শাখতারে আবারও ভরাডুবি রিয়ালের

ভালো শুরুর পর হুট করেই ছন্দটা হারিয়ে ফেলল রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের ভুলে গোল খাওয়ার পর তো হয়ে পড়ল কক্ষচ্যুত। প্রতিপক্ষের দিক হারানোর সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগাল শাখতার দোনেৎস্ক। দারুণ দুটি প্রতি-আক্রমণে পার্থক্য গড়ে দিল ইউক্রেনের দলটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2020, 07:50 PM
Updated : 1 Dec 2020, 10:31 PM

জিতলেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্ব নিশ্চিত, ড্র করলেও সম্ভাবনা থাকবে জোরালো। সঙ্গে প্রথম লেগে হারের প্রতিশোধ নেওয়ার বাসনাও ছিল। হলো না কিছুই। প্রতিপক্ষের মাঠে মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ২-০ গোলে হেরেছে জিনেদিন জিদানের দল।

চোট আর অসুস্থতায় প্রথম লেগে শাখতারের নিয়মিত খেলোয়াড়দের অনেকে ছিলেন না দলে। অনেকটা অনূর্ধ্ব-২৩ দলে পরিণত হওয়া সেই একাদশ নিয়েই সেদিন ৩-২ গোলে রিয়ালকে হারিয়েছিল তারা। ফিরতি লড়াইয়ে বিরতির আগে ঘর সামলাতেই মনোযোগী ছিল দলটি। এগিয়ে যাওয়ার পর যেন নিজেদের ফিরে পায় তারা, প্রতিযোগিতার রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের চমকে দিয়ে ছিনিয়ে নেয় অসাধারণ জয়।

আর এই হারে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কায় পড়ে গেছে ১৩ বারের ইউরোপ চ্যাম্পিয়নরা।

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকে চাপ বাড়ানো রিয়াল এগিয়ে যেতে পারতো শুরুতেই; দুর্ভাগ্য বাধ সাধে। চতুর্থ মিনিটে করিম বেনজেমার গোলমুখে বাড়ানো বলে মার্কো আসেনসিওর শট পোস্টে লাগে। একাদশ মিনিটে ডি-বক্সের মুখ থেকে গোলরক্ষক বরাবর মেরে হতাশ করেন চোট কাটিয়ে ফেরা বেনজেমা নিজেই।

তিন মিনিট পর মাঝমাঠে প্রতিপক্ষের জুনিয়র মোরায়েসকে অহেতুক ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন রিয়ালের রাফায়েল ভারানে। বেশ কিছুক্ষণ মাঠেই চিকিৎসা চলে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের, পরে তাকে তুলে নেন শাখতার কোচ।

৩০তম মিনিটে আরেকটি ভালো সুযোগ হারান আসেনসিও। তার জোরালো উঁচু শট এক হাত দিয়ে কর্নারের বিনিময়ে ফেরান গোলরক্ষক আনাতোলি ত্রুবিন।

প্রথমার্ধের শেষ ১৫ মিনিটে শুরুর গতি ধরে রাখতে পারেনি রিয়াল। প্রবল বৃষ্টির কারণেও নষ্ট হয়েছে ছন্দ। সঙ্গে শাখতারের জমাট রক্ষণও তাদের কাজ করে তুলেছিল অনেক কঠিন।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও আক্রমণে ভুগছিল ইউরোপের সফলতম দলটি। এর মাঝেই ৫২তম মিনিটে বেনজেমার ক্রসে ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট হেড করেন নাচো ফের্নান্দেস। দুই মিনিট পর প্রথমবারের মতো কোর্তোয়ার পরীক্ষা নেয় স্বাগতিকরা; ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার তাইসনের শট পা দিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক।

এর কিছুক্ষণ পরই নিজেদের ভুলে গোল হজম করে রিয়াল। ৫৭তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে সতীর্থের উদ্দেশে কোভালেঙ্কোর বাড়ানো বলে তেমন কোনো হুমকি ছিল না; কিন্তু ডি-বক্সের মুখ থেকে সেই বল ঠেকিয়ে ভারানেকে দিতে গিয়ে ঠিকমতো পারেননি ফেরলঁদ মঁদি। ডি-বক্সে বল ধরে নিচু শটে জালে জড়ান দেতিনিয়ো। ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডারকে ভারানের চ্যালেঞ্জ না জানানো ছিল বিস্ময়কর।

এগিয়ে গিয়ে যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে গত দুই রাউন্ডে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে ১০ গোল খাওয়া শাখতার। আর পথ হারিয়ে ফেলে বেনজেমা-মদ্রিচরা। অল্প সময়ের মাঝে কয়েকবার তাদের রক্ষণে ভীতি ছড়ায় শাখতার।

এরই ধারাবাহিতায় ৮২তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে তারা। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকেই জোরালো শটে পোস্ট ঘেঁষে ঠিকানা খুঁজে নেন ইসরায়েলের মিডফিল্ডার মানোর সলোমোন।

চলতি আসরে গ্রুপ পর্বে ৫ ম্যাচে এটি রিয়ালের জালে নবম গোল। নিজেদের ইতিহাসে আর কখনও এতো গোল হজম করতে হয়নি তাদের।

একই দলের বিপক্ষে দুই লেগেই হারের তেতো স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল। ভীষণ বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে যাওয়া দলটি সব প্রতিযোগিতা মিলে শেষ ছয় ম্যাচে মাত্র একটিতে জিতেছে।

এই হারে পয়েন্ট টেবিলে তিন নম্বরে নেমে গেছে রিয়াল। পাঁচ ম্যাচে দুই জয় ও এক ড্রয়ে তাদের পয়েন্ট ৭। সমান পয়েন্ট নিয়ে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে শাখতার দোনেৎস্ক।

গ্রুপের অন্য ম্যাচে বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে নিজেদের ফিকে হয়ে যাওয়া সম্ভাবনা নতুন করে জাগিয়ে তুলেছে ইন্টার মিলান। রোমেলু লুকাকুর জোড়া গোলে ৩-২ ব্যবধানে জিতেছে তারা। তাদের জয়ে এই গ্রুপের লড়াই দারুণ জমে উঠেছে।

পঞ্চম রাউন্ডে এসে প্রথম জয়ের দেখা পাওয়া ইতালিয়ান দলটি ৫ পয়েন্ট নিয়ে আছে সবার নিচে। ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে মনশেনগ্লাডবাখ।

শেষ রাউন্ডে মুখোমুখি হবে রিয়াল-বরুশিয়া ও ইন্টার-শাখতার। প্রতিটি দলেরই সুযোগ আছে পরের রাউন্ডে ওঠার, শঙ্কা আছে ছিটকে যাওয়ার।