মাঠে ফিরছে লিভারপুলের স্বপ্ন যাত্রা

গত মার্চে, অ্যাস্টন ভিলাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়া ম্যাচের পর কেটে গেছে ঠিক ১০০ দিন। অনাকাঙ্ক্ষিত দীর্ঘ বিরতিতে অনিশ্চয়তার নানা বাঁক পেরিয়ে আবার মাঠে ফিরতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ। চিরচেনা পরিবেশে নয় ঠিকই, তবে বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য প্রতিযোগিতাটির ফেরাটাই অনেক কিছু।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 June 2020, 03:47 PM
Updated : 16 June 2020, 07:13 PM

লিগ ফেরানোর জন্য সম্ভবত সবচেয়ে উন্মুখ ছিল লিভারপুল। সব ঠিকঠাক এগোলে মার্চেই হয়তো তিন দশকের অপেক্ষার শেষ হতো দলটির, ঘরে তুলতো লিগ শিরোপা। করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে থমকে যায় সবকিছু। স্বপ্ন ছোঁয়ার খুব কাছে দাঁড়িয়ে ভেস্তে যেতে বসে তাদের এতো দিনের সব চেষ্টা। তীরে এসে তরী ডোবার মতো অবস্থা। অবশেষে আরাধ্য সে স্বপ্ন সত্যি করার সুযোগ পাচ্ছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। মাত্র দুটি ম্যাচ জিতলেই প্রথমবারের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের মুকুট পরবে তারা।

এক যুগ পর প্রিমিয়ার লিগে ফিরে তাক লাগিয়ে দিয়েছে শেফিল্ড ইউনাইটেড। শীর্ষ চারে থেকে লিগ শেষ করার সম্ভাবনা জাগিয়েছে দলটি। অবনমনের শঙ্কায় থাকা অ্যাস্টন ভিলার মাঠে তাদের ম্যাচ দিয়েই ফিরতে যাচ্ছে ইংলিশ ফুটবলের শীর্ষ প্রতিযোগিতাটি। বুধবার ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায়। দুই ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ম্যানচেস্টার সিটি ও ইউরোপীয় প্রতিযোগিতায় জায়গা পাওয়ার লড়াইয়ে থাকা আর্সেনাল।

এই ম্যাচের দিকে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকবে লিভারপুল। লিগ স্থগিত হওয়ার আগে টানা তিন ম্যাচে জেতা আর্সেনাল জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে লিভারপুল শিরোপা জেতার কাজটা সারতে পারে ফেরার ম্যাচেই। আগামী রোববার এভারটনের মাঠে খেলবে দলটি।  

২৯ ম্যাচে ২৭ জয় ও এক ড্রয়ে ৮২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে ১৮ লিগ শিরোপার সবশেষটি জেতা লিভারপুল। এক ম্যাচ কম খেলে ৫৭ পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে আছে টানা দুবারের চ্যাম্পিয়ন পেপ গুয়ার্দিওলার দল সিটি।

শিরোপা লড়াই অনেক আগেই একপেশে হয়ে গেছে। তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে জায়গা করে নেওয়ার লড়াই বেশ উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

২০১৫-১৬ মৌসুমে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে লিগ শিরোপা জিতে নেওয়া লেস্টার সিটি ২৯ ম্যাচে ৫৩ পয়েন্ট নিয়ে আছে তিন নম্বরে। ৫ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে চার নম্বরে চেলসি। সেরা চারে থেকে লিগ শেষ করার সম্ভাবনায় ভালোভাবে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৪৮), উলভারহ্যাম্পটন ওয়ানডারার্স (৪৫) ও শেফিল্ড (৪৩)। নবাগত শেফিল্ড আবার এক ম্যাচ কম খেলেছে।

একটু পিছিয়ে পড়েছে গতবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রানার্সআপ টটেনহ্যাম হটস্পার ও আর্সেনাল। যথাক্রমে ৪১ ও ৪০ পয়েন্ট নিয়ে অষ্টম ও নবম স্থানে আছে দল দুটি।

অবনমন অঞ্চলে আছে বোর্নমাউথ (২৭), অ্যাস্টন ভিলা(২৫) ও নরউইচ সিটি (২১)। ঝুঁকিতে আছে বোর্নমাউথের সমান পয়েন্ট পাওয়া ওয়েস্ট হ্যাম ইউনাইটেড ও ওয়াটফোর্ডও।

