চ্যাম্পিয়ন্স লিগ মাঠে ফেরার আগে কে কোথায় দাঁড়িয়ে

করোনাভাইরাসের থাবায় স্থগিত থাকা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আবার মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এই টুর্নামেন্টে টিকে থাকা দলগুলোর ঘরোয়া লিগ। ইউরোপ সেরার মঞ্চে নামার আগে একেক ক্লাবের কেটেছে একেক রকম সময়। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 August 2020, 11:47 AM
Updated : 5 August 2020, 11:47 AM

জার্মান বুন্ডেসলিগার শিরোপা জিতেছে বায়ার্ন মিউনিখ। টানা নবমবারের মতো ইতালিয়ান সেরি আর চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইউভেন্তুস। করোনাভাইরাস বিরতির আগে পিছিয়ে থাকা রিয়াল মাদ্রিদ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনাকে টপকে জিতেছে শিরোপা।

বাতিল হয়ে যাওয়া ফরাসি লিগ ওয়ানের মুকুট মাথায় পরেছে পিএসজি। সেরি আয় মুগ্ধতা ছড়িয়েছে আতালান্তা। করোনাভাইরাস বিরতির পর স্বরূপে ফিরেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ। খারাপ কাটেনি লাইপজিগেরও। এই চার দল কোয়ার্টার-ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আগেই। বাকি চার টিকেটের লড়াইয়ে ফিরতি লেগে নামবে আট দল।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আবার শুরু হওয়ার আগে কোন দল কেমন অবস্থানে আছে, তা নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য এই আয়োজন।

ইউভেন্তুস-অলিম্পিক লিওঁ

প্রায় ছয় মাস আগেই লিওঁ প্রশ্ন তুলেছিল শেষ ষোলোর প্রথম লেগ আয়োজন নিয়ে। সেই সময়ে করোনাভাইরাসের থাবায় জেরবার ছিল ইতালি। তারপরও ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রায় ৬০ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে, যেখানে ছিলেন ইউভেন্তুসেরও হাজার তিনেক দর্শক।  নিজেদের মাঠে লিওঁ জিতেছিল ১-০ গোলে।

মাঝের সময়টাতে পানি গড়িয়েছে অনেক। করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল হয়ে যাওয়া লিগ ওয়ানে সপ্তম হয়েছে লিওঁ। গত শুক্রবার ফরাসি লিগ কাপের ফাইনালে পিএসজির কাছে হেরেছে তারা; ফ্রান্সে খেলা পুনরায় শুরুর পর এটাই ছিল দলটির প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ। মানেটাও পরিষ্কার, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতলেই কেবল পরের মৌসুমে ইউরোপ সেরা আসরে খেলতে পারবে লিওঁ।

সেরি আর শিরোপা ধরে রাখলেও খুব যে ভালো অবস্থায় ইউভেন্তুস আছে, তা নয়। লিগের শেষ আট ম্যাচে মাত্র দুটিতে জিতেছে তারা। হেরেছে চারটিতে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দলটি খুব করে তাকিয়ে থাকবে সেরা তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর দিকে। কোয়ার্টার-ফাইনালে যেতে ফিরতি লেগে কমপক্ষে ২-০ গোলে জিততে হবে মাওরিসিও সাররির দলকে।

ম্যানচেস্টার সিটি-রিয়াল মাদ্রিদ

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা থেকে কিছুদিন আগেই মুক্তি পেয়েছে সিটি। পেপ গুয়ার্দিওলার দলের জন্য এটি ছিল অন্যরকম একটি জয়। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে আরও উদ্বুদ্ধ থাকবে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দলটি।

শেষ ষোলোর প্রথম লেগে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বের্নাবেউ থেকে ২-১ গোলের জয় নিয়ে ফিরেছিল সিটি। প্রথম লেগের জয় ও দুটি মূল্যবান অ্যাওয়ে গোল থাকায় ভালো অবস্থানে আছে তারা।

স্বস্তির সঙ্গে দুর্ভাবনাও আছে সিটির। দলের তারকা ফরোয়ার্ড সের্হিও আগুয়েরো চোটের কারণে বাইরে। এবার দলটি লিগের মুকুট হারিয়েছে। ২০১৬ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালে রিয়ালের কাছে হেরে ছিটকে পড়ার তেতো অভিজ্ঞতাও সিটির সঙ্গী।

