কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে বুধবার মারা যান ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচিত মারাদোনা।
৩৪ বছর আগে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনাল থেকে ইংল্যান্ডকে বিদায় করে দিয়েছিল আর্জেন্টিনা। সেদিন চার মিনিটের মধ্যে জোড়া গোল করেছিলেন মারাদোনা।
তার প্রথম গোলটি ফুটবল কাব্য-কাঁথায় অমর হয়ে আছে ‘ঈশ্বরের হাত’ হিসেবে। দ্বিতীয় গোলটি ছিল মারাদোনার অবিশ্বাস্য ফুটবল সামর্থ্যের ফসল; ছয়জনকে কাটিয়ে করা সেই গোল পরে ‘শতাব্দীর সেরা গোল’ হিসেবে বিবেচিত হয়।
কঠিন কন্ডিশনে মারাদোনার ওই পারফরম্যান্স যেমন দোলা দেয় স্টিভেনের মনে, তেমনি পুরনো ক্ষতে কিছুটা আঁচড়ও কাটে।
“ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত গোলটি সে করেছিল। একই সঙ্গে পরিস্থিতি বিবেচনায় সবচেয়ে আইকনিক ও চমৎকার গোলটিও তার।”
“বিশ্বকাপের (১৯৮৬) কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ফুট উচ্চতায় ছিল এবং তাপমাত্রা ছিল ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি… ওই কন্ডিশনে খেলা এমনিতেই চ্যালেঞ্জিং। সেখানেই ম্যাচটিকে সে যে মানে তুলে নিয়েছিল, তা অবিশ্বাস্য।”
ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। মারাদোনার প্রথম গোলটিই ইংল্যান্ডকে হারানোর পথে মূল ভূমিকা রেখেছিল। সেই ম্যাচে খেলা ইংল্যান্ডের গোলকিপার পিটার শিলটন বলেছিলেন, মারাদোনাকে কখনও ক্ষমা করবেন না তিনি।
স্টিভেন জানালেন, ন্যায়সঙ্গত কারণেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন তার সতীর্থ।
“সে ধোঁকা দিয়ে পার পেয়ে গিয়েছিল। সে যা করেছিল, তার দায় কখনোই সে নেয়নি। এটা আমাদেরকে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছিল। মনে হয়েছিল, আমাদের থেকে একটি সম্ভাব্য সুযোগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
“নিশ্চিতভাবেই আমি তাকে সম্মান করি। তবে, তার সেদিনের কাজের জন্য ইংল্যান্ডের ওপর যে প্রভাব পড়েছিল সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে তাকে ভালোবাসব নাকি ঘৃণা করব, বুঝে উঠতে পারি না।”
তবে সময়ের পথচলায় ওই দিনের ক্ষত অনেকটাই নিরাময় হয়ে গেছে বলে জানালেন ৫৭ বছর বয়সী স্টিভেন।
“সময়ের সঙ্গে খারাপ লাগা কিছুটা কমেছে, ক্ষতও সেরে উঠেছে। ফুটবল প্রতিভার কারণে মারাদোনাকে জিনিয়াস ফুটবলার আবার তার জীবন যাপনের ধরনের কারণে তাকে একজন ত্রুটিযুক্ত জিনিয়াস বলা যায়। তবে, ফুটবল সামর্থ্যের বিচারে তার মতো আর কেউ ছিল না।”
“সে যা করেছে, বিশ্বের সব গ্রেট ফুটবলাদের মধ্যে আর কেউ পারেনি। ওই (ঈশ্বরের হাত) গোলটিও ছিল সেকেন্ডের কম সময়ে। কিন্তু সে ১৫ বছর ধরে পেশাদার ফুটবল খেলেছে…সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করে নিয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে ও সংকীর্ণমনা হয়ে ১৯৮৬ সালের জুনের ওই দিনটিতে ফিরে না গিয়ে ওই সব অর্জনের জন্য তাকে মনে রাখা উচিত।”