২৮ বছর পরও সেই গোল একইভাবে দোলা দেয় কুমানকে

সময়ের হিসেবে পেরিয়ে গেছে ২৮ বছর। রোনাল্ড কুমান বুট জোড়া তুলে রেখে কোচ হয়েছেন, সেটাও দুই দশক হয়ে গেল। সময়ের পরিক্রমায় বদলেছে ফুটবলের অনেক কিছু, পাল্টেছে কুমানের জীবন। তবে খেলোয়াড়ী জীবনের একটি অনুভূতি এখনও একই অনুরণন তোলে তার মনে, ১৯৯২ সালে ইউরোপিয়ান কাপের ফাইনালে ফ্রি-কিকে বার্সেলোনার জয়সূচক গোল!

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2020, 06:27 AM
Updated : 20 Oct 2020, 09:44 AM

গত শতকের নব্বইয়ের দশকের শুরুতে, তখনকার কোচ ইয়োহান ক্রুইফের বার্সেলোনার বিখ্যাত ‘ড্রিম টিম' এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন কুমান। ছিলেন ১৯৯২ সালে ক্লাবটির প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ (পরে নাম বদলে হয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জয়ের নায়ক। সাম্পদোরিয়ার বিপক্ষে ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ে ফ্রি-কিকে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেছিলেন তিনি।

গত অগাস্টে কুমান পুরোনো ঠিকানায় ফেরেন ক্লাবটির কোচ হয়ে। বার্সেলোনার কোচ হিসেবে তার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যাত্রা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার কাম্প নউয়ে হাঙ্গেরির দল ফেরেন্সভারোসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। তার আগে উয়েফার ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বার্সেলোনায় ফেরা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্মৃতিসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দলটির সাবেক এই তারকা ডিফেন্ডার।

বার্সেলোনায় ফেরা

“প্রতিবার যখন আমরা বার্সেলোনায় ফিরেছি, আমাদের অনুভূতি ছিল, ‘আমরা ঘরে ফিরে এসেছি, এখানে আমাদের বন্ধুরা আছে।’ এই শহরটি সম্পর্কে সবকিছু আমরা জানি। বার্সেলোনায় ফিরে আসা দারুণ এক অনুভূতি।”

“আমি একজন ডাচ, তবে আমি হয়তো কিছুটা ডাচ-স্প্যানিশ, ডাচ-কাতালান, কারণ বার্সেলোনায় মোট নয় বছর কেটেছিল আমার।”

১৯৮৮ ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে গোল ও শিরোপা জয়

(১৯৮৮ সালের ফাইনালে পিএসভি আইন্দহোভেনের হয়ে বেনফিকার বিপক্ষে টাইব্রেকারে গোল করেছিলেন কুমান) 

“জয়সূচক গোল করা মানে আমি ওই রাতের নায়ক। অনুভূতিটি ছিল অসাধারণ, তখনও ছিল এবং এখনও আছে। দারুণ এক স্মৃতি (১৯৯২ সালে বার্সেলোনার হয়ে)। অনুভূতিটি অনন্য ছিল, কারণ ওটাই ছিল বার্সেলোনার প্রথম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়।”

“অতিরিক্ত সময়ে ফ্রি-কিকে গোল করার সঙ্গে পাঁচ বা সাতটি পেনাল্টির মধ্যে একটিতে গোল করার তুলনা হয় না, এটা একেবারে আলাদা। আমরা পিএসভি আইন্দহোভেনের হয়ে (১৯৮৮ সালে) শিরোপা জিতেছি। যা ছিল অপ্রত্যাশিত, কারণ নেদারল্যান্ডসের একটি দলের এমন একটি বড় শিরোপা জেতা দুর্দান্ত ব্যাপার।”

১৯৯২ ফাইনালের গোল

“এটা পরিকল্পিত ছিল না। আমার মনে আছে, ম্যাচের আগের দিন শেষ অনুশীলন সেশনে আমরা ফ্রি-কিক নিয়েছি। আমরা ফ্রি-কিকের অনুশীলন করেছিলাম, তবে (রিস্টো) স্টইচকভ ও (হোসে মারি) বাকেরোর সঙ্গে ওয়ান-টু’র চেষ্টা করিনি। ওটা সরাসরি ফ্রি-কিক ছিল না এবং রক্ষণ প্রাচীরের ওপরে ছিল। আমরা বলেছিলাম, ‘ যদি বাকেরোর কাছে ছোট পাস দাও বা স্টইচকভ বল থামায়, তাহলে আমি গোল করার চেষ্টা করব।’

“ সাধারণত, শট নেওয়ার পর রক্ষণ প্রাচীর থেকে বেরিয়ে আসা ডিফেন্ডারদের একজনকে বল স্পর্শ করে, তবে সেই সময় আমি ভাগ্যবান ছিলাম। দ্বিতীয় পোস্টে দ্রুত পৌঁছানো গোলরক্ষকের জন্যও ছিল কঠিন।”

১৯৯২ ফাইনালের আগে ক্রুইফের কথা

“ ফাইনালে দল থেকে কিছুটা চাপ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল, আর এ কারণেই তিনি বলেছিলেন, ‘খেলা উপভোগ করো।’ আমরা যদি খেলা উপভোগ করি, সহজাত ফুটবল খেলি, তাহলে তা ম্যাচ জয়ের সেরা সুযোগ তৈরি করে দেবে। টুর্নামেন্টের ম্যাচ, স্প্যানিশ লিগ বা ইউরোপীয় লিগ ফুটবলে আমাদের তিনি ভিন্নভাবে সামলানোর চেষ্টা করেননি। দলের ওপর সবসময় চাপ ছিল; তা ছিল ভালো ফুটবল খেলা নিয়ে।”

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আরও প্রিয় স্মৃতি

“ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে (১৯৯৪-৯৫ মৌসুমে গ্রুপ পর্বের ফিরতি লেগে) বার্সেলোনার জয়। সেই রাতে জয়টি ছিল ৪-০ ব্যবধানে। আমরা দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছিলাম। দিনামো কিয়েভের বিপক্ষে (১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে গ্রুপ পর্বের ফিরতি লেগে) ম্যাচটা আমার মনে আছে। সম্ভবত বার্সেলোনার হয়ে আমাদের সেরা ম্যাচ ছিল সেটি, আমরা মনে হয় ৪-১ গোলে জিতেছিলাম, এবং আমি দুর্দান্ত একটি গোল করেছিলাম পোর্তোর বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে (১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে), (ভিতোর) বাইয়া তখনও তাদের গোলরক্ষক ছিল।”

লিওনেল মেসিকে নিয়ে

“প্রায় তিন সপ্তাহ হলো লিও এবং দলের সঙ্গে কাজ করছি। খেলোয়াড় হিসেবে তার বড় গুণগুলি শুরু থেকেই দেখছি। সে সেরা, কারণ মাঠে সে একেবারে স্বচ্ছন্দ, তবে খুব বুদ্ধিমান। ম্যাচে সেরা সমাধান সে সত্যিই খুব দ্রুত ধরতে পারে। এটি বুঝতে পারা এক ব্যাপার, করে দেখানো অন্য ব্যাপার।”