রিয়ালকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ‘রাজা’ বলেন অনেকে। প্রতিযোগিতাটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৩ বার সেরা হওয়া স্পেনের দলটি গত ছয় আসরের মধ্যে চারবারই শিরোপা জিতেছে।

প্রথম লেগের হারে পিছিয়ে থাকলেও ফুটবল পুনরায় শুরু হওয়ার পর রিয়াল বদলে গেছে অনেকটা। বার্সেলোনাকে পেছনে ফেলে লা লিগার মুকুট পুনরুদ্ধার করেছে জিনেদিন জিদানের দল; চ্যাম্পিয়ন্স লিগের জন্যও সঞ্চয় করেছে বাড়তি আত্মবিশ্বাস।

কিন্তু ফিরতি লেগে রিয়ালের বড় এক দুর্ভাবনার জায়গা সের্হিও রামোসকে না পাওয়া। প্রথম লেগের লাল কার্ডে নির্ভরযোগ্য এই ডিফেন্ডারকে ফিরতি লেগে পাবে না তারা। অথচ শেষ আটে উঠতে রিয়ালকে সিটির মাঠে কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে।

বায়ার্ন মিউনিখ-চেলসি

ফিরতি লেগ বায়ার্নের জন্য যেন স্রেফ আনুষ্ঠানিকতা! প্রথম লেগে চেলসির মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ থেকে সের্গে জিনাব্রি ও রবের্ত লেভানদোভস্কির গোলে ৩-০ ব্যবধানের জয় নিয়ে ফিরে কোয়ার্টার-ফাইনালে এক পা দিয়ে রেখেছে তারা।

জার্মানিতে পুনরায় ফুটবল শুরুর পর বুন্ডেসলিগার শিরোপা বায়ার্ন ধরে রেখেছে দাপটের সঙ্গে। লিগের সঙ্গে জার্মান কাপ জয়ের পথে টানা ১১ ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে আছে তারা। গোলমেশিন লেভানদোভস্কি এ মৌসুমে এরই মধ্যে করেছেন ৫১ গোল; তেতে আছেন এই পোলিশ স্ট্রাইকারও।

অন্যদিকে, চেলসির অবস্থা নাজুক। চতুর্থ স্থানে থেকে লিগ শেষ করা ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের দল সবশেষ এফএ কাপের ফাইনালে আর্সেনালের বিপক্ষে হেরেছে। ওই ম্যাচেই সেসার আসপিলিকুয়েতা ও ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের চোট চেলসিকে ফেলেছে আরও কঠিন সমস্যায়। ফিরতি লেগে বায়ার্নের মাঠে কমপক্ষে চার গোলের ব্যবধানে জেতা তাই চেলসির জন্য ভীষণ কঠিন।

বার্সেলোনা-নাপোলি

রিয়াল মাদ্রিদের কাছে লা লিগার মুকুট হারানো বার্সেলোনা তাকিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের দিকে। সেরি আ ভালো কাটেনি নাপোলির। পরের মৌসুমে ইউরোপ সেরার মঞ্চে খেলতে ইতালিয়ান দলটির জিততেই হবে শিরোপা।

অতোঁয়ান গ্রিজমানের গোলে প্রথম লেগে নাপোলির মাঠ থেকে ১-১ ড্র নিয়ে ফিরেছিল বার্সেলোনা। মূল্যবান একটি অ্যাওয়ে গোল থাকায় কিকে সেতিয়েনের দল আছে মোটামুটি সুবিধাজনক অবস্থানে। ফিরতি লেগের ম্যাচটিও মেসি-সুয়ারেসরা খেলবেন নিজেদের মাঠ কাম্প নউতে।

ইউরোপ সেরার আসরে নিজেদের ষষ্ঠ শিরোপার জন্য মুখিয়ে আছে বার্সেলোনা। এ প্রতিযোগিতায় পাঁচ বছর আগে শেষ সাফল্য পেয়েছিল কাতালুনিয়ার দলটি। কদিন আগে ৩৩ বছর পূরণ করেছেন লিওনেল মেসি; আরেকটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা তুলে ধরার সময়টা বার্সেলোনার এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ফুরিয়ে আসছে।

প্রথম লেগে গোল করায় ফিরতি লেগে গোলশূন্য ড্র হলেও শেষ আটে জায়গা করে নেবে বার্সেলোনা।