বেনজেমা-আসেনসিওর নৈপুণ্যে রিয়ালের দুর্দান্ত জয়

নজরকাড়া ফুটবলে মাতালেন করিম বেনজেমা, করলেন দুই গোল। মৌসুমে যার খেলার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না, সেই মার্কো আসেনসিও নেমে প্রথম স্পর্শেই পেলেন জালের দেখা। ভালেন্সিয়ার বিপক্ষে দাপুটে জয়ে লা লিগার শিরোপা লড়াইয়ে বেশ ভালোভাবেই রইলো রিয়াল মাদ্রিদ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 June 2020, 09:59 PM
Updated : 18 June 2020, 10:47 PM

আলফ্রেদো দি স্তেফানো স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার রাতে ৩-০ গোলে জিতেছে জিনেদিন জিদানের দল। এই জয়ে বার্সেলোনার সঙ্গে ব্যবধান ফের ২ পয়েন্টে নিল তারা।

গত মঙ্গলবার লেগানেসকে ২-০ গোলে হারানো বার্সেলোনা ২৯ ম্যাচে ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে। দুইয়ে থাকা রিয়ালের পয়েন্ট ৬২।

ডিসেম্বরে লিগে প্রথম দেখায় ভালেন্সিয়ার মাঠে পিছিয়ে পড়া রিয়াল যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে বেনজেমার গোলেই হার এড়িয়েছিল। এবার দলকে এনে দিলেন পুরো ৩ পয়েন্ট।

এইবারের মাঠে ডি-বক্সের মাথা থেকে দারুণ গোলে দলকে এগিয়ে নেওয়া টনি ক্রুস এই ম্যাচেও দশম মিনিটে অনেকটা একই জায়গায় বল পেয়েছিলেন। কিন্তু এবার আর পারেননি, তার দুর্বল শট অনায়াসে ধরে ফেলেন রিয়ালের বিপক্ষে প্রথম খেলতে নামা গোলরক্ষক ইয়াসপের সিলেসেন।

পরের মিনিটে আরও সহজ সুযোগ নষ্ট করেন এদেন আজার। বেনজেমার ছোট করে বাড়ানো বলে বেলজিয়ান ফরোয়ার্ডের টোকা পা বাড়িয়ে ঠেকান গোলরক্ষক।

চতুর্দশ মিনিটে খেলার ধারার বিপরীতে এগিয়ে যেতে পারতো ভালেন্সিয়া। পাল্টা আক্রমণে বল পায়ে একা ডি-বক্সে ঢুকে পড়ে কোনাকুনি শট নেন রদ্রিগো। ঝাঁপিয়ে পড়া থিবো কোর্তোয়ার হাত ছুঁয়ে বল পোস্টে লাগলে বেঁচে যায় স্বাগতিকরা।

২০তম মিনিটে দারুণ গোছানো আক্রমণে বল জালে পাঠান রদ্রিগো। তবে ফ্লিকে তাকে বল বাড়ানো মাক্সি গোমেস একটুর জন্য অফসাইডে থাকায় গোল মেলেনি। অনেকক্ষণ ধরে ভিএআরের সাহায্য নিয়ে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি।

খানিক পর গোল পেতে পারতো রিয়াল; কিন্তু আবারও সিলেসেন বাধা। ছোট ডি-বক্সে সঙ্গে লেগে থাকা ডিফেন্ডারের বাধা এড়ালেও ঠিকমতো শট নিতে পারেননি দানি কারভাহাল, তারপরও গোল হতে পারতো। পা বাড়িয়ে রুখে দেন ডাচ কিপার।

৪৩তম মিনিটে কোর্তোয়ার দৃঢ়তায় সমতায় থেকে বিরতিতে যায় রিয়াল। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে জিওফ্রি কোন্দোগবিয়ার আচমকা বুলেট গতির শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান বেলজিয়ান কিপার।

বিরতির পর গোছানো ও পাসিং ফুটবলে আক্রমণে মনোযোগ দেয় রিয়াল। চাপও ধরে রাখে, কিন্তু ভালেন্সিয়ার জমাট রক্ষণ ভাঙতে পারছিল না তারা।

সাফল্য মেলে ৬১তম মিনিটে, প্রতিপক্ষের ভুলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে। মাত্রই বদলি নামা কেভিন গামেইরো মাঝমাঠে ভুল পাস দিয়ে বসেন আজারকে। দ্রুত এগিয়ে লুকা মদ্রিচকে বল বাড়িয়ে আরও ভিতরে ঢুকে পড়েন তিনি। সতীর্থের ফিরতি পাস পেয়ে পড়ে যাওয়ার আগমুহূর্তে বাড়িয়ে দেন ডি-বক্সে বেনজেমাকে। অরক্ষিত ফরাসি এই ফরোয়ার্ড নিখুঁত কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান।

৭৪তম মিনিটে ফেদে ভালভেরদেকে তুলে আসেনসিওকে নামান কোচ এবং মাঠে নামার কয়েক সেকেন্ডের মাথায় দলকে উচ্ছ্বাসে ভাসান এই স্প্যানিয়ার্ড। ভালেন্সিয়ার রক্ষণ একটি কর্নার ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে বল ধরে ডি-বক্সে ঢুকে অরক্ষিত আসেনসিওকে পাস দেন ফেরলঁদ মঁদি। দুর্দান্ত কোনাকুনি ভলিতে ঠিকানা খুঁজে নেন প্রায় ১১ মাস পর মাঠে নামা সম্ভাবনাময় এই ফরোয়ার্ড।

৮৬তম মিনিটে নিজের দ্বিতীয় গোলে ব্যবধান ৩-০ করেন বেনজেমা। ডান দিক থেকে আসেনসিওর উঁচু করে বাড়ানো বল প্রথম ছোঁয়ায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে জোরালো ভলিতে আসরে নিজের ১৬তম গোলটি করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।

মূল্যবান জয়ের পাশাপাশি এই ম্যাচে রিয়ালের প্রাপ্তি আছে আরও। বেনজেমা বরাবরই খেলছিলেন ভালো, কিন্তু গোল পাচ্ছিলেন না তেমন। আগের ১২ ম্যাচে যেমন তার গোল ছিল মাত্র দুটি। এবার দারুণ কিছুর সম্ভাবনা জাগল। আর আসেনসিওর ফেরা যেন রূপকথা। মৌসুম শুরুর আগে চোট পেয়েছিলেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে খেলা বন্ধ না থাকলে হয়তো তার জীবন থেকে হারিয়ে যেত গোটা মৌসুম। সেই তিনি মৌসুমে প্রথমবার মাঠে নামাটা রাঙালেন গোল করে ও অবদান রেখে।

কোচের দুঃচিন্তার জায়গাও অবশ্য আছে। গত ম্যাচে প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলার পর দ্বিতীয়ার্ধে পুরোপুরি ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিল রিয়াল। আজকের দুই অর্ধের পারফরম্যান্সে অতটা ফারাক না থাকলেও, বিরতির আগের খেলা তেমন ভালোও ছিল না। অনেকটা ভাগ্যের জোরেই সমতায় প্রথমার্ধ শেষ করে তারা।