রিয়ালের লা দেসিমা: ৯৩ মিনিটে রামোসের জাদু

ইতিহাস গড়তে মিনিট দুইয়ের মতো বাকি। লিসবনের স্টেডিয়াম অব লাইটসে চলছিল আতলেতিকো মাদ্রিদ সমর্থকদের গগনবিদারী হুঙ্কার, উৎসবের আয়োজন। মুহূর্তে পাল্টে গেল সব; ডান দিক থেকে লুকা মদ্রিচের কর্নার, দিয়েগো গদিনকে ফাঁকি দিয়ে জায়গা বানিয়ে সের্হিও রামোসের হেড, বল খুঁজে পেল ঠিকানা। ওই গোলেই যেন লেখা হয়ে গিয়েছিল ভাগ্য। অতিরিক্ত সময়ের একপেশে লড়াইয়ে লা দেসিমা জয়ের উল্লাসে ফেটে পড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 May 2020, 09:07 PM
Updated : 24 May 2020, 10:06 PM

২০১৩-১৪ মৌসুমে যেন উড়ছিল আতলেতিকো। বার্সেলোনা-রিয়ালকে পেছনে ফেলে তুলে ধরেছিল লা লিগা শিরোপা, ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের পর প্রথমবার। অপেক্ষা ছিল চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ইউরোপ সেরার আসনে বসার।

২৪ মে, ২০১৪-পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের ফাইনালে নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে দারুণ সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল তারা। গোলরক্ষক ইকের কাসিয়াসের অমার্জনীয় ভুলে ৩৬তম মিনিটে গোল আদায় করে নেন গদিন। এরপর নিজেদের চিরচেনা ফুটবলে রক্ষণ দুর্গ গড়ে তোলে ১৯৭৩-৭৪ মৌসুমের পর ফাইনালে খেলা দলটি।

৯০ মিনিট পেরিয়ে ম্যাচ গড়ায় যোগ করা সময়ে। পাঁচ মিনিট যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে কর্নার পায় রিয়াল। এরপরই সেই মদ্রিচ-রামোস জুটির অসাধারণ বোঝাপড়া এবং রিয়ালের পাল্টা হুঙ্কার।

তীরে গিয়ে স্বপ্ন ভাঙার হতাশা যেন পুরোপুরি ঘিরে ধরেছিল দিয়েগো সিমেওনের দলকে। অতিরিক্ত সময়ে কার্লো আনচেলত্তির দলের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি তারা। একে একে জালে বল পাঠান গ্যারেথ বেল, মার্সেলো ও ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো।

এক যুগের অপেক্ষা শেষে ইউরোপ সেরার মঞ্চে দশম শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতে রিয়াল মাদ্রিদ। রোববার পূর্ণ হলো এর ছয় বছর।

বর্ষপূর্তির দিনে সেদিনের সেই ৯৩তম মিনিটের অভাবনীয় মুহূর্তকে স্মরণ করলেন দুই নায়ক রামোস ও মদ্রিচ। রিয়ালের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকার গর্বিত কণ্ঠে শোনালেন সেই গল্প। রামোসের কাছে সেই রাত এক শব্দে ‘ঐতিহাসিক’।

“ঐতিহাসিক ও জাদুকরী। কারণ, মাদ্রিদ যেন এক জাদুর দুনিয়া, সৌভাগ্যবশত আমরা এর অংশ হতে পেরেছি।”

“লিসবনের কথা স্মরণ করলে প্রথমেই যেটি আমার মনে পড়ে, তা হলো ওই ট্রফি, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। অনেক বছরের লড়াইয়ের পর সেই শিরোপা। প্রথমে ফাইনালটি উপভোগ করা ও পরে শিরোপা জেতা। পরিবার, ত্যাগ-তিতীক্ষা এবং অতগুলো বছরের সব প্রচেষ্টার পর সেই সাফল্য। এটাই ফুটবলের সৌন্দর্য, পুরস্কার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ।” 

রিয়ালের আজকের গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া সেদিন ছিলেন আতলেতিকোর প্রহরী। রামোসের স্মৃতিচারণায় ওঠে তার কথাও।

“সত্যি, হেডটা ছিল চমৎকার। গোলপোস্টে ছিল কোর্তোয়া; ঠিক সময়ে লাফিয়ে ওঠা, বল ও লক্ষ্যের মাঝের দুরত্ব বোঝা এবং বাস্তবায়ন-সবকিছুই হয়েছিল নিখুঁত। মদ্রিচের কর্নার ছিল দুর্দান্ত।”

“আমি পেছনের পোস্টে হেড করেছিলাম। ওখানে অনেকে ছিল এবং খুব সহজেই ব্লকড হতে পারতো। গদিন আমাকে মার্ক করছিল, ওখানে বেল, ক্রিস্তিয়ানোও ছিল…পোস্টের দিকে ওরা ছুটতে পারতো এবং বল বাধা পেলে কাজে লাগাতে পারতো। ওই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে অনেক খেলোয়াড়দের অনেক মুভমেন্ট ছিল। তবে গদিন প্রতিক্রিয়া দেখানোর সময় পায়নি, কারণ আমি ওর সামনে চলে এসেছিলাম। আর ওইটুকই আমাকে নিজের মতো সামনে এগোতে সাহায্য করেছিল, পেনাল্টি স্পটের কাছে আমি অনেকটা অরক্ষিত ছিলাম। ৯৩তম মিনিটের নিখুঁত হেডে ম্যাচে সমতা, যা আমাদের অতিরিক্ত সময়ে নিয়েছিল।”

দ্বিতীয়ার্ধের অধিকাংশ সময় বল ছিল রিয়ালের দখলে। একের পর এক আক্রমণ করে যাচ্ছিল তারা, কিন্তু আতলেতিকোর রক্ষণ প্রাচীর ভাঙতে পারছিল না। সমর্থকদের অনেকেই হয়তো আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন; তবে রিয়াল শিবিরে বিশ্বাস ছিল। বিশ্বাস ছিল মদ্রিচের। ক্রোয়াট এই মিডফিল্ডার নাকি একরকম নিশ্চিত ছিলেন, গোল আসবেই।

“বিশ্বাস ছিল যে আমরা গোল পাব, আর সেই বিশ্বাসের জোরেই আমি খুব শান্ত ছিলাম। সের্হিও ভালো জায়গায় ছিল, নিজেকে সে দারুণ পজিশনে নিয়ে আসে এবং যেভাবে সে লাফিয়ে বল জালে পাঠায়, যা ছিল ঐতিহাসিক। অবিশ্বাস্য।”    

“ওই মৌসুমে ওইরকম কর্নার আমরা অনেকবার অনুশীলন করেছিলাম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ম্যাচেও আমরা অমন গোল করেছিলাম, বায়ার্নের বিপক্ষে এবং লা লিগার কিছু ম্যাচে। ওই জায়গায় ভালোভাবে বল পাঠানোটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা আমি করেছিলাম। এরপর সের্হিও দারুণ ক্ষিপ্রতায় ছুটে গিয়ে নিখুঁতভাবে গোলটি করে।”

সেদিনের ইউরোপ জয়ের পর এক মৌসুম বাদে জিনেদিন জিদানের অধীনে রিয়াল হয়ে উঠেছিল অপ্রতিরোধ্য। ২০১৫-১৬, ২০১৬-১৭ ও ২০১৭-১৮ মৌসুমে শিরোপাটি জিতে প্রথম দল হিসেবে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রেকর্ড গড়ে তারা। যাদের নামের পাশে এখন রেকর্ড ১৩ বার ইউরোপ সেরা হওয়ার কীর্তি।