লিভারপুলে সবসময়ের ‘স্পেশাল’ ক্লপ

তিন দশকের অপেক্ষা শেষের দুয়ারে দাঁড়িয়ে লিভারপুল। চরম কোনো নাটকীয়তা আর দুর্ভাগ্যের শিকার না হলে দলটির বহু আকাঙ্ক্ষিত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জয় অনেকটা নিশ্চিতই বলা চলে। যার হাত ধরে সাফল্যের চূড়ায় উঠতে যাচ্ছে তারা, সেই ইয়ুর্গেন ক্লপ লিভারপুলের ইতিহাসে আজীবন ‘বিশেষ একজন’ হয়ে থাকবেন বলে মনে করেন দলটির ডিফেন্ডার ট্রেন্ট-অ্যালেকজ্যান্ডার আর্নল্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 June 2020, 01:08 PM
Updated : 21 June 2020, 01:08 PM

২০১৫ সালের অক্টোবরে, ইয়ুর্গেন ক্লাব যখন অ্যানফিল্ডে পা রাখেন, তখন দলটির অবস্থা ছিল ভীষণ নড়বড়ে। প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা লড়াই তো বহুদূর, ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় জায়গা করে নেওয়ার জন্যই লড়তে হতো তাদের।

দায়িত্ব নিয়ে অনেকটা ঢেলে সাজাতে শুরু করেন ক্লপ। পরের বছর যেমন যুব দল থেকে তুলে আনেন তরুণ আর্নল্ডকে। ওই বছরই সাউথ্যাম্পটন থেকে দলে টানেন সাদিও মানেকে। ২০১৭ সালে রোমা থেকে মোহামেদ সালাহ আর ২০১৮ সালে সাউথ্যাম্পটন থেকে দলে ভেড়ান সেন্টার-ব্যাক ভার্জিল ফন ডাইককে।

সবগুলো চুক্তিই দারুণ সুফল বয়ে আনে। রবের্তো ফিরমিনোর সঙ্গে মানে ও সালাহকে নিয়ে বর্তমানের অন্যতম সেরা আক্রমণভাগ গড়ে তোলেন ক্লপ। মিডফিল্ডে আগে থেকেই ছিলেন জর্ডান হেন্ডারসন। মাঝমাঠকে আরেকটু শক্ত করতে ২০১৬ সালে ডাচ মিডফিল্ডার জর্জিনিয়ো ভিনালডামকে নিয়ে আসেন কোচ। আর ফন ডাইক এসে আর্নল্ড, দেইয়ান লোভরেনদের নিয়ে গড়ে তোলেন যেন রক্ষণবুহ্য।

সঙ্গে ২০১৮ সালে রোমা থেকে গোলরক্ষক আলিসনকে রেকর্ড ট্রান্সফার ফিতে দলে টেনে ক্লপ যেন গড়ে তোলেন ‘চীনের প্রাচীর’। হয়ে ওঠে সত্যিকার অর্থে পরিপূর্ণ এক দল।

মূলত গত মৌসুম থেকে দেখা মিলতে শুরু করে বদলে যাওয়া লিভারপুলের। অনেক গোলের সুযোগ তৈরি করা, সুযোগ কাজে লাগানো, প্রতিপক্ষকে কম সুযোগ দেওয়া-সব দিক থেকেই ব্যাপক উন্নতি হয়েছে ক্লপের শিষ্যদের। যা স্পষ্ট হয়ে ওঠে পরিসংখ্যানে।

নিজেদের হারিয়ে খুঁজে ফেরা দলকে কক্ষপথে ফেরাতে ক্লপ সম্ভব ‘সবকিছুই’ করেছেন বলে মনে করেন ছয় বছর বয়স থেকে লিভারপুলে বেড়ে ওঠা আর্নল্ড। বিবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লিভারপুলের কোচ হিসেবে এই জার্মান কোচের করা সবকিছু মনকাড়া বলে মন্তব্য করেন ২১ বছর বয়সী এই রাইট-ব্যাক।

“তিনি যা কিছু করেছেন, সেজন্য তাকে সম্মান করতেই হবে।”

“পুরো ক্লাবকে পাল্টে দিতে, সব অবিশ্বাসীদের বিশ্বাসী করে তুলতে, সবাইকে একইভাবে ভাবতে, একইভাবে বিশ্বাস করতে এবং একই স্বপ্ন দেখতে…(তিনি সবই করেছেন)।”

“তিনি পুরো ক্লাবকে এক সুতোয় বেঁধেছেন। এমনকি এই শহরের, দেশের এবং স্থানীয় না হলেও তিনি স্রেফ দলটির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। এখানে সব মানুষের সঙ্গেই তিনি এমনটা করেছেন-সমর্থক, ক্লাবের কর্মী ও খেলোয়াড় সবার সঙ্গে।”

প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে মাত্র একটি ম্যাচ হেরেছিল লিভারপুল। তারপরও ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট পেছনে থেকে রানার্সআপ হয়েছিল তারা। এবার আর কোনো ভুল নয়; এবারের আসরেও তারা এখন পর্যন্ত হেরেছে মোটে একটি, ড্রও একটি। ২৯ ম্যাচে ২৭ জয়ে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপার খুব কাছে দলটি। শেষ ৯ ম্যাচে মাত্র ৬ পয়েন্ট পেলেই স্বপ্ন পূরণ হবে তাদের।

আর্নল্ড আরও মনে করেন, লিভারপুলের হাল ধরার পর ক্লপ তার আশেপাশের মানুষদের নিজেদের মতো করে গড়ে তুলেছেন। ভাবতে শিখিয়েছেন নিজের মতো করে। এভাবেই সবার স্বপ্ন সত্যি করেছেন ৫৩ বছর বয়সী এই কোচ।

গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারিয়ে ষষ্ঠবারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট পরে লিভারপুল। টানা দ্বিতীয়বারের মতো সেবার ফাইনালে উঠেছিল তারা। আগের বছর ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরেছিল ‘অল রেড’ নামে পরিচিত দলটি।

এবার অবশ্য ইউরোপ সেরার লড়াই থেকে এরই মধ্যে ছিটকে গেছে দলটি। তবে, তাদের মূল লক্ষ্য অবশ্যই প্রিমিয়ার লিগের ট্রফি জয়। ১৯৮৯-৯০ সালের পর যে আর লিগ শিরোপা জিততে পারেনি তারা। এবার নিশ্চয়ই হবে ৩০ বছরের অপেক্ষার অবসান।