মোরালি ডাউন করে দিতে পারলে আমাদের জন্য ভালো হবে। তাহলে আক্রমণভাগে আমরা যারা খেলব, আরও সাহসী হয়ে খেলার সুযোগ পাব। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমাদের কমপ্যাক্ট থেকে খেলার চেষ্টা করতে হবে।”

গোলের সুযোগ আসবেই

হাঁটুর চোটে শুরুর দিকে কাতার যেতে পারেননি। চোটের উন্নতি হওয়ায় পরে যোগ দিয়েছেন দলের সঙ্গে। তাই সেখানে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচের একটিও খেলতে পারেননি জীবন। গুছিয়ে নেওয়ার জন্য ওই দুই ম্যাচই অবশ্য খেলেছেন আরেক ফরোয়ার্ড সুফিল। তবে গোল পাননি তিনি। আর্মি দলের কাছে ৩-২ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচে জালের দেখা পেয়েছিলেন ইব্রাহিম ও এস এম বাবলু।

গোলের জন্য যাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে দল, সেই সুফিলের দেশের হয়ে গোল ৩টি, সাদের ১টি, জীবনের ৫টি। সুযোগের সঙ্গে এই সংখ্যার অনেক ফারাক। ভারতের বিপক্ষে সল্ট লেকেই  জীবন একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছেন, তার শট শেষ মুহূর্তে গোললাইন থেকে ফিরেও এসেছে। ৩১ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড তাই আত্মবিশ্বাসী কাতার ম্যাচে সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে। কাজে লাগাতে চান প্রতিপক্ষের হাই-ডিফেন্স খেলার প্রবণতার সুযোগ।

“ওরা যেহেতু আক্রমণাত্মক খেলে অভ্যস্ত, আমাদের বিপক্ষে হয়ত ওভাবেই খেলবে। সেক্ষেত্রে ওদের ডিফেন্স বেশ উপরে উঠে আসবে, আমাদের সামনেও সুযোগ তৈরি হবে। আবার আমরা কিন্তু ওদের অর্ধে ওভাবে থাকতে পারব না, কখনও কখনও আমাদের রক্ষণে সাহায্য করার জন্য একটু নিচে নেমে আসতে হতে পারে। এই বিষয়গুলোতে আমাদের খুবই মনোযোগী থাকতে হবে।”

“তবে ওরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন, সুযোগ কিন্তু আমাদেরও আসবে। সেটা অল্প হলেও। আমরা যারা আক্রমণভাগে খেলব, আমাদের কখনই মনোযোগ হারালে চলবে না। সবসময় অ্যালার্ট থাকতে হবে। যাতে, যে সুযোগই আসুক, কখনও কখনও রক্ষণ থেকে একটা লং বলে সুযোগটা আসতে পারে…সেগুলো কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।”