শত গোলের রঙ ছড়ানোর বাঁকে বাঁকে রোনালদো

অনেকের কল্পনাতেও যা ধরা দেয় না, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো বাস্তবেই তা করে দেখাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ৩৫ বছর বয়সটাকে স্রেফ সংখ্যা বানিয়ে এবার যেমন পা রাখলেন আরেকটি চূড়ায়-ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পূরণ করলেন আন্তর্জাতিক গোলের সেঞ্চুরি।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2020, 10:03 AM
Updated : 9 Sept 2020, 10:03 AM

পায়ের সংক্রমণের কারণে উয়েফা নেশন্স লিগে প্রথম ম্যাচ খেলতে পারেননি রোনালদো। সুইডেনের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচে ফিরলেন। ট্রেডমার্ক ফ্রি-কিকে জাল খুঁজে নিয়ে পূরণ করলেন আন্তর্জাতিক গোলের সেঞ্চুরি। পরে করলেন আরেকটি দুর্দান্ত গোল। রেকর্ডের এই পাতায় তার সামনে কেবল ইরানের সাবেক স্ট্রাইকার আলি দাই (১০৯ গোল)।

পর্তুগালের জার্সিতে ২০০৩ সালে যে পথচলা শুরু হয়েছিল, তা দিব্যি চলছে। এই ছুটে চলার বাঁকে বাঁকে রঙ ছড়ানো রোনালদোর নানা পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো এখানে।

# ২০০৩ সালের অগাষ্টে কাজাখস্তানের বিপক্ষে ১-০ গোলে জয়ী হওয়া প্রীতি ম্যাচে পর্তুগালের হয়ে আন্তর্জাতিক আঙিনায় পথচলা শুরু।

# ২০০৪ সালের ইউরোর পর্তুগাল দলে জায়গা পেলেন। সেবার টুর্নামেন্টের আয়োজকও ছিল পর্তুগাল। প্রথম আন্তর্জাতিক গোলের দেখা পেলেন আসরের উদ্বোধনী ম্যাচে, গ্রীসের বিপক্ষে যদিও দল হারল ২-১ ব্যবধানে। সেমি-ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে গোল করে দলের ফাইনালে ওঠায় রাখলেন ভূমিকা। কিন্তু সেবার ফাইনালে গ্রীসের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ পর্তুগিজদের।

# ২০০৬ সালে জার্মানির আসরে বিশ্বকাপ অভিষেক। ইরানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে গোল করলেন। অবদান রাখলেন পর্তুগালের সেমি-ফাইনালে ওঠায়। কিন্তু ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ফ্রান্সের কাছে হারে দল।

# ২০০৮ ইউরোতে পর্তুগালের কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠায় রাখলেন ভূমিকা। চেক রিপাবলিকের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জয় পাওয়া ম্যাচে পেলেন জালের দেখা।

# স্পেনের কাছে হেরে ২০১০ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বিদায় পর্তুগালের। মাঠ ছাড়ার সময় এক টিভি ক্যামেরাম্যানের দিকে থুতু ফেলে সমালোচিত রোনালদো। টুর্নামেন্টে একমাত্র গোলটি করেন উত্তর কোরিয়াকে ৭-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচে।

# ২০১২ ইউরোর সেমি-ফাইনালে উঠতে দলকে সাহায্য করেন। আবারও স্পেনের কাছে হেরে বিদায়; এ দফায় অবশ্য টাইব্রেকারে হারে পর্তুগাল। পেনাল্টি শুট আউটের পাঁচ শটের শেষটি নেওয়ার কথা ছিল রোনালদোর। কিন্তু তার আগেই হার নিশ্চিত হওয়ায় পেনাল্টিই নেওয়া হয়নি তার। তিন গোল নিয়ে আসর শেষ করেছিলেন।

# বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে সুইডেনকে ৩-২ গোলে হারানো ম্যাচে উপহার দিলেন হ্যাটট্রিক। ওই জয়েই ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলার টিকেট পায় পর্তুগাল।