গোল্ডেন শু-এর লড়াই

চার বছর আগে লেস্টারের একমাত্র শিরোপা জয়ের আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৪ গোল করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা জেমি ভার্ডি এবারও আছেন দারুণ ফর্মে। এখন পর্যন্ত ১৯ গোল করে আছেন গোলদাতাদের তালিকার শীর্ষে, সঙ্গে চারটি অ্যাসিস্টও আছে এই ইংলিশ স্ট্রাইকারের নামের পাশে।

১৭ গোল করে দুইয়ে আছেন আর্সেনালের ফরোয়ার্ড পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং। তার চেয়ে একটি করে গোল কম করেছেন লিভারপুলের মোহামেদ সালাহ ও ম্যানচেস্টার সিটির সের্হিও আগুয়েরো।

নিয়মের ঘেরাটোপে ফুটবল

মে মাসে শুরু হওয়া বুন্ডেসলিগার দেখানো পথে গত সপ্তাহে শুরু হয়েছে লা লিগা। সবখানে একই চেহারা, সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মের ঘেরাটোপে যেন বন্দি ফুটবল। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এর বিকল্পও নেই।

প্রিমিয়ার লিগ শুরুর আগে এখানেও তেমনি বেঁধে দেওয়া হয়েছে নানা নিয়ম। সবগুলো ম্যাচ দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হবে, বলা হয়েছে আগেই। যোগ হলো আরও অনেক কিছু:

ব্রডকাস্টার ও গণমাধ্যম কর্মী, ধারাভাষ্যকার, ডোপিং অফিসিয়াল, দুই দলের কোচ, খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিসিয়ালস-সব মিলে সর্বোচ্চ ৩০০ জন থাকতে পারবেন মাঠে।

প্রতিটি ম্যাচের আগে সব খেলোয়াড়দের তাদের ট্রেনিং গ্রাউন্ডে কোভিড-১৯ পরীক্ষা করানো হবে। দলগুলো আলাদা ভাবে মাঠে প্রবেশ করবে এবং ম্যাচের দুই অর্ধের মাঝে দেওয়া হবে ‘ড্রিঙ্কস ব্রেক।’ ম্যাচের আগে খেলোয়াড়রা হাত মেলাবে না, টস করার পরেও না। মাঠে কোনো ‘বল বয়’ থাকবে না। খেলা চলাকালীন বল স্ট্যান্ডে গেলে আলাদা বল ব্যবহার করা হবে। খেলোয়াড়রা নিজেদের আলাদা আলাদা পানির বোতল ব্যবহার করবে এবং অবশ্যই ম্যাচ শুরু ও শেষের পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করবে।

হোম ম্যাচের সুবিধা হারানোর শঙ্কা

দুরূহ পরিস্থিতিতে স্বাগতিক সমর্থকদের মাঠের বাইরে জটলা এড়াতে কোনো একটি বা দুটি স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজনের ভাবনা এসেছিল। সেক্ষেত্রে হোম ম্যাচের সুবিধাবঞ্চিত হতো সবাই। আর মূলত এ কারণেই কয়েকটি দলের জোর দাবির পেছনে আলোচনার টেবিলেই তা শেষ হয়ে যায়। তবে বুন্ডেসলিগা পুনরায় শুরুর পর যে পরিসংখ্যান দেখা যাচ্ছে, তাতে প্রিমিয়ার লিগের দলগুলো এখন আফসোস করতে পারে।

দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে ম্যাচকে বলা হচ্ছে ‘ভুতুড়ে ম্যাচ’। যেখানে ঘরের মাঠে খেলার চেয়ে যেন প্রতিপক্ষের মাঠে খেলাই শ্রেয়।

বিরতি শেষে পুনরায় শুরুর পর জার্মানির শীর্ষ লিগে এখন পর্যন্ত ৫৬টি ম্যাচের মাত্র ১২টিতে জিতেছে স্বাগতিক দল; শতকরা যা মাত্র ২১ শতাংশ। সেখানে সফরকারী দল জিতেছে ৫০ শতাংশ! বাকি ২৯ শতাংশ ড্র। বিরতির আগের চেহারা ছিল পুরো ভিন্ন; ২২৩ ম্যাচে ৪৩ শতাংশ জিতেছিল স্বাগতিক দল, ৩৫ শতাংশ সফরকারীরা।