উজ্জীবিত আলাভেসে পর্যদুস্ত ছন্নছাড়া রিয়াল

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইন্টার মিলানকে হারিয়ে ছন্দে ফেরার যে আভাস দিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ, তিন দিনেই তা মিইয়ে গেল। লা লিগায় ফিরে সেই পুরনো রূপে তারা, খেলল দিকহারা অগোছালো ফুটবল। সঙ্গে যোগ থিবো কোর্তোয়ার দৃষ্টিকটু ভুল। চ্যাম্পিয়নদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে দারুণ এক জয় নিয়ে ফিরল আলাভেস।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2020, 09:59 PM
Updated : 28 Nov 2020, 10:39 PM

আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে শনিবার রাতে আক্রমণাত্মক খেলে রিয়ালকে ২-১ গোলে হারিয়েছে আলাভেস। লুকাস পেরেসের গোলে সফরকারীরা এগিয়ে যাওয়ার পর ব্যবধান দ্বিগুণ করেন হোসেলু। শেষ দিকে ব্যবধান কমান কাসেমিরো।

লা লিগায় শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে হারল শিরোপাধারীরা, অন্যটি ড্র। শেষ ছয় ম্যাচে তাদের জয় মাত্র দুটি, হার তিনটি।

অন্যদিকে, দারুণ এই জয়ে পয়েন্ট টেবিলে ৯ নম্বরে উঠে আসা আলাভেস শেষ পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত। এর মাঝে তারা ড্র করেছে আরেক পরাশক্তি বার্সেলোনার সঙ্গে।

শেষ পাঁচ রাউন্ডে মাত্র দুটিতে জেতা রিয়াল শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে। ম্যাচের প্রথম উল্লেখযোগ্য আক্রমণে আলাভেসের ভিক্তর লাগুয়ারদিয়ার হেডে বল ডি-বক্সে ডিফেন্ডার নাচো ফের্নান্দেসের হাতে লাগলে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। জোরালো স্পট কিকে গোলটি করেন পেরেস।

এটিসহ লিগে শেষ তিন ম্যাচে পাঁচটি পেনাল্টি হজম করল রিয়াল। আর এই সময়ে তারা যে ছয়টি গোল খেয়েছে, তার পাঁচটি পেনাল্টি থেকে, অন্যটি আত্মঘাতী।

গোল খেয়ে চ্যাম্পিয়নরা পাল্টা জবাব দিবে কি, উল্টো প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক ফুটবলের সামনে তাদের কিছুটা ছন্নছাড়া দেখাচ্ছিল। বারবার উন্মুক্ত হয়ে পড়ছিল সের্হিও রামোসবিহীন রক্ষণ।

২৩তম মিনিটে দ্বিতীয় গোল প্রায় খেয়েই বসেছিল স্বাগতিকরা। চোটজর্জর রিয়ালের রক্ষণ সামলানোর দায়িত্ব পাওয়া লুকাস ভাসকেসকে অনেকটা পেছনে ফেলে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন পেরেস, সামনে একমাত্র বাধা ছিল গোলরক্ষক। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি; বাঁ হাত বাড়িয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন কোর্তোয়া।

খানিক পরেই রিয়াল শিবিরে আরও বড় ধাক্কা হয়ে আসে এদেন আজারের চোট। পায়ে অস্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়েন বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড, বদলি নামেন রদ্রিগো।

সমতা টানতে মরিয়া হয়ে প্রথমার্ধের শেষ দিকে প্রচণ্ড চাপ বাড়ায় রিয়াল। দারুণ কয়েকটি সুযোগও পায় তারা; কিন্তু ব্যর্থতা পিছু ফেলতে পারেনি তারা। প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের মুখে বল পেয়ে টনি ক্রুস ভিতরে ঢুকে জোরালো শট নেন, ক্ষিপ্রতায় ঠেকিয়ে দেন গোলরক্ষক। ফিরতি বল পেয়ে জার্মান মিডফিল্ডারের পাল্টা শটও ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক ফের্নান্দো পাচেকো। খানিক পর প্রথমার্ধে দ্বিতীয়বারের মতো গোলরক্ষক বরাবর হেড করে হতাশা বাড়ান মারিয়ানো দিয়াস।

কোর্তোয়ার অমার্জনীয় ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে স্কোরলাইন ২-০ করে আলাভেস। রাফায়েল ভারানের ব্যাকপাস ভালোভাবেই নিয়ন্ত্রণে নিয়েছিলেন রিয়াল গোলরক্ষক, পাস দিতে পারতেন দুই পাশে দুই সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারকে, তা না করে বাড়ান মাঝ বরাবর কাসেমিরোর উদ্দেশে। মাঝপথে বল ধরে বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে নিচু শটে গোলটি করেন হোসেলু। 

৬৩তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ানোর সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল আলাভেস। দারুণ প্রতি-আক্রমণে ডি-বক্সে ঢুকে ফের্নান্দেসকে কাটিয়ে শট নেন পেরেস। ঝাঁপিয়ে এ যাত্রায় ফেরান কোর্তোয়া। ১০ মিনিট পর রদ্রিগোর কোনাকুনি শট পোস্টের একটু বাইরে দিয়ে যায়। দুই মিনিট পর ভাসকেসের শটও দূরের পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায়। 

শেষ ১০ মিনিটে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে প্রতিযোগিতার সফলতম দলটি। ৮৩তম মিনিটে দিয়াসের প্রচেষ্টা গোললাইন থেকে ফেরান ফ্লোরিয়াঁ লুজেন।

তিন মিনিট পর অবশেষে গোলের দেখা পায় রিয়াল। ভিনিসিউস জুনিয়রের শট গোলরক্ষক কোনোমতে ঠেকানোর পর আলগা বল খুব কাছ থেকে জালে ঠেলে দেন কাসেমিরো। জমে ওঠে শেষের লড়াই।

একেবারে শেষ মুহূর্তে সমতাসূচক গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল তারা। দুর্ভাগ্য বাধ সাধে; ডি-বক্সের বাইরে থেকে ইসকোর নেওয়া জোরালো শট ক্রসবারে বাধা পায়। ২০ বছর পর রিয়ালের মাঠে জয়োৎসব করল আলাভেস; সেবার ১-০ গোলে জিতেছিল দলটি।

১০ ম্যাচে পাঁচ জয় ও দুই ড্রয়ে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানে আছে রিয়াল। আলাভেসের ১১ ম্যাচে পয়েন্ট ১৩।

১০ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে রিয়াল সোসিয়েদাদ।

দিনের আরেক ম্যাচে ভালেন্সিয়ার মাঠে ১-০ গোলে জেতা আতলেতিকো মাদ্রিদ ২৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে দুই নম্বরে। এক ম্যাচ কম খেলেছে তারা। তিন নম্বরে থাকা ভিয়ারিয়ালের ১০ ম্যাচে পয়েন্ট ১৯।

আট ম্যাচে ১১ পয়েন্ট নিয়ে ১৪ নম্বরে নেমে গেছে বার্সেলোনা।