বার্সাকে হৃদয়ে ধারণ করব: রাকিতিচ

ছয় বছরের সম্পর্কের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি। বিদায় বেলায় তাই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন ইভান রাকিতিচ। মনের ঝাঁপি খুলে দিলেন। স্মৃতির সাগরে ডুব দিয়ে তুলে আনলেন কতশত মণি-মুক্তো; শোনালেন দারুণ সব প্রাপ্তির গল্প। প্রতিশ্রুতি দিলেন, ছেড়ে গেলেও প্রিয় বার্সেলোনাকে আজীবন ধারণ করবেন হৃদয়ে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2020, 07:09 PM
Updated : 2 Sept 2020, 07:09 PM

বার্সেলোনায় ছয় বছরের সফল অধ্যায় শেষে লা লিগার আরেক দল সেভিয়ায় ফিরে গেছেন রাকিতিচ। কাম্প নউয়ের অনেক স্মরণীয় মুহূর্ত সঙ্গী হয়েছে তার। জিতেছেন চারটি করে লা লিগা ও কোপা দেল রে এবং একটি করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ক্লাব বিশ্বকাপসহ মোট ১৩টি শিরোপা।

সংবাদ সম্মেলনে বিদায়ী বক্তব্যে বুধবার সেই সব দিনগুলোকে স্মরণ করলেন রাকিতিচ। বার্সেলোনার প্রতি প্রকাশ করলেন কৃতজ্ঞতা। সতীর্থ, কোচ, স্টাফ, ম্যানেজার, সমর্থক সকলকে ধন্যবাদ জানাতে ভোলেননি ৩২ বছর বয়সী এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার।

তার বিদায়ী বক্তব্যের বিশেষ অংশগুলো তুলে ধরা হলো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্যে।

সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত

“একটি বেছে নেওয়া কঠিন। ছয় মৌসুমে আমরা দারুণ সব মুহূর্ত কাটিয়েছি। তবে আমাকে যদি একটি বেছে নিতেই হয়, তাহলে বলব বার্লিনের ফাইনালের কথা। এরপর জাপানে ক্লাব বিশ্বকাপ অর্জন। তবে প্রতিটা ট্রফি, প্রতিটি লিগ, প্রতিটা সুপার কাপ বিশেষ ছিল। আমরা যা অর্জন করেছি, তার জন্য আমি খুবই গর্বিত এবং আমি কে এবং কেমন খেলি, তা মেলে ধরতে পেরেও গর্বিত।”

বার্সেলোনায় সেরা সময়

“আমি মনে করি, গত বছরের আগের বছর ছিল বার্সায় আমার সেরা সময়। ২০১৮-১৯ মৌসুমটা আমি সবচেয়ে বেশি উপভোগ করেছি…তবে সবকিছু ধুলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল লিভারপুলের কাছে হেরে।”

“গত কয়েকটি মৌসুমে আমরা ২০১৫ সালের সাফল্যের পুনরাবৃত্তির খুব কাছাকাছি ছিলাম। কখনও কখনও ছোটখাটো বিষয় কিংবা একটু ভাগ্যের ছোঁয়া আমরা হাসব নাকি হাসব না এর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছিল।“

সেরা সতীর্থ

“একজন সতীর্থ বেছে নেওয়া? আমি আমার সব সতীর্থদের কাছ থেকে শিখেছি এবং সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে আমাকে যদি বেছে নিতেই হয়, তাহলে হয়তো আন্দ্রেস (ইনিয়েস্তা) বা চাভিকে (এরনান্দেস) বেছে নেব। তাদের সঙ্গে খেলা ছিল অসাধারণ। যখন এসেছিলাম, তখন দুজনেই অনেক সাহায্য করেছিল। যে বছর চাভির সঙ্গে আমার দেখা হয়, তখন সে ছিল আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এরপর আন্দ্রেসের ক্ষেত্রেও একই। ফুটবল আমাকে যতগুলো খুব ভালো বন্ধু দিয়েছে, তাদের মধ্যে একজন আন্দ্রেস।”

বার্সেলোনার বর্তমান অবস্থা

“বায়ার্ন ম্যাচ নিয়ে আমি ভাবতে চাই না। আমি দুঃখিত যে শেষ ম্যাচটিতে অংশ নিতে পারিনি। আপনারা জানেন, আমি কেমন এবং আমি সবসময় খেলতে চেয়েছি।”

“বার্সার গুরুত্ব কমে গেছে? আমি তা মনে করি না। আমি অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কথা বলেছি, যেমন আমার সতীর্থরা এবং তারা সবাই বার্সার প্রশংসা করে। আমার মতে, বিশ্বের সব খেলোয়াড়দের পছন্দমতো বেছে নেওয়ার জন্য প্রথম ক্লাব সবসময়ই বার্সা। এটা বিশ্বের সেরা ক্লাব।”

“এখানে যা কিছু ঘটবে, তার সব আমি অনুসরণ করব এবং আমার বিশ্বাস, বার্সা আবারও অনেক শিরোপা জিতবে।”

বিশেষ কোনো স্মৃতি

“আজ (বুধবার) সকালে সতীর্থদের যখন বিদায় জানাতে গেলাম, তখনকার একটা দৃশ্য বিশেষভাবে আমার হৃদয়ে দাগ কেঁটেছে। যিনি রান্না করেন তাকে, বা যখন মার্তাকে বিদায় জানাচ্ছিলাম, তখন তার চোখে অশ্রু দেখলাম….এর অর্থ আমার কাছে অনেক কিছু। সবসময় আমি চেয়েছি বিনয়ী, সাধারণ এবং ভালো একজন ভালো মানুষ হতে।”

“আমরা খেলোয়াড়েরা সবসময় চাই মাঠে আমাদের সম্ভাব্য সেরাটা দিতে। লড়াই করতে। এবং আমার দিক থেকে প্রচেষ্টা এবং প্রতিশ্রুতির অভাব কখনও ছিল না। আমি দিনের ২৪ ঘণ্টা ফুটবল নিয়েই থাকি।”

বার্সায় বিশেষ কোনো ছাপ

“বার্সার ইতিহাসে বিদেশি খেলোয়াড় হিসেবে চতুর্থ সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলতে পারা সম্মানের। আরও একটা পরিসংখ্যানের কথা আমাকে বলা হয়েছে, গড়ে প্রতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি (৫১) ম্যাচ খেলাদের একজন আমি। এমন সংখ্যায় পৌঁছাতে পারা সহজ নয়।”

ড্রেসিংরুমের বিশেষ ব্যক্তি

“আমার সতীর্থ, কোচ, ম্যানেজার ও সমর্থকদের পাশাপাশি বিশেষ একজনকে বিদায় জানাতে চাই, হুয়ান কার্লোস উনসুয়ে (সহকারী কোচ, ২০১৪-১৭)। ড্রেসিংরুমের জন্য তিনি ছিলেন বিশেষ ব্যক্তি।”

সেভিয়ায় ভবিষ্যৎ

“সেভিয়ার সঙ্গে আমার দারুণ একটা বন্ধন আছে, তবে এটা নিয়ে আমরা আগামীকাল থেকে কথা বলব। আজ আমি সম্ভাব্য সবচেয়ে ভালোভাবে বার্সাকে বিদায় জানাতে চাই।”

“বার্সার বিপক্ষে যদি কখনও গোল করি তাহলে, উদযাপন করব না। বার্সাকে আমি আমার হৃদয়ে ধারণ করব।”