বিবর্ণ রিয়ালকে চমকে দিল শাখতার 

অধিনায়ক সের্হিও রামোসের অনুপস্থিতিতে রক্ষণ হয়ে পড়ল ভঙ্গুর; মাঝমাঠ ও আক্রমণভাগ ছন্নছাড়া। প্রথমার্ধে এমন চেহারার রিয়াল মাদ্রিদকে চেপে ধরল শাখতার দোনেৎস্ক। বিরতির আগেই তিন গোলে পিছিয়ে পড়ল জিনেদিন জিদানের দল। দ্বিতীয়ার্ধে তারা ঘুরে দাঁড়ালো বটে; কিন্তু ব্যবধান ঘোচাতে পারল না। দুর্দান্ত এক জয় নিয়ে ফিরল ইউক্রেনের ক্লাবটি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2020, 06:48 PM
Updated : 21 Oct 2020, 09:26 PM

আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতেছে শাখতার। তেতের গোলে রিয়াল পিছিয়ে পড়ার পর আত্মঘাতী গোল করেন রাফায়েল ভারানে। বিরতির ঠিক আগে ব্যবধান আরও বাড়ান মানোর সলোমন। দ্বিতীয়ার্ধের রিয়ালের গোল দুটি করেন লুকা মদ্রিচ ও ভিনিসিউস জুনিয়র।

ঘরের মাঠে এই নিয়ে টানা দুই ম্যাচ হারল রিয়াল। গত শনিবার লা লিগায় কাদিসের বিপক্ষে হেরেছিল স্পেনের সফলতম দলটি।

চোট আর অসুস্থতায় শাখতারের নিয়মিত খেলোয়াড়দের অনেকে ছিলেন না দলে। একাদশের আট জনের বয়স ২৩ বা তার কম। ১৯ বছর বয়সী গোলরক্ষক ত্রুবিন ও দুই ডিফেন্ডারের অভিষেক ম্যাচ। অনভিজ্ঞ এই দল নিয়েই দিকহারা রিয়ালকে নাকাচুবানি খাওয়াল শাখতার।

চার দিন আগে লা লিগায় নবাগত কাদিসের বিপক্ষে বিবর্ণ পারফরম্যান্সে হেরে বসা রিয়াল এ ম্যাচের শুরুতেও ছিল ছন্নছাড়া। সেই সুযোগে উদ্দীপ্ত শাখতার চেপে ধরে টুর্নামেন্টের রেকর্ড চ্যাম্পিয়নদের।

ম্যাচের দ্বাদশ মিনিটেই গোল খেতে বসেছিল তারা। দারুণ এক প্রতি-আক্রমণে সতীর্থের থ্রু বল ধরে বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন মার্লোস। একমাত্র বাধা ছিল গোলরক্ষক; কিন্তু শট নিতে খানিকটা দেরি করে ফেলেন। পরে আগুয়ান গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার।

২৯তম মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে এগিয়ে যায় শাখতার। বাঁ দিক থেকে ভিক্তর কোরনিয়েনকো ডিফেন্ডার এদের মিলিতাওকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে আরেক ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানেকেও ফাঁকি দেন। তাকে বাধা দিতে ছুটে এসে পারেননি মার্সেলো; টোকা দিয়ে কোরিয়েনকো বল বাড়ান তেতেকে। নিচু শটে বিনা বাধায় ব্রাজিলিয়ান এই মিডফিল্ডার দলকে এগিয়ে নেন।

গোল হজমের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই নিজেদের ভুলে দ্বিতীয় গোল খেয়ে বসে রিয়াল। ৩৩তম মিনিটে বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে তেতের নেওয়া জোরালো শট ঝাঁপিয়ে থিবো কোর্তোয়া ঠেকালেও বল হাতে রাখতে পারেননি। ফিরতি বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো জালে ঠেলে দেন ভারানে।

৪২তম মিনিটে রিয়ালকে হতভম্ব করে দিয়ে স্কোরলাইন ৩-০ করে শাখতার। এই গোলেও মুখ্য ভূমিকা শুরু থেকে দ্যূতি ছড়ানো তেতের। ডি-বক্সের মুখে মার্সেলোকে কোনো সুযোগ না দিয়ে ব্যাকহিলে পাশে বল বাড়ান তিনি। আর ছুটে গিয়ে বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে ঠিকানা খুঁজে নেন ইসরায়েলের মিডফিল্ডার সলোমন।

এর আগে ২০০৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিওঁর বিপক্ষে ম্যাচে সবশেষ প্রথমার্ধে তিন গোল খেয়েছিল রিয়াল। আর ঘরের মাঠে ২০০০ সালের পর বিরতির আগে তিন গোল খেল তারা; সেবার বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল দলটির।

কোণঠাসা রিয়াল দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ঘুরে দাঁড়ায়। বল দখলের পাশাপাশি আক্রমণে চাপ বাড়িয়ে ৫৪তম মিনিটে ব্যবধান কমায় তারা। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার বুলেট গতির শটে লক্ষ্যভেদ করেন মদ্রিচ।

পাঁচ মিনিট পর প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান আরও কমান ভিনিসিউস। লুকা ইয়োভিচের বদলি নেমে মাত্র ১৪ সেকেন্ডের মধ্যে প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে নিচু শটে গোলটি করেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড।

৬২তম মিনিটে গোলমুখে বল পেয়ে সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি বেনজেমা। পরের মিনিটে আরেকটি প্রতি-আক্রমণে গোলরক্ষককে একা পেয়ে হতাশ করেন তেতে। এগিয়ে এসে তার শট রুখে দেন কোর্তোয়া।

যোগ করা সময়ের শেষ মিনিটে ফেদে ভালভেরদের শট প্রতিপক্ষের এক জনের পায়ে লেগে জালে জড়ালে স্বস্তির ছোঁয়া লাগে রিয়াল শিবিরে। তবে ভিএআরে দেখে গোলরক্ষকের ঠিক সামনে ভিনিসিউস দাঁড়িয়ে থাকায় গোল দেননি রেফারি।

ইউরোপ সেরার মঞ্চে গত দুই আসরে শেষ ষোলো থেকে বিদায় নেওয়ার পর এবারের শুরুটাও হলো বাজে। তিন দিন বাদেই আবার লিগে মাঠে নামতে হবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার বিপক্ষে। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটির আগে ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে ঘুরে দাঁড়ানোর খুব বেশি সময় পাচ্ছে না তারা।