নিয়মের ঘেরাটোপে শুরু হচ্ছে বুন্ডেসলিগা

মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, সামাজিক দুরত্ব রেখে চলার আহ্বান-প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিস্তার এড়াতে সারা বিশ্বের আজ একই চেহারা। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিয়মের ঘেরাটোপে বন্দি হয়ে মাঠে ফিরতে যাচ্ছে জার্মানির শীর্ষ ফুটবল লিগ বুন্ডেসলিগা।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 May 2020, 03:52 PM
Updated : 15 May 2020, 03:52 PM

গত ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে কোভিড-১৯ রোগকে মহামারী ঘোষণা করা হয়। স্থগিতাদেশের আগে ওই দিন শেষ মাঠে গড়িয়েছিল বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ-এফসি কোলন ম্যাচ। দীর্ঘ দুই মাস পাঁচ দিন পর শনিবার ফিরতে যাচ্ছে বুন্ডেসলিগা, ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের মধ্যে যা প্রথম।

যেখানে সবাইকে অতি সংক্রামক করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে ছয় ফুট সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে, সেখানে ফুটবল মাঠে ফিরলে ঝুঁকি নিশ্চিতভাবে বাড়বে। তারপরও দীর্ঘদিনের ঘরবন্দি জীবনে ফুটবলপাগল মানুষের জন্য বুন্ডেসলিগার ফেরা একটু হলেও স্বস্তি বয়ে আনতে পারে।

টুর্নামেন্টের রেকর্ড ২৯ বারের চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখ বরাবরই ফেভারিট। গত সাত বছরে তাদের টানা শিরোপা জয়ে প্রতিযোগিতাটি হয়ে পড়েছে ভীষণ একপেশে। এবারে তিনটি দল চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে তাদের।

৫৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকায় এবারও অবশ্য শীর্ষে তারা। তবে পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট। ৪ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে থাকা বরুসিয়া ডর্টমুন্ড শিরোপাধারীদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে। শিরোপা লড়াইয়ে আছে আরও দুটি দল; লাইপজিগ (৫০) ও বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ (৪৯)।

মৌসুমের শুরুর চিত্র বায়ার্নের জন্য ছিল বেশ খারাপ; প্রথম চার মাসে ১৪ রাউন্ডে চারটিতে হেরেছিল তারা, তিন ড্র। সাত জয়ে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে সপ্তম স্থানে নেমে গিয়েছিল দলটি। ব্যর্থতার দায়ে চাকরি হারান তখনকার কোচ নিকো কোভাচ।

হান্স ফ্লিকের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ায় বায়ার্ন। পরের ১১ রাউন্ডের ১০টিতে জিতে ও একটিতে ড্র করে তরতরিয়ে ওঠে শীর্ষে। তাদের এই অগ্রযাত্রায় সবচেয়ে বড় ভূমিকা রবের্ত লেভানদোভস্কির। মৌসুমের শুরু থেকেই অসাধারণ ফর্মে থাকা পোলিশ এই ফরোয়ার্ড এখন পর্যন্ত করেছেন ২৫ গোল। 

অবশ্য মাঝের এই সময়ে মনশেনগ্লাডবাখ ও লাইপজিগের খেই হারানোও বায়ার্নের চূড়ায় ফেরায় সাহায্য করেছে।

তারপরও ফুটবলে শেষ বলে কিছু নেই। আর শিরোপা লড়াইয়ের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ধাপ শেষের কয়েক রাউন্ড। দীর্ঘ বিরতির পর নতুন রূপে শুরু হবে ফুটবল, সেখানে মৌসুম শুরুর ছন্দ ফিরে পেতে পারে লাইপজিগ ও মনশেনগ্লাডবাখ।

দুটি নাম আলাদা করে না বললেই নয়, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড ও তরুণ ফরোয়ার্ড আর্লিং হলান্ড। বছরের শুরুতে প্রত্যাশার ডালি সাজিয়ে হলান্ড যোগ দেন ডর্টমুন্ডে। দুই মাসের কম সময়ে চেনান নিজের জাত; লিগে ৫০৯ মিনিট খেলে নরওয়ের এই তরুণের গোল ৯টি-প্রতি ৫৭ মিনিটে একটি করে! সব মিলে নতুন ঠিকানায় তার গোল ১২টি।

ছন্দে আছেন দলটির আরেক তরুণ জেডন স্যানচোও। ১৯ বছর বয়সী হলান্ড ও ২০ বছর বয়সী স্যানচোর জমে ওঠা আক্রমণ জুটিতে যেন ছুটছে ডর্টমুন্ড। প্রথম ১৪ রাউন্ডে সাত জয় পাওয়া দলটি পরের ১১ ম্যাচে পায় আট জয়। জেগেছে সাত বছরের শিরোপা খরা ঘোচানোর সম্ভাবনা। সবশেষ ২০১২ সালে এই ডর্টমুন্ডের কাছেই শিরোপা হারিয়েছিল বায়ার্ন মিউনিখ।

সবকিছু মিলে হাড্ডাহাড্ডি শিরোপা লড়াইয়ের হাতছানিতে ফিরতে যাচ্ছে বুন্ডেসলিগা। কিন্তু, থাকছে বড় এক শূন্যতা; দর্শকদের চিৎকার, উল্লাস, হাততালি।

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নানা নিয়ম বেঁধে দিয়েছে দেশটির সরকার ও ফুটবল কর্তৃপক্ষ; যার অন্যতম, গ্যালারি থাকবে শূন্য। সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, টিভি ক্রু, লিগ ও দুই ক্লাবের স্টাফ, বল বয়, সব মিলে ম্যাচ চলার সময় সর্বোচ্চ ৩০০ জন থাকতে পারবে স্টেডিয়ামে। পুরো স্টেডিয়ামকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে, প্রতিটি ভাগে সর্বোচ্চ ১০০ জন করে।

প্রয়োজনীয় স্টাফের সংখ্যাও সর্বনিম্নে নামিয়ে আনা হবে। প্রতিটি ক্লাব একজন করে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেবে, যে স্বাস্থ্যবিধিগুলো মানা হচ্ছে কি-না, দেখবে। অন্তত ১৬ বছর বয়সী চার জন বল বয় থাকবে, যারা কিছুক্ষণ পরপর জীবানুনাশক দিয়ে হাত পরিষ্কার করবে। প্রেস রুম ও মিক্সড জোন বন্ধ থাকবে, সংবাদ সম্মেলন হবে ভার্চুয়াল।

প্রিয় সমর্থকদের সামনে খেলার অনুপ্রেরণা তো থাকছেই না, সঙ্গে এত সব নিয়মের বেড়াজাল। তাই অবধারিত প্রশ্নটি জোরেশোরে উচ্চকিত হচ্ছে-কঠিন এই পরিবেশে ফুটবল কি তার চেনা উচ্চতার ধারেকাছে যেতে পারবে? ছুঁতে পারবে ফুটবলপ্রেমীদের মন।

অবশ্য কোভিড-১৯ মহামারীতে স্থবির হয়ে পড়া ফুটবলপাগলদের কাছে বুন্ডেসলিগার ফেরার খবর যে দারুণ এক সুখবর হয়ে এসেছে, তা নিশ্চিত।

তবে স্বাস্থ্যঝুঁকির শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। দেশটির সরকার ও লিগ কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে যদিও বারবার বলা হচ্ছে, সবরকম নিয়ম মেনেই চলবে লিগ। কিন্তু, সামাজিক দুরত্ব যেখানে রাখতে বলা হয়েছে ৬ ফুট, সেখানে এতসব নিয়মেও কি পার পাওয়া যাবে?