লিসবনে রোববার রাতের ফাইনালে দুই দলের মাঝে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে কিংসলে কোমানের একমাত্র গোল। ২০১২-১৩ মৌসুমের পর আবারও ইউরোপ সেরার ট্রফি জিতল বায়ার্ন।
ম্যাচের এক দিন আগে চোট শঙ্কায় কোমানের খেলা নিয়েই অনিয়শ্চয়তা জেগেছিল; তবে সব দুর্ভাবনা দূরে ঠেলে মাঠে নেমে পার্থক্য গড়ে দিলেন ফরাসি এই মিডফিল্ডারই। কঠিন লড়াইয়ে পাওয়া বায়ার্নের জয়ের আরেক নায়ক মানুয়েল নয়ার। ম্যাচ জুড়ে তার দারুণ পারফরম্যান্স প্রশংসার দাবিদার। পিএসজির বেশ কয়েকটি আক্রমণে একার চেষ্টায় দলকে বাঁচিয়েছেন তিনি; অন্তত দুটি নিশ্চিত সুযোগ রুখে দেওয়ায় তার অসাধারণ ক্ষিপ্রতা ছিল নজরকাড়া।
আক্রমণাত্মক ফুটবলে অদম্য হয়ে ওঠা বায়ার্ন চলতি মৌসুমে সম্ভাব্য সবকটি শিরোপাই ঘরে তুলল। ২০২০-এ কোনো ম্যাচ না হারা দলটি এই নিয়ে টানা ২১ ম্যাচ জয়ের পথে উঁচিয়ে ধরল বুন্ডেসলিগা, জার্মান কাপ ও এই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা।
ক্লাবের সমৃদ্ধ ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ‘ট্রেবল’ জিতল মিউনিখের দলটি। প্রথমবার তারা জিতেছিল ২০১২-১৩ মৌসুমে, ইয়ুপ হেইঙ্কেসের কোচিংয়ে।
নেইমার-এমবাপেদের মতো তারকাদের কাঁধে ভর করে প্রথম ফাইনালেই বাজিমাত করার স্বপ্ন বুনেছিল পিএসজি। প্রতিপক্ষের অতি-আক্রমণাত্মক কৌশলে বিপরীতে গতিময় ফুটবলে অসাধারণ কিছু করে দেখানোর স্বপ্ন দেখেছিল দলটি। কিন্তু মাঠে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি তারা।
প্রতিযোগিতাটিতে টানা ৩৪ ম্যাচে গোল করার আত্মবিশ্বাস নিয়ে মাঠে নেমেছিল পিএসজি। কিন্তু ফাইনালে এসেই জালের দেখা পেল না দলটি।
আসরের প্রথম ১০ ম্যাচে এক দলের গোল ৪২টি, আরেক দল চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ কবে জালের দেখা পায়নি, সেটাই সবাই ভুলতে বসেছিল। আক্রমণভাগে ছন্দে থাকা দারুণ সব ফরোয়ার্ড থাকার পরও প্রথমার্ধে খুব ভালো সুযোগ তৈরি করতে ভুগলো বায়ার্ন ও পিএসজি।
প্রথম ভালো সুযোগ আসে অষ্টাদশ মিনিটে। কিলিয়ান এমবাপের ডি-বক্সে বাড়ানো বল ধরে কোনাকুনি শট নেন আগের দুই ম্যাচে আলো ছড়ানো নেইমার। পা বাড়িয়ে কোনোমতে কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান বায়ার্ন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার।
এরপরই একটা ধাক্কা খায় বায়ার্ন। চোট পেয়ে খুড়িয়ে মাঠ ছাড়েন ডিফেন্ডার জেরোমে বোয়াটেং, বদলি নামেন নিকলাস সুলে।
৩১তম মিনিটে ছোট ডি-বক্সের বাইরে থেকে বলে ঠিকমতো মাথা লাগাতে পারেননি আসরে সর্বোচ্চ ১৫ গোল করা লেভানদোভস্কি। পড়ে যাওয়ার আগ মুহূর্তে তার নেওয়া সোজাসুজি হেড দুবারের চেষ্টায় ঠেকান চোট কাটিয়ে ফেরা কেইলর নাভাস।
বিরতির ঠিক আগে প্রতিপক্ষের উপহার পেয়েছিলেন এমবাপে। ডি-বক্সে বল পেয়ে শট না নিয়ে ডানে পাস দেন দি মারিয়াকে। ফিরতি বল ধরে মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেননি তিনি। নয়ার বরাবর দুর্বল শট নিয়ে বাড়ান হতাশা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে মাঝমাঠের বাইলাইনে নেইমারকে বায়ার্নের জিনাব্রি অহেতুক ফাউল করলে দু'পক্ষের মাঝে উত্তেজনা ছড়ায়। জিনাব্রি ও পিএসজির লেয়ান্দ্রো পারেদেসকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
গোছানো এক আক্রমণে ৫৯তম মিনিটে এগিয়ে যায় বায়ার্ন। জসুয়া কিমিচের ক্রসে লাফিয়ে কোনাকুনি হেডে ঠিকানা খুঁজে নেন কোমান।
ইউরোপের ক্লাব সেরার মঞ্চে এটি জার্মান চ্যাম্পিয়নদের ৫০০তম গোল। তাদের আগে এই মাইলফলক ছুঁয়েছে কেবল দুই স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে শেষ দিকে জমে ওঠে ম্যাচ। কোয়ার্টার-ফাইনালে আতালান্তার বিপক্ষে যোগ করা সময়ে জয়সূচক গোল করা এরিক মাক্সিম চুপো-মোটিং এবারও শেষ সময়ে পান দুটি ভালো সুযোগ। বিপজ্জনক জায়গা থেকে একবারও বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি তিনি।
প্রথমবার ফাইনালে উঠে হারের বেদনা নিয়ে মাঠ ছাড়ে টমাস টুখেলের দল। ১-০ গোলের জয়ে ট্রেবল জয়ের উচ্ছ্বাসে মাতে বায়ার্ন।
গত নভেম্বরে সহকারী থেকে মূল কোচের দায়িত্ব পাওয়া হান্স ফ্লিক ৯ মাসেই জিতলেন তিন-তিনটি শিরোপা। ক্লাবের ইতিহাসে জায়গা করে নিলেন দ্বিতীয় ট্রেবল জয়ী কোচ হিসেবে।