# ২০১৪ সালের মার্চে দারুণ এক মাইলফলকে পা রাখলেন রোনালদো। পাউলেতাকে (৪৭ গোল) টপকে বসে যান দেশের সর্বোচ্চ গোলদাতার সিংহাসনে।

# হাঁটুর চোট নিয়ে ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে আসা রোনালদো যেন ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। জার্মানির কাছে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ৪-০ গোলে হারে পর্তুগাল এবং শেষ পর্যন্ত গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ে। রোনালদো একমাত্র গোলটি করেন ঘানার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে জয়ী ম্যাচে।

# ২০১৬ সালে পর্তুগালের ইউরো জয়ের নায়কদের একজন রোনালদো। পর্তুগিজরা প্রথম বড় কোনো শিরোপার স্বাদ পায় সেবার। অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেন রোনালদো। পরে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ৩-৩ ড্র ম্যাচে করেন জোড়া গোল। দলও জায়গা করে নেয় নকআউট পর্বে। ওয়েলসের বিপক্ষে সেমি-ফাইনাল ম্যাচেও করেন লক্ষ্যভেদ।

ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে দিমিত্রির পায়েতের ট্যাকলে চোট পেয়ে ২৫তম মিনিটে মাঠ ছাড়তে হয় রোনালদোকে। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পর টাচলাইনে অনেকটা কোচের ভূমিকায় তাকে দেখা গিয়েছিল সতীর্থদের উদ্বুদ্ধ করতে। ফরাসিদেরকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা উৎসবে মাতে পর্তুগাল ও রোনালদো।

# ২০১৮ বিশ্বকাপের বাছাইয়ে ১৫ গোল করেন রোনালদো। সেবার পর্তুগালও হয় গ্রুপ সেরা।

# ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে উপহার দেন হ্যাটট্রিক। ৮৮তম মিনিটে দারুণ এক ফ্রি-কিকে গোল করেন, ৩-৩ ড্র হয় ম্যাচ। ইতিহাসের মাত্র চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে চারটি বিশ্বকাপে গোল করার কীর্তি তাতে গড়া হয়ে যায়।

মরক্কোর বিপক্ষে নিজের ৮৫তম গোলের দেখা পান রোনালদো। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতার আসনে বসেন। ইরানের বিপক্ষে ১-১ ড্র ম্যাচে মিস করেন পেনাল্টি। শেষ ষোলোয় উরুগুয়ের কাছে হেরে যাত্রা থামে পর্তুগালের।

# ২০১৯ সালে উয়েফা নেশন্স লিগের প্রথম আসরের পর্তুগালের শিরোপা জয়ে রাখলেন বড় অবদান। হ্যাটট্রিকের আলো ছড়ালেন সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে।

# ২০১৯ সালের অক্টোবরে ইউরো বাছাইয়ে লিথুয়ানিয়ার মাঠে ৫-১ ব্যবধানে জেতা ম্যাচে রোনালদোর গোল চারটি। ফিরতি লেগেও করেন তিন গোল; যেটি ছিল তার নবম আন্তর্জাতিক হ্যাটট্রিক।

ওই বছরই ইউরো বাছাইয়ে লুক্সেমবার্গের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানের জয়ে এক গোল করে আন্তর্জাতিক গোলের পৌঁছে যান সেঞ্চুরির দুয়ারে (৯৯টি)। ওই জয়ে ২০২০ ইউরোতে খেলাও নিশ্চিত করে পর্তুগাল।

# এবার নেশন্স লিগের মুকুট ধরে রাখার অভিযানে পর্তুগালের দুর্দান্ত শুরু। রোনালদোর জোড়া গোলে সুইডেনকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে টানা দ্বিতীয় জয়। ম্যাচের ৪৫তম মিনিটে দারুণ ফ্রি-কিকে ইতিহাসের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে পূরণ করলেন আন্তর্জাতিক গোলের সেঞ্চুরি। পরে আরও একবার লক্ষ্যভেদ করায় গোল সংখ্যা হলো ১০১।