বার্সার জালে বায়ার্নের ৮ গোল

দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা বায়ার্ন মিউনিখের সামনে স্রেফ উড়ে গেল বার্সেলোনা। ইচ্ছে হলেই যেন গোল করল হান্স ফ্লিকের দল। কিকে সেতিয়েনের দলকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে গেল জার্মান চ্যাম্পিয়নরা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2020, 08:50 PM
Updated : 14 August 2020, 10:56 PM

লিসবনে শুক্রবার কোয়ার্টার-ফাইনালে ৮-২ গোলে জিতেছে দলটি। জোড়া গোল করেন টমাস মুলার ও ফিলিপে কৌতিনিয়ো। একটি করে রবের্ত লেভানদোভস্কি, সের্গে জিনাব্রি, ইভান পেরিসিচ ও জশুয়া কিমিচ।

দুই অর্ধে চারটি করে গোল হজম করে বিব্রতকর হারে শূন্য হাতে মৌসুম শেষ করল বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের গতি, কৌশল ও সৃষ্টিশীলতার কোনো জবাব দিতে পারেনি তারা। রক্ষণ ছিল ভঙ্গুর, মাঝমাঠ ছন্নছাড়া, বিবর্ণ আক্রমণভাগ-এমন চেহারার দলটিকে নিয়ে যেন ছেলেখেলা করল বায়ার্ন।

আগের ম্যাচে নাপোলির বিপক্ষে দারুণ ফুটবল খেলা বার্সেলোনার জন্য যেন ছিল দুঃস্বপ্নের রাত। ফুটবল ইতিহাসে দলটিকে এমন করুণ চেহারায় খুব বেশি দেখা যায়নি। 

আগের রাউন্ডে দুই লেগ মিলিয়ে চেলসির জালে ৭ গোল করেছিল বায়ার্ন। এবার প্রথম দল হিসেবে ইউরোপ সেরার মঞ্চে নক আউট পর্বের কোনো ম্যাচে ৮ গোল করল তারা। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম দল হিসেবে বিপরীত অভিজ্ঞতা হলো বার্সেলোনার।

চতুর্থ মিনিটেই এগিয়ে যায় বায়ার্ন। পেরিসিচের কাছ থেকে বল পেয়ে লেভানদোভস্কিকে খুঁজে নেন মুলার। ফিরতি পাস পেয়ে বাঁ পায়ের শটে জাল খুঁজে নেন এই জার্মান ফরোয়ার্ড।

গোল হজমের পর পাল্টা-আক্রমণে ক্ষণিকের জন্য বুন্ডেসলিগা চ্যাম্পিয়নদের চেপে ধরে বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষের ভুলে সপ্তম মিনিটে সমতাসূচক গোলও পেয়ে যায় তারা। ফ্রেংকি ডি ইয়ংয়ের ক্রসে তেমন কোনো হুমকি ছিল না, সেটাই বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালে পাঠিয়ে দেন দাভিদ আলাবা।

খানিক পরে এগিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পেয়ে যায় কাতালুনিয়ার দলটি। লুইস সুয়ারেসের প্রচেষ্টা রুখে দেন বায়ার্ন গোলরক্ষক মানুয়েল নয়ার। এরপর মেসির ক্রসে সের্হিও বুসকেতসের চেষ্টা ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।

২০তম মিনিটে বল পায়ে ডিফেন্ডারদের এড়িয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মেসি। কিন্তু নয়ার বরাবর শট নিয়ে হাতছাড়া করেন সুযোগ। এরপর বলতে গেলে বার্সাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি, শুরু হয় বায়ার্নের একাধিপত্য।

২২তম মিনিটে আবার এগিয়ে যায় বায়ার্ন। জিনাব্রির কাছ থেকে বল পাওয়া পেরিসিচকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যায়নি বার্সেলোনার কেউ। যথেষ্ট সময় পেয়ে বুলেট গতির কোনাকুনি শট নেন ক্রোয়াট মিডফিল্ডার, বল মার্ক-আন্ড্রে টের স্টেগেনের বুটে লেগে জালে জড়ায়।

২৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বায়ার্ন। ক্লেমো লংলেকে পেছনে ফেলে জিনাব্রি খুঁজে নেন জাল। এই গোলের আগে-পরে দুটি দারুণ সুযোগ হাতছাড়া করেন লেভানদোভস্কি।

বায়ার্নের একের পর এক আক্রমণে যেন দিশা হারিয়ে ফেলে বার্সেলোনা। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৩১তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় বায়ার্ন। কিমিচের নিচু ক্রসে লংলেকে এড়িয়ে জাল খুঁজে নেন মুলার।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের নকআউট পর্বে এর আগে কখনও কোনো দল এতো আগে চার গোল হজম করেনি। প্রতিযোগিতাটিতে এই প্রথম বিরতিতে যাওয়ার আগে চারবার বল গেল বার্সেলোনার জালে।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান বাড়ানোর দুটি ভালো সুযোগ নষ্ট করে বায়ার্ন। অন্যদিকে, ৫৭তম মিনিটে নিজেদের প্রথম সুযোগে ব্যবধান কমায় বার্সেলোনা। জর্দি আলবার কাছ থেকে বল পেয়ে দারুণ দক্ষতায় বায়ার্ন ডিফেন্ডারদের বিভ্রান্ত করে নিচু শটে জাল খুঁজে নেন সুয়ারেস।

খানিক পর আবার ব্যবধান বাড়িয়ে নেয় বায়ার্ন। নেলসন সেমেদোকে এড়িয়ে আলফানসো ডেভিস বাইলাইন থেকে কাট ব্যাক করলে ছুটে গিয়ে জাল খুঁজে নেন কিমিচ।

তখনও এক জনের গোলের অপেক্ষায় ছিল বায়ার্ন। লেভানদোভস্কি যে পাননি জালের দেখা। ৮২তম মিনিট শেষ হয় অপেক্ষা। কৌতিনিয়োর চমৎকার ক্রসে জাল খুঁজে নেন এই পোলিশ স্ট্রাইকার। আসরে এটি তার চতুদর্শ গোল। মৌসুমে ৫৪তম।

লেভানদোভস্কির গোলে অবদান রাখা কৌতিনিয়ো ৮৫ ও ৮৯তম জালের দেখা পান। বার্সেলোনা থেকে জার্মান দলটিতে ধারে খেলা ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার উদযাপন করেননি গোল।

খানিক পরেই খেলা শেষের বাঁশি বাজান রেফারি। অনেক আগেই হাল ছেড়ে দেওয়া বার্সেলোনার জন্য যা স্বস্তি হয়ে আসে।

ম্যানচেস্টার সিটি ও অলিম্পিক লিঁওর মধ্যে জয়ী দলের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে খেলবে বায়ার্ন।